সোমবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

প্রক্সি কাণ্ড

ইকবাল খন্দকার

প্রক্সি কাণ্ড

আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর

দোকানদার বলল, লজ্জা বেশি থাকলে সমস্যা যেটা হয়, সেটা হচ্ছে, বারবারই লাল হয়ে যেতে হয়। কারণ, বাকি চাহিয়া লজ্জা না দিতে বললেও সবাই বাকি চায় এবং লজ্জা দেয়...

 

রবীন্দ্রনাথ প্রশ্ন রেখে গেছেন, সখী, ভালোবাসা কারে কয়? আর আমরা যুগের পর যুগ ধরে সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে চলেছি। ভাগ্যিস, রবীন্দ্রনাথ এই প্রশ্ন রেখে যাননি, সখী, প্রক্সি কারে কয়? যদি রেখে যেতেন, তাহলে আমরা যুগের পর যুগ ধরে খুঁজে বেড়াতাম, প্রক্সি আসলে কাকে বলে। তবে এক্ষেত্রে কোথায় যেন আমাদের একটু সৌভাগ্য কাজ করছে। যে কারণে প্রক্সি কাকে বলে, এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে না বেড়ালেও আমরা উত্তর পেয়ে গেছি। সেটা হচ্ছে, অমুকের বদলে অমুক যখন কোনো কাজ করে, তখন সেটাকে প্রক্সি বলে। তবে তাজ্জব হওয়ার মতো ব্যাপার হচ্ছে, আজকাল শুধু অমুকের বদলে তমুকই কাজ করে না, বরং তমুকেরা কাজ করে। সবাই তো আর সব সাবজেক্টে পারদর্শী হয় না।  তাই পরীক্ষায় প্রক্সি দিলে পারদর্শী লোকজনকে বাছাই করা যেতে পারে। এই জন্য করব কী, বাংলা পরীক্ষার প্রক্সি দেওয়াব একজনকে দিয়ে, অঙ্ক আরেকজনকে দিয়ে, ইংরেজি আরেকজনকে দিয়ে। মোটকথা, যে সাবজেক্টে যে বিশেষজ্ঞ, তাকে দিয়ে সে সাবজেক্টের পরীক্ষা দিয়ে গোল্ডেন এ-প্লাস আদায় করেই ছাড়ব। আমি বললাম, ছিঁড়া কাঁথায় শুয়ে গোল্ডেন এ-প্লাসের স্বপ্ন দেখে লাভ নেই। একজনকে দিয়ে প্রক্সি দেওয়ালে কোনোভাবে পার পেলেও পেতে পারিস। এত লোক দিয়ে প্রক্সি দেওয়ানোর সুযোগ পাবি না। আমার এক বড়ভাই ছাত্রজীবন পার করেছেন প্রক্সির ঘাড়ে ভর করে। তার সেই অভ্যাস এখনো রয়ে গেছে। সংসারজীবনেও তিনি এখন প্রক্সির ওপর ভর করেই পার পেতে চান। যেমন হঠাৎ করেই সেদিন তিনি বাসায় চারটা ছেলে নিয়ে উপস্থিত হলেন। বাড়ির সবাই জিজ্ঞেস করতে লাগল, তারা কে? বড়ভাই বললেন, তারা আমার ছোটভাই। তাদের এনেছি বাজারে পাঠানোর জন্য। সবাই তো অবাক। বলে কী! বাজারে পাঠানোর জন্য বাইরের লোক কেন? বড়ভাই বললেন, প্রক্সি, প্রক্সি। বাজার করার জন্য প্রক্সি মানে? বড়ভাইয়ের জবাব, আমার হার্টের সমস্যা। পিয়াজের দাম শুনলেই বুকটা চিনচিন করে ওঠে। যে কোনো সময় হার্ট অ্যাটাক করে ফেলতে পারি। এজন্য বাজার করার কাজে এই ছেলেগুলোকে প্রক্সি হিসেবে ব্যবহারের জন্য এনেছি। চেকআপ করা আছে, এদের কারোই হার্টের সমস্যা নেই। আমার এক প্রতিবেশী বললেন, আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মাসের এক থেকে পাঁচ তারিখ, এই সময়টা একজনকে বাসায় এনে রাখব। মানে আমার বদলে তাকে প্রক্সি দেওয়াব। আমি বললাম, কেন বলেন তো? প্রতিবেশী বললেন, ভয়ে রে ভাই, ভয়ে। বাড়িওয়ালার ভয়ে। তার গলার স্বর শুনলেই আমার পালপিটিশন শুরু হয়ে যায়। আর সে যখন ভাড়া বাড়ানোর জন্য চাপ দেয়, তখন তো আমার অবস্থা যা তা হয়ে যায়। এই জন্য শক্ত সামর্থ্য দেখে একজনকে বাসায় এনে রাখার কথা চিন্তা করছি। তার গলার যা ভয়েস, আশা করছি বাড়িওয়ালাই উল্টো বুকে

থুতু দেবে। ভাড়া তোলার নাম করে এসে চা-বিস্কুট গেলার ধান্দা করবে দূরের কথা, ভাড়া না নিয়েই কেটে পড়ার সম্ভাবনা আছে। আমার বাসার পাশের এক দোকানদারকে আজকাল দোকানে তেমন বসতেই দেখা যায় না। তার জায়গায় আরেকজনকে দেখা যায়। একদিন দোকানদারকে রাস্তায় পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম, দোকান ছেড়ে দিলেন নাকি? দোকানদার বলল, আরে না। দোকান ছাড়ি নাই। আরেকজনকে দিয়ে প্রক্সি দেওয়াচ্ছি। আমি বললাম, কেন? দোকানদার বলল, আমার লজ্জা শরম একটু বেশি তো! আমি বললাম, লজ্জা শরম বেশি হলে দোকানদারি করা যায় না, এটা কে বলল? দোকানদার বলল, লজ্জা বেশি

থাকলে সমস্যা যেটা হয়, সেটা হচ্ছে, বারবারই লাল হয়ে যেতে হয়। কারণ, বাকি চাহিয়া লজ্জা না দিতে বললেও সবাই বাকি চায় এবং লজ্জা দেয়। এই জন্য এমন একজনকে দিয়ে প্রক্সি দেওয়াচ্ছি, যার লজ্জা শরম বলতে কিছু নেই। দেখি বাকি চাহিয়া তাকে কীভাবে লজ্জা দেয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর