সোমবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

সুপার ইলেভেনের ক্যাপ্টেন মফিজ

রাফিউজ্জামান সিফাত

সুপার ইলেভেনের ক্যাপ্টেন মফিজ

মফিজ ভাই দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলেন। তাকে বলা হয় চিপা গলির ক্রিকেট সুপারস্টার। মফিজ ভাই যখন ম্যাচ খেলেন না তখন টঙ্গের দোকানে বসে খেলা  দেখেন। যখন খেলা থাকে না তখন ব্যাট হাতে নিয়ে  দেয়ালে পা ঝুলিয়ে বসে থাকেন। অর্থাৎ ক্রিকেটই তার ধ্যান-জ্ঞান। ভাইয়ের প্রতিটা শট মাপা। কতটুকু  জোরে মারলে বল ড্রেনে পড়বে না, কোন দেয়ালের  কোন বৃত্তে বল লাগাতে পারলে বোনাস দুই পয়েন্ট,  কোন গাছের ডালে বাড়ি লেগে ক্যাচ ধরলেও সেটা নট আউট, বল কতটুকু ওপরে তুললে পাশের বাসার আন্টিদের জানালার কাচ ভাঙবে নাÑ তিনি সব জানেন। মফিজ ভাই দলে থাকা মানেই নিশ্চিত জয়। আশপাশের এলাকা থেকে  ‘খ্যাপ’ ম্যাচ খেলতে তাকে  ভাড়া করে নিয়ে যাওয়া হয়। এলাকার ক্রিকেট সেনসেশন মফিজ ভাইয়ের ক্রিকেট  প্রেরণার মূল উৎস অবশ্য লাবণী আপা। লাবণী আপাদের বাসার নিচের গলিতেই মফিজ ভাই তার ক্রিকেট প্রতিভার বিকাশ করেন। কখনো কখনো বিকালে চায়ের কাপ হাতে লাবণী আপা বারান্দায় দাঁড়িয়ে নিচের রাস্তায় তাকালে ওই কয়েক পলকে মফিজ ভাই তার সব ক্রিকেট নৈপুণ্য আপাকে দেখিয়ে দেন। নিজেই ব্যাট চালান, নিজের ব্যাটে মারা বল নিজেই দৌড়ে গিয়ে কুড়িয়ে আনেন। আবার নিজেই বল থ্রো করে স্ট্যাম্প ভেঙে ‘আউট! আউট!’ বলে চিৎকার করেন।    

মাঝেমধ্যে খেলার মধ্যে লাবণী আপার বাবাকে বাজারের ব্যাগ হাতে ফিরতে দেখলে মফিজ ভাই ব্যাট ফেলে আংকেলের কাছ থেকে ব্যাগ তুলে বাসার লিফটের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়ে আসেন। খেলা ততক্ষণ বন্ধ থাকে। এলাকায় আন্তঃগলি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়েছে। সুপার ইলেভেন বনাম লিপু ব্রাদার্সের মধ্যকার ম্যাচ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই এলাকায় উত্তেজনা-উৎসাহ বিরাজ করছে। ম্যাচের পুরস্কার হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে পেটচুক্তিতে কাচ্চি। ম্যাচ উপলক্ষে আলাদা আলাদা জার্সি বানানো হয়েছে। এলাকার মানুষজন ছাদ থেকে খেলা উপভোগের জন্য ছাদে উঠে বসে আছে। সেখানে চলছে মুড়ি-বুট মাখানি, চায়ের আয়োজন। সুপার ইলেভেনের ক্যাপ্টেন মফিজ ভাই, লিপু ব্রাদার্সের ক্যাপ্টেন লিপু।

লিপু ব্রাদার্স প্রথমে ব্যাট করে ১০ ওভারে তুলেছে ছিয়াত্তর রান। সুপার ইলেভেনের জন্য এ রান চেজ করা কোনো ব্যাপারই নয়। মফিজ ভাই একাই  অনায়াসে এ ম্যাচ জিতিয়ে নিয়ে আসতে পারেন। সুপার ইলেভেনের খেলোয়াড়রা ইতিমধ্যেই বিজয়ের স্বাদ পেতে শুরু করছে।

দ্বিতীয় ইনিংসে ১০ রানে সুপার ইলেভেনের টপাটপ তিন উইকেট পড়ে গেলে মফিজ ভাই ব্যাটিং করতে রাস্তায় নামলেন। ভাইকে নামতে দেখে সবাই হাততালি দিয়ে উঠল। মফিজ ভাই চারপাশটা একবার ভালো মতো দেখে নিলেন। ওই তো লাবণী আপা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছেন। টেলিভিশনে যেমন দেখায় তেমনিভাবে ব্যাট দিয়ে মফিজ ভাই পিচ ঢালা রাস্তা ঠুক ঠুক করে কী জানি কী পরীক্ষা করলেন। তার পর শার্টের হাতা গুটিয়ে ব্যাটিংয়ে দাঁড়ালেন। বোলিংয়ে লিপু, ব্যাটিংয়ে মফিজ ভাই। লিপু গুলির বেগে ছুটে এসে কচ্ছপের গতিতে বল ছুড়ল। মফিজ ভাই ক্রিজ ছেড়ে এগিয়ে এসে  সজোরে শূন্যে ব্যাট ঘোরাল, কিন্তু একি! স্ট্যাম্প উধাও! লিপুর প্রথম বলেই মফিজ ভাই বোল্ড! হতভম্ব দর্শকরা দেখল মফিজ ভাই আউট হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। ক্রিজ ছেড়ে রাস্তার পাশে ফিরে এলে সুপার ইলেভেনের খেলোয়াড়রা মফিজ ভাইকে ঘিরে ধরল। ‘ভাই, এইটা কেমনে হইল! লিপু আপনাকে বোল্ড আউট করল, এ তো অসম্ভব!’

মফিজ ভাই উত্তর না দিয়ে লাবণী আপাদের বারান্দার দিকে চাতক পাখির মতো তাকিয়ে রইল।

পাঠকদের বলে রাখা প্রয়োজন, লিপু হচ্ছে লাবণী আপার ছোট ভাই, মানে মফিজ ভাইয়ের হবু...

সর্বশেষ খবর