সোমবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা
মোটামুটি উত্তেজনায় ভরপুর থ্রিলার স্টোরি

মফিজ কি পারবে?

রাফিউজ্জামান সিফাত

মফিজ কি পারবে?

টেরিলিন প্যান্টের সাইড পকেটের ওপরে হাত দিয়ে মফিজ অনুভব করল জিনিসটার অস্তিত্ব। গত সাতাশ মিনিটে সে চতুর্থবারের মতো পকেটের মহামূল্যবান জিনিসটার অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হলো। নাহ, এখনো কেউ টের পায়নি জিনিসটা তার কাছে আছে। কিন্তু আর কতক্ষণ জিনিসটা নিজের কাছে রাখতে পারবে সে জানে না। আতঙ্কিত চোখে সে ডানে বায়ে তাকাল। রাত গভীর হতে চলেছে। রাস্তায় লোকসংখ্যা একেবারেই কম। পথে যানবাহনও প্রায় নেই বললেই চলে। মাঝে মধ্যে দুই-একটা খালি রিকশা টুংটাং বেল বাজিয়ে ঝড়ের বেগে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে। মফিজ হাত উঁচিয়েও ওদের কারও গতি থামাতে পারল না। অনেকক্ষণ একটা চাপা ভয় তার বুকে চেপে বসে আছে। সে কি পারবে তার পকেটের দুর্লভ জিনিসটা নিয়ে নিরাপদে বাড়ি পৌঁছতে?

সামনেই একটা লম্বা সরু গলি। গলিটা তাকে অতিক্রম করতে হবে। এটা পার হতে পারলেই প্রধান সড়ক। প্রধান সড়কে ল্যাম্পপোস্ট আছে, মানুষ আছে, গাড়ি-টাড়ি পাওয়া যাবে। ঘুটঘুটে অন্ধকার গলিজুড়ে। মফিজ লম্বা একটা শ্বাস টেনে দুরুদুরু বুকে গলিতে পা রাখে। গলির মাঝামাঝি সে চলে এসেছিল। এমন সময় পেছন থেকে হঠাৎ যেন অন্ধকার ফুঁড়ে তিনটা ছেলে তাকে ডাকে, বস, লাইটার হবে?

তারা মফিজকে ঘিরে ধরেছে। এ ভাপসা গরমেও ওদের প্রত্যেকের গায়ে কালো চাদর, চোখে মস্ত বড় সানগ্ল­াস, যা তাদের মুখ ঢেকে দিয়েছে। মফিজের মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। ছেলেদের একজন ধমকে উঠে, পকেট চেপে ধরে আছেন কেন? পকেটে কী?

পকেটের কথায় মফিজের পিঠ বেয়ে চিকন ঘামের  চোরা স্রোত নেমে আসে। যে কোনো মূল্যে পকেটের জিনিসটা তাকে বাঁচাতে হবে। তার ইচ্ছা করছে খিঁচে একটা দৌড় লাগাতে কিন্তু তার পা নড়ে না।  ছেলেদের ভিতর থেকে একজন মফিজের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। শরীরজুড়ে মফিজ অসাড়তা  টের পায়। তার মাথা এলোমেলো লাগে, বুকে কে যেন হাতুড়িপেটা করছে। গলা শুকিয়ে আসছে প্রচন্ড পানির পিপাসায়। ছেলেটি মফিজের একদম কাছাকাছি চলে আসে, এমন সময় তার মোবাইলে রিংটোন বেজে ওঠে- ও বন্ধু তুই লোকাল বাস, বন্ধু তুই...। ছেলেটি থমকে দাঁড়ায়, ফোন কানে ধরে, হ্যালো জরিনা বাবু, বোলো বাবু, আমি এক্ষুনি আসছি বাবু...

হাতের ইশারায় ছেলেটি মফিজকে কেটে পড়তে বললে সে দ্রুত গলি পাড় হয়। প্রধান সড়কে সে রিকশা পেয়ে যায়। লাফ দিয়ে তাতে চড়ে বসে। বাড়ির সামনে রিকশা থেকে নেমে সে ভাড়া মিটিয়ে  দেয় ভোঁ দৌড়। দৌড়ে একের পর এক কলিংবেল চাপে। মফিজের বউ দরজা খুলতেই সে হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে হাঁপাতে থাকে। তার বউ মুখে শাড়ির আঁচল চেপে প্রচন্ড কৌতূহলী গলায় জানতে চায়, পেরেছ, তুমি কি আনতে  পেরেছ?

মফিজের শ্বাস-প্রশ্বাস এখনো স্বাভাবিক হয়নি। সে কাঁপা কাঁপা হাতে পকেট থেকে জিনিসটা বের করে বউয়ের হাতে দিয়ে বলে, হ্যাঁ। এই নাও, পিয়াজ!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর