সোমবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

পিয়াজ নিয়ে প্যাঁচাল

ইকবাল খন্দকার

পিয়াজ নিয়ে প্যাঁচাল

► আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

আমার এক বড়ভাই দুঃখ প্রকাশ করে বললেন, বিপদ যখন আসে, তখন চারদিক থেকে আসে। নইলে এখন নেট কেন স্লো হতে হবে? এক ঘণ্টা চেষ্টা করে নেটে ঢুকতে পারিনি। কী একটা অবস্থা! আমি বললাম, খুবই বাজে অবস্থা। কিন্তু চারদিক থেকে কী কী বিপদ

আসল, বুঝতে পারিনি। একটু যদি বুঝিয়ে বলতেন। তবে একটা বিপদ যে নেট, তা কিন্তু বুঝতে পেরেছি। নেট বলতে স্পিডহীন নেট আরকি। বড়ভাই বলল, মূল বিপদ হচ্ছে পিয়াজ। পিয়াজের আকাশচুম্বী দামের কারণে এমনিতেই লক্কড়-ঝক্কড় অবস্থা। এই অবস্থায় যদি নেট বিট্রে করে, তাহলে কেমন লাগে! আমি এবার চুপ মেরে গেলাম। কারণ, কোনোভাবেই মেলাতে পারছিলাম না, পিয়াজের বর্ধিত দামের সঙ্গে নেটের কী কানেকশন  থাকতে পারে। আমি বড়ভাইকে অনুরোধ করলাম বিষয়টা পরিষ্কার করার জন্য। বড়ভাই ডিটারজেন্ট পাউডার ছাড়াই পরিষ্কার করলেন, আসলে হয়েছে কী, পিয়াজের দাম আসমানে গিয়ে ঠেকার পর চিন্তা করে ঠিক করলাম, আর পিয়াজই কিনব না। কিন্তু সারাজীবন পিয়াজ খেয়ে এসেছি, হঠাৎ করে তো আর ছেড়ে দেওয়া যায় না। এ জন্য সিদ্ধান্ত নিলাম, খাওয়ার সময় সামনে পিয়াজের ছবি রেখে দেব। যাতে কামড়ে কামড়ে পিয়াজের একটা ফ্লেভার পাওয়া যায়। কিন্তু গুগল থেকে ভালো দেখে পিয়াজের ছবি যে নামাব, সেই সুযোগ পাচ্ছি না মরার নেটের কারণে। আমার এক ছোটভাই একটু গবেষক টাইপের। নানা বিষয় নিয়ে গবেষণা করতে পছন্দ করে। যদি নিন্দুকেরা বলে, তার গবেষণা নাকি ‘হুদাই’ জাতীয়। তো সে হঠাৎ করেই ফোন করে বলল, ভাই, পিয়াজের বিকল্প তো পেয়ে গেছি। আমি তো লাফ দিয়ে উঠলাম, বলিস কী! পিয়াজের বিকল্প কী পেয়েছিস? ছোটভাই সোজাসুজি আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে একটু ভূমিকা করে দিল, আপনি তো জানেন ভাই, পিয়াজ আমাদের চোখে পানি আনে। এদিকে আরেকটা জিনিস আমাদের চোখে পানি আনে। জানেন তা কী? গ্লিসারিন। তো দুটোই যেহেতু চোখে পানি আনায় ওস্তাদ, অতএব আমি মনে করি পিয়াজের বিকল্প হিসেবে গ্লিসারিন ব্যবহৃত হতেই পারে। সেই সুবাদে ভাই পিয়াজ-মরিচ দিয়ে মুড়ি না মাখিয়ে গ্লিসারিন আর মরিচ দিয়ে মুড়ি মাখিয়ে খাওয়ার ইচ্ছে পোষণ করেছি। একটা মানুষ পিয়াজের বিকল্প আবিষ্কার করেছে, এই ভেবে একটু সান্ত্বনা পাওয়ার ভান করতে হলো। আমার এক বন্ধু বলল, শুনলাম অনেক গোডাউনে নাকি পিয়াজ পচছে। আর সেসব পচা পিয়াজ যাচ্ছে বুড়িগঙ্গায়। আমি বললাম, খুবই দুঃখজনক। বন্ধু বলল, দুঃখজনক তো বটেই। পাবলিক পিয়াজ পাচ্ছে না, অথচ এরা পিয়াজ পচিয়ে পানিতে ফেলছে, এটা মানা যায় না। আমি বললাম, আমি এটা বিবেচনা করে ‘দুঃখজনক’ বলিনি। আমি দুঃখজনক বলছি এ জন্য, যেহেতু বুড়িগঙ্গার মাছ আর ব্যাঙদের মধ্যে মানুষ সম্পর্কে একটা বাজে ধারণা তৈরি হবে। ব্যাঙ আর মাছরা মনে করবে মানুষ বুঝি তাদের ‘ইয়াম্মি’ কোনো খাবার দিচ্ছে। গোল গোল। কিন্তু যখন টেস্ট করে দেখবে পচা পিয়াজ, তখন মানুষকে কী পরিমাণ গালাগাল যে করবে! গুটিকয়েক মুনাফালোভীর জন্য গালি খাবে সবাই। আমার আরেক প্রতিবেশী বললেন, জীবনে মানুষ হয়ে জন্ম নিয়ে লাভটা হলো কী! অথচ পিয়াজ হয়ে জন্ম নিলে কতই না ভালো হতো। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কী রকম? প্রতিবেশী বললেন, কী রকম আবার! আমি এখনো বিমানভ্রমণ করতে পারলাম না, অথচ পিয়াজ তা করে ফেলেছে। তাও ভিসা-পাসপোর্ট ছাড়া। ভাবা যায়? আমি বললাম, অবশ্যই ভাবা যায়। নইলে ভাবছি কীভাবে!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর