সোমবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

পিয়াজের পৌষ মাস

ইকবাল খন্দকার

পিয়াজের পৌষ মাস

আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর

পিয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমরা মেসে পিয়াজ আনি না বললেই চলে। আর এ জন্য তাকে পিয়াজও কাটতে হয় না। যে কারণে পিয়াজের উসিলায় যে আগে কেঁদেকেটে রান্নাঘর নদী বানাত, সেই সুযোগও পায় না...

 

গতকাল আমার এক বড়ভাই ফোন দিলেন। বলে রাখি, এই বড়ভাই খুবই সাবধানি মানুষ। তার বিবেচনায় জগতের সর্বাপেক্ষা মূল্যবান কথা হচ্ছে, সাবধানের মাইর নেই। তিনি প্রায়ই গুগলে ঢুকে খোঁজ-তালাশ করেন মূল্যবান এই বাণীটির জনকের নাম কী। তবে পান না। পেলে নির্ঘাৎ তার জন্য নোবেলের ব্যবস্থা করতেন। নোবেল কমিটি রাজি না হলে তিনি নিজ উদ্যোগে কাঁটাবন থেকে স্বল্প খরচে একটা নোবেল বানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতেও ছাড়তেন না। তো বড়ভাই আমাকে ফোন দিয়েই বললেন আমার খোঁজে সাহসী, শক্ত-সামর্থ্য ছেলেপুলে আছে কিনা। আমি জানতে চাইলাম, কেন বলেন তো? আবার ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের টাকা তুলতে যাচ্ছেন নাকি? এখানে বলে রাখা ভালো, বড়ভাই একবার ব্যাংক থেকে পাঁচ লাখ টাকা তুলতে গিয়েছিলেন। যেহেতু তিনি সাবধানি লোক, তাই সঙ্গে করে পালোয়ানের মতো দুজনকে নিয়ে গিয়েছিলেন তাকে পাহারা দিয়ে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার জন্য। যাতে টাকাগুলো ছিনতাইকারীরা ছিনিয়ে নিতে না পারে। তো বড়ভাই আমার প্রশ্ন শুনে বললেন, নারে, ব্যাংক থেকে টাকা তোলার কাজটা এখন আমি একা একাই পারি। পাহারা দেওয়ার জন্য লোকজন লাগে না। আসলে আমি তোর কাছে লোক চেয়েছি অন্য একটা কারণে। আগামীকাল বাজারে পিয়াজ কিনতে যাব তো। বুঝতেই পারছিস, এত দামি একটা জিনিস নিয়ে একা একা ফেরাটা কত রিস্কি। উফ, কেন যে পিস্তলের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করলাম না! আমার এক ছোটভাই বলল, পিয়াজের দাম বাড়ার কারণে আর কারও কোনো উপকার হোক বা না হোক, আমাদের খুব উপকার হয়েছে। আমরা আমাদের মেসের বুয়ার দুই নম্বরির উপযুক্ত প্রতিবাদ করতে পারছি। আগে আমাদের মেসের বুয়া বড় বড় অপকর্ম করে পার পেয়ে যেত। কেন পার পেয়ে যেত? কারণ, আমরা বকা দিতে গেলেই, সে হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দিত। আর চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ত পানি । আমাদের মায়া হতো, আমরা তার অপরাধ ক্ষমা করে দিতাম। কিন্তু এখন সে পড়েছে বিপদে। এখন অপরাধ করে ধরা পড়লে হাউমাউ করে কান্নার চেষ্টা করে ঠিকই, তবে চোখে পানি আনতে পারে না। ফলে বোঝাই যায়, তার কান্নাটা নকল। এসে সে বকা আরও দুইটা বেশি খায়। আমি বললাম, এখন সে চোখে পানি আনতে পারে না কেন? ছোটভাই বলল, কেন আবার, পিয়াজের দাম বেড়ে গেছে যে! পিয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমরা মেসে পিয়াজ আনি না বললেই চলে। আর এ জন্য তাকে পিয়াজও কাটতে হয় না। যে কারণে পিয়াজের উসিলায় যে আগে কেঁদেকেটে রান্নাঘর নদী বানাত, সেই সুযোগও পায় না। ফাইন না? আমার এক দুলাভাই বললেন, কোন অসুখটা বছরের কোন সময়ে হবে, এমন একটা সিস্টেম থাকলে ভালো হতো। এই যেমন ধরো, এই সিজনটায় যদি ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ বাড়ত, তাহলে কী যে চমৎকার হতো। আমি বিস্ময় প্রকাশ করলাম কেন? দুলাভাই বললেন, কেন আবার! ডেঙ্গু হয়েছে, সারা শরীরে ব্যথা, এই অজুহাত দিয়ে মাসখানেক বাজারে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে পারতাম। ততদিনে নিশ্চয়ই পিয়াজের দাম কমে যেত! আমার এক প্রতিবেশী বললেন, আগে আমার ওপরের ফ্ল্যাটে যে ফ্যামিলি থাকত, তাদের সঙ্গে নিয়মিত ঝগড়া হতো। এখন আর হয় না। আমি জানতে চাইলাম, কেন? প্রতিবেশী বললেন, আগে তারা ওপর থেকে নানারকম জিনিস ফেলত। তরিতরকারির খোসা, এইটা সেইটা। বিশেষ করে রান্নার কাজে যেসব জিনিস ব্যবহৃত হয়, সেগুলোর অতিরিক্ত অংশ। মানে বর্জ্য। আমি বললাম, এখন আর ফেলে না? প্রতিবেশী বললেন, এখনো ফেলে। তবে আজকাল এই বর্জ্য দেখলেও মন ভালো হয়ে যায়। ঝগড়া করতে মন চায় না। কেন জানেন? কারণ, বর্জ্যরে সঙ্গে পিয়াজের খোসাও থাকে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর