সোমবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

অন্যরকম অভিজ্ঞতা

রাফিউজ্জামান সিফাত

অন্যরকম অভিজ্ঞতা

কবির একজন প্রায় উদীয়মান লেখক। ফেসবুকে গ্রুপে গল্প লিখে সে তুমুুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে। প্রায় প্রতি গভীর রাতে কবিরের কাছে যে লোকটা গল্পগুজব করতে আসে তার নাম মফিজ। এলাকায়  সে মফিজ চুরা নামে বেশি পরিচিত। চোর হলেও মফিজের নীতিবোধ বেশ প্রখর। খালি বাসায় সে চুরি করে না। কারও দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে মফিজ চুরি করে না। চুরিকার্য তার কাছে এক শৈল্পিক প্রতিযোগিতা। বাসার লোকেরা বহু দোকান ঘুরে বাজারের সেরা কাঠের মজবুত দরজা লাগায়। দামি তালা-চাবি কিনে, জানালা আটকায় মোটা শক্তিশালী গ্রিল। যত মজবুত দুর্গ, চুরিতে তত উত্তেজনা। এরপরই শুরু হয় মফিজের কেরামতি। সে সব নিরাপত্তার চাদর ভেদ করে চুরি করে বেরিয়ে আসে। মফিজের ট্র্যাক রেকর্ড খুবই ভালো। সে কখনো চুরির দায়ে ধরা পড়েনি। কবিরের সঙ্গে মফিজের সম্পর্কও চুরি দিয়ে। কবিরের ল্যাপটপখানা মফিজ একরাতে জানালা দিয়ে হাত গলিয়ে চুরি করেছিল। ল্যাপটপ হারিয়ে কবির অসহায় হয়ে পড়ে। কারণ ওই ল্যাপটপে সে চোর বিষয়ক একটি ধারাবাহিক গল্প অর্ধেক লিখেছিল। উপকরণের অভাবে বাকিটা লিখতে পারছিল না। ল্যাপটপ হারানো মানে গল্পও হারিয়ে যাওয়া কারণ অন্য কোথাও গল্পের আর কোনো কপি সংরক্ষিত  নেই। ল্যাপটপ হারানোর কয়েক দিন পর জানালার পাশের টেবিলে কবির আবার তার ল্যাপটপ দেখতে পায়। সঙ্গে আঁকাবাঁকা অক্ষরে লেখা চিঠি, ‘ছ্যার, চুরগর লইয়া আফনের গল্পডা ভালা লাগছে। আধা লিক্ষা ফেলাইয়া রাখছেন কেন, পুরাডা লিহেন।  লেপটপডা ফেরত দিয়া গেলাম।’ সেই থেকেই মফিসের সঙ্গে কবিরের সুসম্পর্ক। রাত বিরাতে তারা একসঙ্গে চা-নাশতা খায়। দেশ, সমাজ, ফেসবুক নিয়ে আলাপ-আলোচনা করে। কিন্তু কবিরের গল্প লেখা এগোয় না। একদিন মফিজকে সে বলে, ‘আমাকে একদিন চুরি করতে নিয়ে যাও। আমিও চুরি করব।’ বাস্তব জীবনে চুরির একটা অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করতে পারলে কবির গল্পটা লিখতে পারবে। লেখকদের প্রচুর অভিজ্ঞতা চাই।

মফিজ শুনেছিল, লেখকদের মাথায় গন্ডগোল থাকে। এছাড়া মফিজেরও একলা চুরি করতেও ভালো না। দুজন থাকলে চুরির টাইমে সুখ-দুঃখের কথাবার্তা বলা যাবে। মফিজ রাজি হলো। একরাতে কবিরকে সঙ্গে নিয়ে অপারেশনে বের হলো। কবির ভীষণ উত্তেজিত। জীবনের প্রথমবার সে প্রফেশনাল চুরি করতে যাচ্ছে। কবির সঙ্গে করে ভিডিও ক্যামেরা নিল। পুরো চুরির অভিজ্ঞতা সে ভিডিও করে রাখবে। পরবর্তীতে লেখার কাজে সুবিধা হবে। 

মফিজের দূরদর্শিতায় তারা সহজেই পাশের এলাকায় চুরি করে। সফলতার সঙ্গে চুরির মালসামান নিয়ে বেরিয়ে এলো তারা। কেউ ধরা পড়ল না। এমনকি একটা কাকপক্ষীও টের পেল না। বাসায় ফিরে কবিরের সেকি উল্লাস। গল্প লেখার সব বাস্তব উপকরণ সে পেয়ে গেছে। এখন এক বসাতেই সে গল্পের বাকি অংশটুকু শেষ করে দিতে পারবে। দেরি না করে কবির চেয়ার-টেবিলে বসে গেল। মফিজ চলে গেল মহাজনের কাছে চুরির মালামাল বিক্রি করতে।

পাতার পর পাতা কবির লিখে যাচ্ছে। তার কলম থামছে না। এমন সময় সে দরজার কলিংবেলের শব্দ শুনল। অনিচ্ছা শর্তেও উঠে দরজা খুলে দেখে পুলিশ দাঁড়িয়ে। কবিরের গলা শুকিয়ে গেল। পুলিশ কেন? চুরির কথা তো কারও জানার কথা না। এমনকি ওই বাসায় কোনো সিসিটিভিও ছিল না, মফিজ চেক করে বলেছে। কেউ তাদের দেখেওনি। মালামালও সঙ্গে নেই। তবে? কবির কিছুই বুঝতে পারছে না। পুলিশ তাকে টেনে-হিঁচড়ে গাড়িতে তোলে। গাড়ির ভিতরে কোমরে দড়িবাঁধা অবস্থায় মফিজ বসে আছে। কবিরকে দেখে সে বিরক্তিমাখা গলায় বলল, ‘ছ্যার, ওস্তাদি কইরা আফনেরে ভিডু করতে কইছিল কেডায়? ভিডু করছেন তো করছেন, অইডা ঐহানে ফেলাইয়া আবার আইলেন ক্যান?’

মফিজ রাগে গজগজ করলেও কবির কিন্তু মনে মনে  বেজায় খুশি। যাক, এবার জেলখানার অভিজ্ঞতাটাও হয়ে যাবে!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর