সোমবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

প্রেমশালা কোচিং সেন্টার

রাফিউজ্জামান সিফাত

প্রেমশালা কোচিং সেন্টার

প্রেমপত্র লেখক হিসেবে মফিজ ভাই এক জীবন্ত কিংবদন্তি। সম্প্রতি তিনি একটি কোচিং সেন্টার খুলেছেন। যেখানে হাতে-কলমে শিক্ষার্থীদের প্রেমপত্র রচনা শেখানো হয়। কোচিং সেন্টারের নাম, ‘প্রেমশালা কোচিং সেন্টার।’ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই  কোচিং সেন্টারটি নিয়ে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। কেবল এ এলাকা নয়, আশপাশের এলাকা থেকে প্রতিদিন দলেবলে আগ্রহী শিক্ষার্থীরা মফিজ ভাইয়ের কোচিংয়ে ভিড় জমায়। কিন্তু রাসেল ভাই এক ক্লাসে ৩০ জনের বেশি ভর্তি করান না। তিন মাস অন্তর অন্তর কোচিংয়ে ছাত্রছাত্রী ভর্তি কার্যক্রম পরিচালিত হয় এবং তার জন্য ভর্তিচ্ছু সবাইকে এক কঠিন ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা লাগে। প্রেমশালা কোচিংয়ে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের ভিতর যতটা আগ্রহ দেখা যায়, পাবলিক পরীক্ষাতেও শিক্ষার্থীদের ভিতর এতটা প্রতিযোগিতা দেখা যায় কিনা সন্দেহ। প্রেমশালা কোচিং সেন্টারে ভর্তি প্রস্তুতির জন্য এলাকায় হরেক নামে বেশ কয়েকটি কোচিং সেন্টার গড়ে উঠেছে। প্রেমশালার বিগত পরীক্ষাগুলোর প্রশ্নের ধরন দেখে তারা শিক্ষার্থীদের কোচিং করায়, প্রয়োজনীয় টিপস প্রদান করে। বিভিন্ন উঁচু লেভেল থেকে মফিজ ভাইয়ের কাছে ছাত্র ভর্তির সুপারিশ আসে, ভাই সেসব পাত্তা  দেন না। প্রেমশালা সেন্টারের সামনের দেয়ালে বড় বড় করে নানা ধরনের কালজয়ী উক্তি চিকা মারা।  সেখানে লেখা- ‘তদবির নয়, প্রেমপত্র রচনা করিতে চাহিলে প্রেমিক হইতে হয়’, ‘একটি সঠিক প্রেমপত্র, প্রেমের অব্যর্থ নিশানা’, ‘ওহে, এসো প্রেম করি।’

আজ প্রেমশালা কোচিং ভর্তি পরীক্ষা। সকাল থেকে পরীক্ষার্থীদের পদচারণায় কোচিং প্রাঙ্গণ মুখরিত। ছাত্রছাত্রীরা লাইন ধরে হলে প্রবেশ করছে। কিছু দুষ্ট ছাত্র প্রশ্ন ফাঁসের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র মফিজ ভাই নিজ হাতে তৈরি করেন। তাই প্রশ্ন ফাঁসের সম্ভাবনা নেই। পরীক্ষা পর্যবেক্ষক হিসেবে উপস্থিত হয়েছেন একদল স্বঘোষিত পাতি কবি। স্থানীয় ইউটিউবাররা ক্যামেরা হাতে একটু পর পর কেন্দ্রের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে লাইভে আসছেন। টানটান উত্তেজনায় সকাল ১০টার ঘণ্টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষা শুরু হলো। প্রশ্নপত্র খুলেই ছাত্রছাত্রীদের মাথায় হাত। প্রশ্ন মারাত্মক কঠিন হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে- এ যাবৎকালের সবচেয়ে কঠিন প্রশ্ন। প্রশ্নের উত্তর সবারই জানা কিন্তু উত্তর প্রকাশ করাই কঠিন। কয়েকজন প্রশ্ন দেখেই উত্তরপত্র ফেলে পালাল। কয়েকজন কলম কামড়াতে বসল। কয়েকজন আবার হড়বড় করে উত্তর লিখে গেল। ঘণ্টা বাজলে অধিকাংশই মনমরা হয়ে কেন্দ্র  থেকে বেরিয়ে এলে  ফেসবুক লাইভে তাদের জিজ্ঞেস করা হলো, প্রশ্নটা কী ছিল? তারা বলে, ‘প্রশ্ন এসেছিল, তোমার প্রাক্তন প্রেমের বর্ণনা দাও।’ এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া মানে বর্তমান প্রেমিক-প্রেমিকার কাছে প্রাক্তন প্রেম স্বীকার করে নেওয়া; যা অনেকেই এতদিন লুকিয়ে রেখেছিল। বর্তমান প্রেম টিকিয়ে রাখতে অধিকাংশ পরীক্ষার্থী তাই এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি।

এমন প্রশ্নের কারণ জানতে চাইলে মফিজ ভাই ভারিক্কি গলায় মন্তব্য করেন, ‘ভাঙা-গড়া প্রেমেরই নিয়তি। যে প্রেমার্থী (যে প্রেমে পড়তে চায়) নিয়তি অস্বীকার করিয়া সত্য লুকাইতে চাহে উক্ত পুরুষ বা নারী প্রেমশালায় ভর্তির যোগ্য নহে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর