শিরোনাম
সোমবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

আদর্শ স্বামীর ১০১টি গুণ

রাফিউজ্জামান সিফাত

আদর্শ স্বামীর ১০১টি গুণ

ফেসবুকে আদর্শ স্বামীর ১০১টি গুণাবলি  শিরোনামে পোস্ট লাইক দিয়ে নিজের ওয়ালে শেয়ার করে মফিজ। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল আজ থেকে সে আদর্শ স্বামীর সব গুণ অর্জন করবে। পোস্টের দুই নম্বর পয়েন্টে লেখা আছে, স্ত্রীর মন খারাপ থাকলে মন ভালো করে দেওয়া আদর্শ স্বামীর দায়িত্ব। দুপুর থেকে মফিজ দেখল, তার স্ত্রীর মন ভালো নেই।  সে চেষ্টা করছে কিন্তু লাভ হচ্ছে না। মন খারাপের কারণ গতকাল তার স্ত্রী অনলাইন শপ থেকে একটি রেডিমেড সালোয়ার-কামিজ অর্ডার দিয়েছিল। ডেলিভারি আসার পর দেখা গেল জামার রং মিলছে না। অর্ডার দিয়েছিল লাল, দিয়ে গেছে খয়েরি। সাইজেও ছোট। অনেক কসরত করেও জামা গায়ে লাগছে না। মূলত ক্যাটালগে মডেলদের ছবি দেখেই মফিজের স্ত্রী জামা অর্ডার দিয়েছিল। মফিজের বলতে ইচ্ছা করল, ক্যাটালগের দেওয়া মডেল দেখে নয়, বরং জামা দেখে অর্ডার দিতে হয়। কিন্তু সে কিছু বলল না। কারণ ফেসবুকের ওই পোস্টের সাত নম্বর পয়েন্টে বলা আছে, আদর্শ স্বামী কখনো স্ত্রীর ভুল ধরে না। টাকা যেহেতু আগেই দেওয়া হয়েছিল ফলে জামা পাল্টানোর আর সুযোগ নেই। স্ত্রীর চোখ ফুলে আছে। সকালেই একধাপ কান্নাকাটি হয়েছে। এখন দ্বিতীয় ধাপে কান্নার প্রস্তুতি চলছে। মফিজ নরম গলায় বলল, এ আর এমন কী, একটা জামাই তো। তার স্ত্রী নাকের পানি মুছে বলল, দামও খুব বেশি ছিল না। মাত্র সাড়ে ছয় হাজার। ওদের প্রি উইন্টার অফার চলছিল তাই সস্তায় পেয়েছিলাম।

মফিজ ঢোক গিলল। সাড়ে ছয় হাজার খরচ করে ভুল জামা! কিছু বলতে গিয়েও সে মুখের কথা গিলে ফেলল। কারণ ওই ফেসবুক পোস্টের এগারো নম্বর পয়েন্ট বলছে, আদর্শ স্বামী টাকা পয়সা নিয়ে প্রশ্ন করে না। মফিজ বুদ্ধি করে চা বানাতে রান্নাঘরে গেল। আদর্শ স্বামী প্রতিদিন নিজ হাতে স্ত্রীকে এইটা সেইটা বানিয়ে খাওয়ায় (সতেরো নম্বর পয়েন্ট)। ট্রে করে চা নিয়ে এসে সে বলল, চল, আজ আমরা বাইরে কোথাও খেতে যাই (বাইশ নম্বর পয়েন্ট)।

মফিজ স্ত্রীকে নিয়ে বাইরে খেতে বের হয়েছে। পথিমধ্যে পড়ল কাপড়ের দোকান। সেখানে হুবহু  সেই লাল জামা ঝুলছে। লাল জামা দেখে মফিজের মনে পড়ল একচল্লিশ নম্বর পয়েন্টের কথা। স্ত্রীকে সারপ্রাইজ দিতে হয়। একচল্লিশ নম্বর পয়েন্ট মেনে সে তার স্ত্রীকে লাল জামা কিনে দিয়ে সারপ্রাইজ করল। তারপর রেস্টুুরেন্টে জম্পেশ খেয়েদেয়ে শিষ বাজাতে বাজাতে বাড়ি ফিরে আসল। রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে সে আগ বাড়িয়ে নিজ হাতে মশারি টাঙালো (ঊনষাট নম্বর পয়েন্ট)।

রাতে বিছানায় যাওয়ার আগে মফিজ মানিব্যাগে একবার চোখ বুলাল। ভিতরটা মরুভূমির মতো খাঁ খাঁ করছে। তবে সে খুশি। সে ফেসবুক পোস্ট অনুযায়ী একজন আদর্শ স্বামীর সব দায়িত্ব আজ পালন করছে। বিছানায় শোয়ামাত্র তার চোখ লেগে আসছিল। এমন সময় কোমরে গুঁতা খেয়ে সে চোখ  মেলল। মোবাইল দেখিয়ে মফিজের স্ত্রী বলছে, এই শুনছ? অনলাইনে এই ড্রেসটা কেমন গো? আমাকে মানাবে না? মাত্র পাঁচ হাজার টাকা দাম, অর্ডার দিলাম, ঠিক আছে? নিরানব্বই নম্বর পয়েন্টে উল্লেখ আছে, আদর্শ স্বামী কখনো স্ত্রীর কথার বিরোধিতা করে না। মফিজ নীরবে সম্মতিসূচক মাথা ঝাঁকিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে ফেসবুক খুলল। তারপর আদর্শ স্বামীর ১০১ গুণাবলির পোস্ট ডিলিট করে বাতি নিভিয়ে দিল ঘুম।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর