সোমবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

শুভকামনার সিরিয়াল

আফরীন সুমু

শুভকামনার সিরিয়াল

বোর্ড পরীক্ষার সঙ্গে শুভকামনা চাওয়ার রীতি জড়িয়ে আছে। এসএসসি পরীক্ষার সময় আমার এ শুভকামনা চাওয়া শুরু হয়েছিল প্রায় এক সপ্তাহ আগে থেকে। আম্মা প্রতিদিন পাঁচ ছয়জন আত্মীয়কে কল করে মোবাইলটা আমার কানে ধরিয়ে দিতেন। আমি শুভকামনা আদায় করে ছাড়তাম।

‘জ্বি ভালো আছি। আপনারা ভালো আছেন? ওমুক তারিখে আমার পরীক্ষা। দোয়া রাখবেন। জ্বি প্র্রস্তুতি ভালো। প্রথম দিন ওমুক পেপার...।’

আম্মা সব বলে দেওয়ার পরেও আমাকে আবার নতুন করে বলতে হতো। আমি হিসাব করে দেখলাম গড়ে পাঁচজনের সঙ্গে কথা বলে আমার প্রায় আধঘণ্টা থেকে পৌনে এক ঘণ্টার মতো সময় নষ্ট হতো এবং মা বেছে বেছে আমার পড়ার সময়গুলোতেই আসতেন। আমি মাকে বললাম, ‘মা তুমি একটা এসএমএস রেডি করে প্রত্যেকের কাছে পাঠিয়ে দাও। তাহলেই তো ঝামেলা মিটে যায়।’ মা ঝামটা মেরে বলতেন, ‘শুভকামনার চেয়ে তোর পড়া বেশি হয়ে গেল? ময়মুরব্বির শুভকামনা কত কাজে আসে জানিস? একটু মোবাইলে কথা বলবি তাও এত সমস্যা। আমাদের সময় আমরা প্রত্যেকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে শুভকামনা আদায় করে নিয়ে আসতাম।’ সবচেয়ে অস্বস্তিকর বিষয় হলো মা যাদের ফোন করে আমাকে শুভকামনা ম্যানেজ করে দিচ্ছেন তাদের সঙ্গে সারা বছরে ভুলক্রমেও একবার কথা হয় কিনা সন্দেহ। শুভকামনা এভাবে মোবাইলে মোবাইলেই শেষ নয়। পথে-ঘাটে, হাটে-বাজারে যার সঙ্গেই দেখা হোক বলতে হতো, ‘আন্টি শুভকামনা রাখবেন আমার জন্য। অমুক দিন পরীক্ষা। মা সঙ্গে থাকলে কারও সঙ্গে দেখা হলেই মা পেছন থেকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে বলতেন, বল, বল। আমি ধাক্কা খেতে খেতে বলতাম, আঙ্কেল শুভকামনা রাখবেন আমার জন্য। অমুক দিন পরীক্ষা।

শুভকামনা চাওয়ার লিস্ট থেকে কেউ বাদ পড়তে পারবে না। তাহলেও শুনতে হবে নানা কথা। সময় পাল্টেছে। এখন শুভকামনা চাওয়ার প্রক্রিয়াটা কিছুটা সহজ হয়ে এসেছে। পরীক্ষার্থীদের বেশির ভাগেরই ফেসবুক আইডি আছে। তারা দোয়া চেয়ে স্ট্যাটাস দেয়। এক স্ট্যাটাসেই সিরিয়াল শুভকামনা কমপ্লিট। আমারও ফেসবুক আইডি আছে। আমি হোমপেজ স্ক্রল করে করে প্রত্যেক পরীক্ষার্থীর কমেন্ট বক্সে শুভকামনা জানিয়ে আসি। এবারের পরীক্ষায়ও এভাবে শুভকামনা করছিলাম। এমন সময় ফোন এলো। এক পরিচিত ছেলে শুভকামনা আদায় করতে চাইছে। আমি নানা কুশলাদি জিজ্ঞেস করে অবশেষে শুভকামনা কপি-পেস্ট করে দিলাম। তার কিছুক্ষণ পরেই এক আন্টি তার মেয়েকে নিয়ে বাসায় এসে হাজির। তিনি ডাইরেক্ট মুখের ওপর শুভকামনা আদায়ে বিশ্বাসী। তিনি বললেন, ‘কই তোমার আব্বা-আম্মাকে ডাকো, দোয়া নিয়ে যাই।’ আমি বললাম, ‘আন্টি আমার আব্বা-আম্মাতো এখানে থাকেন না। তাদের ঠিকানা দিয়ে দিচ্ছি আপনি চাইলে ওখানে গিয়ে শুভকামনা আদায় করে নিয়ে আসতে পারেন। আন্টি আমার দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে চলে গেলেন। আমি বুঝলাম না ভালো বুদ্ধি দিলে মানুষ রেগে যায় কেন?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর