সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

শীতে কাঁপাকাঁপি

ইকবাল খন্দকার

শীতে কাঁপাকাঁপি

আমার এক ছোটভাই খুব মনোযোগ দিয়ে মোবাইল দেখছিল। আমি শুরু করে দিলাম জ্ঞানের কথা শোনানো- তোদের এই এক সমস্যা। সারা দিন ফেসবুকিং। কেন রে বাপু, এত ফেসবুকিং কেন করতে হবে! ছোটভাই বলল, আপনি ভুল বুঝে ফাউ ঘ্যানরঘ্যানর করছেন। এটা ঠিক না। আপনার সদয় অবগতির জন্য জানাচ্ছি, আমি ফেসবুক দেখছি না। আমি হাসপাতালের খোঁজ নিচ্ছি। মানে গুগলে ঢুকে এমন একটা হাসপাতাল খুঁজছি, যেখানে খুব ভালো এক্স-রে হয়। আসলে এক্স-রে তো হয় সব হাসপাতালেই। তবে সব হাসপাতালের এক্স-রে মেশিনই কিন্তু ভালো না। নষ্ট মেশিনও আছে কোনো কোনো হাসপাতালে। এ জন্য আমি বিশ্বস্ত হাসপাতাল খুঁজছি। আমি বললাম, আর প্যাঁচানোর দরকার নেই। আমি বুঝতে পেরেছি। তবে এখন জানা দরকার, কার এক্স-রে করাতে হবে। কে অসুস্থ? ছোটভাই বলল, এক্স-রে আমিই করাব। না, আমি ওইভাবে অসুস্থ না। তবে প্রচুর শীত তো। এই জন্য এক্স-রেটা করানো দরকার। আমি বললাম, প্রচুর শীত হলে যে এক্স- রে করাতে হয়, বাপের জন্মেও শুনিনি। ছোটভাই বলল, না শোনার কী আছে! সবাই বলছে এটা নাকি হাড় কাঁপানো শীত। তো হাড় কাঁপতে কাঁপতে নির্দিষ্ট জায়গা থেকে সরে আরেক জায়গায় চলে গেল কি না, এক্স-রে করে দেখা দরকার আছে না? দেখা গেল বুকের হাড় পেটে নেমে গেল, তখন বেল্ট পরতে ঝামেলা হবে না? আমার এক বড়ভাই বললেন, আমার মাথায় খুব ভালো একটা আইডিয়া এসেছে। আইডিয়াটা টিভি চ্যানেলগুলোর সঙ্গে শেয়ার করতে চাই।

আমি জানতে চাইলাম, কী আইডিয়া? আমাকে বলা যাবে? বড়ভাই বললেন, অবশ্যই বলা যাবে। তুই আমার ছোটভাই। তোকে বলব না তো কাকে বলব? আইডিয়াটা অনেকটা ‘কে হতে চায় কোটিপতি’র মতো। মানে প্রতিযোগিতা টাইপের। এই প্রতিযোগিতায় সে-ই বিজয়ী হবে, যে সকালে উঠে সবার আগে গোসল করতে পারবে। তবে যে শীত পড়েছে, তাতে আমার মনে হয় না আমরা কোনো বিজয়ী পাব। যাই হোক, প্রতিযোগিতাটার নাম হবে, ‘কে হতে চায় গোসল করনেওয়ালা’। আমার এক প্রতিবেশী বললেন, ছাত্রজীবনে কত মনোযোগ দিয়েই না পড়াশোনা করেছিলাম। কিন্তু তখন কি জানতাম বই ভুল তথ্যে ভরপুর? আমি অবাক হয়ে বললাম, বলেন কী! পাঠ্যবইয়ে ভুল? প্রতিবেশী বললেন, অবশ্যই ভুল। এই যেমন ধরেন, বিজ্ঞান বইয়ে পড়েছিলাম সূর্য থেকে পৃথিবীতে আলো মানে সূর্যের আলো এসে পৌঁছাতে সময় লাগে কত মিনিট কত সেকেন্ড যেন। এই তথ্যটা ডাহা ভুল। আমি বললাম, কেন? ভুল কেন? প্রতিবেশী বললেন, ভুল এই জন্য, যেহেতু গত তিন চার দিন সূর্যের কোনো আলোই পৃথিবীতে এসে পৌঁছায়নি। তার মানে কী? মানে হচ্ছে, সূর্যের আলো পৃথিবীতে এসে পৌঁছাতে এত মিনিট বা এত সেকেন্ড লাগে, এটা ভুল। শুদ্ধ হচ্ছে, সূর্যের আলো পৃথিবীতে এসে পৌঁছাতে কখনো এক সপ্তাহও লেগে যেতে পারে। কোনো ঠিক নাই।

আমার আরেক প্রতিবেশী বললেন, অতিরিক্ত শীতের কারণে অতিরিক্ত বিপদে পড়ে গেছি ভাই। আপনার ভাবির মার খেতে খেতে জান তামা তামা। আমি বললাম, এ কী কথা! শীতের কারণে ভাবির মার খেতে হবে কেন? প্রতিবেশী বললেন, আসলে হয়েছে কী ভাই, আমি একটু অলস প্রকৃতির মানুষ। অতিরিক্ত শীতে আরও বেশি অলস হয়ে গেছি। সারা দিন জ্যাকেট বা ট্রাউজারের ভিতর হাত ঢুকিয়ে রাখি। ফলে আপনার ভাবি রেগে গিয়ে কিল-চড় মারলে সেগুলো ফেরাতে পারি না। কবে যে শীত কমবে! কবে যে পকেট থেকে হাত বের করে কিল-চড় প্রতিহত করতে পারব। আমি বললাম, শীত কমার চেয়ে বাড়ার জন্য অপেক্ষা করেন। শীত আরও বাড়লে হবে কী, আপনি জ্যাকেটের ওপর চাদর গায়ে দিয়ে না ঘরে ঘুরবেন লেপ গায়ে দিয়ে। আর লেপ গায়ে থাকলে ভাবির কিল-চড় একটু কমই টের পাবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর