সোমবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ফাঁদ কাহিনি

ইকবাল খন্দকার

ফাঁদ কাহিনি

আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

বিড়ালের জন্য দড়ি দিয়ে বানানো যে ফাঁদটা পেতেছিলাম, রাতের অন্ধকারে সেই ফাঁদে পা আটকে ধড়াম করে পড়ে গেলাম। আর এতে খাটের সঙ্গে বাড়ি খেয়ে আমার বাঁধানো দাঁত দুটো আলগা হয়ে গেল...

 

ঘুঘু দেখেছ ফাঁদ দেখোনিÑ এই প্রবাদটার মাধ্যমে ফাঁদ শব্দটার সঙ্গে আপনাদের পরিচয় হয়ে থাকতে পারে। তবে ফাঁদ জিনিসটা কতটা ভয়ঙ্কর সেটা নাও জেনে থাকতে পারেন। ফাঁদের ভয়াবহতা জানতে এবং বুঝতে চাইলে সেখানে আপনাকে পড়তে হবে। যদিও নিজে নিজে ফাঁদে পড়া যায় না। কেউ ধাক্কা দিয়ে ফেললে তবেই পড়া যায়। সব কিছুর একটা নিয়ম আছে না? আমার এক ছোটভাই বলল, সাংঘাতিক বিপদে পড়ে গেছি ভাই। এই বিপদ থেকে কীভাবে উদ্ধার পাব বুঝতে পারছি না। আমি বললাম, নিশ্চয়ই প্রেম-ভালোবাসা সংক্রান্ত বিপদ? সমস্যা নেই, এইগুলো বিপদই না। সময়মতো সব ঠিক হয়ে যাবে। ছোটভাই বলল, আপনি যা মনে করছেন, তা না ভাই। প্রেম-ভালোবাসা সংক্রান্ত বিপদ না। বাড়িওয়ালা সংক্রান্ত বিপদ। বাড়িওয়ালা আমাদের মেসে রীতিমতো কু-শাসন চালাচ্ছিল। মেসে সমস্যা আর সমস্যা। আমরা তখন আন্দোলনে নামলাম। বাড়িওয়ালার কাছে কয়েক দফা দাবি পেশ করলাম। বাড়িওয়ালা চাপের মুখে আমাদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হলেও শুরু করে দিল গ্যাঞ্জাম। মানে কীভাবে আমাদের ফাঁদে ফেলা যায়। শেষ পর্যন্ত যেটা সে করেছে, আমি কেন পাশের মেসের ছেলেদের কাছে যাই, কথা বলি, এটাকে ইস্যু বানিয়ে শুরু করে দিল কাবজাব। আমি যদিও ‘কাবজাব’ শব্দটার অর্থ বুঝতে পারলাম না, তবু জিজ্ঞেস করলাম, কী ধরনের কাবজাব করছে? আর পাশের বাসার ছেলেদের কাছে গেলে বা কথা বললে সমস্যা কী? ছোটভাই বলল, তার বক্তব্য হচ্ছে, পাশের মেসে গেলে নাকি ওই মেসের মশা এই মেসে চলে আসে। আমি তাজ্জব হয়ে বললাম, মানে! ওই মেসে যাতায়াত করলেই ওই মেসের মশা এই মেসে চলে আসবে, এটা কেমন কথা? ছোটভাই বলল, জি, এটাই কথা। তার যুক্তি হচ্ছে, মশা নাকি আসতে পারে আমার শার্টের পকেটে ঢুকে। কেউ যখন কাউকে ফাঁদে ফেলতে চায়, তখন সেখানে আর যুক্তি কাজ করে না। কাজ করে কুবুদ্ধি। মানে কীভাবে ফাঁদে ফেলা যায়, সেই কুবুদ্ধি। আমার এক বড়ভাই বললেন, পুরাই ফাঁদে পড়ে গেলাম রে ছোটভাই। তোর ভাবী যে আমাকে এত বড় ফাঁদে ফেলবে বুঝতে পারিনি। আমি জানতে চাইলাম কী ধরনের ফাঁদ। বড়ভাই বললেন, তোর ভাবী খালি কেনাকাটা করে, খালি কেনাকাটা করে। কিন্তু আমার জন্য কখনো একটা লুঙ্গিও কেনে না। আমি এর প্রতিবাদ জানাইতেই সে এমন একটা ফাঁদ পাতলো, আমি সেই ফাঁদে পড়ে এখন নাকানিচুবানি খাচ্ছি। আমি আবারও জানতে চাইলাম, কী ধরনের ফাঁদ। বড়ভাই বললেন, তোর ভাবী একা একা কেন কেনাকাটা করতে যায়, কেন আমাকে সঙ্গে নিয়ে যায় না, এটা নিয়ে কথা তুলতেই সে ফাঁদটা পেতেছিল। আর এই ফাঁদে পড়ে আমার অবস্থা এমন হয়েছে যে, এখন আমি চাইলেই তার সঙ্গে শপিংমলে যাওয়ার সাহস দেখাতে পারি না। আমি বললাম, সব বুঝেছি। এখন বলেন কী করেছে। বড়ভাই বললেন, কী আর করবে। প্রতিদিনই খাবারের সঙ্গে অল্প অল্প করে জামাল গোটা মেশায়। আর এই জিনিস খেয়ে আমার   পেট হয়ে গেছে ডাইরেক্ট। এই ডাইরেক্ট পেট নিয়ে কি বাড়ির বাইরে যাওয়া যায়, বল! রাস্তা বা শপিংকালে যদি পেটে দুর্যোগের ঘনঘটা দেখা দেয়, তখন কী করব? আমার এক প্রতিবেশী বললেন, ভাইরে বিড়ালের জ¦ালায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলাম। অবশেষে বিড়ালের জন্য ফাঁদ পেতেছিলাম। কিন্তু এই ফাঁদের পরিণতি যে এত ভয়াবহ হবে বুঝতে পারিনি। আমি জানতে চাইলাম কী হয়েছে। তিনি বললেন, বিড়ালের জন্য দড়ি দিয়ে বানানো যে ফাঁদটা পেতেছিলাম, রাতের অন্ধকারে সেই ফাঁদে পা আটকে ধড়াম করে পড়ে গেলাম। আর এতে খাটের সঙ্গে বাড়ি খেয়ে আমার বাঁধানো দাঁত দুটো আলগা হয়ে গেল। আলগা হয়ে যে কই গেল, খুঁজে পাচ্ছি না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর