সোমবার, ৬ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

নতুন বছরে পুরনো প্যাঁচাল

ইকবাল খন্দকার

নতুন বছরে পুরনো প্যাঁচাল

আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

আমার এক ছোটভাইয়ের কাছে জগতের সবকিছুই বিস্ময়। মানে সে সবকিছু দেখেই অবাক হয়, সবকিছু শুনেই অবাক হয়। গতকাল যখন তার সঙ্গে কথা হচ্ছিল, তখন জানতে পারলাম নতুন বছরের আগমনেও নাকি সে বিস্মিত। তার বিস্ময়ের কথা শুনে আমি বিস্মিত হয়ে বললাম, কারণ কী বল তো? ছোটভাই বলল, এই যে একটা বছর শেষ হতেই আরেকটা বছর শুরু হয়ে যাচ্ছে, এটা কি বিস্ময়ের ব্যাপার নয়? অবশ্যই বিস্ময়ের ব্যাপার। যেমন ধরেন আমাদের গেটে দুজন দারোয়ান আছে। নিয়ম হচ্ছে, একজনের ডিউটি শেষ হলে আরেকজন ডিউটি শুরু করবে। কিন্তু প্রায়ই এমন হয়, একজনের ডিউটি শেষ হলেও আরেকজন ডিউটিতে আসতে চায় না। গড়িমসি করে। দেরি করে। অথচ কী কা- দেখেন! একটা বছর শেষ হতে না হতেই আরেকটা চলে আসে। একবারও বলে না, দুটা দিন পরে যাই। ব্যাপারটা তাজ্জবের কিনা বলেন!

আমি না এদিক, না সেদিক, এই টাইপের একটা মাথা দুলিয়ে কেটে পড়লাম তার সামনে থেকে। আর তখনই দেখা পাড়ার বড়ভাইয়ের সঙ্গে। তিনি ইনিয়েবিনিয়ে আমাকে বোঝাতে চাইলেন, নতুন বছর উপলক্ষে তার মাথায় নানামুখী পরিকল্পনা। তিনি যে কোনো মূল্যে এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চান। আমি বললাম, পরিকল্পনা তো গত বছরও ছিল। আপনার পরিকল্পনার ঠেলায় আমাদের চোখের ঘুম হারাম হওয়ার জো ছিল। কই, কোনো পরিকল্পনা তো বাস্তবায়িত হতে দেখলাম না। বড়ভাই বললেন, আরে বেটা, পরিকল্পনা প্রতিবছরই থাকবে। বাস্তবায়নের চেষ্টাও থাকবে। যদি বাস্তবায়ন না হয় মানে চেষ্টা সফল না হয়, তাহলে নতুন করে পরিকল্পনা করতে হবে। মোট কথা হচ্ছে, নতুন বছর আসার সঙ্গে সঙ্গে পরিকল্পনার ডালি সাজিয়ে বসতে হবে। যাতে কেউ জিজ্ঞেস করলে বলা যায়, নতুন বছরে কী করেছেন, পরিকল্পনা করেছি। আমি বললাম, তার মানে হচ্ছে, পরিকল্পনাটাও একটা কাজ? বড়ভাই বললেন, এই তো বুঝতে পেরেছিস। আরও বুঝিয়ে বলি। যার কিছুই করার নেই, তার পরিকল্পনা করার আছে। ক্লিয়ার? আমার এক প্রতিবেশী বললেন, বছর তো শুরু হয়ে বেশ কদিন চলেও গেল। নতুন বছরটা কীভাবে কাটাবেন বলে সিদ্ধান্ত নিলেন? মানে পরিকল্পনা কী? আমি বললাম, আপনিই বলেন পরিকল্পনাটা কেমন হওয়া উচিত। প্রতিবেশী বললেন, আমি মনে করি নতুন বছরের শুরুতে প্রত্যেকেরই উচিত বাজারে চলে যাওয়া। কেন বাজারে চলে যাওয়া? কারণ, বাজারে টালিখাতা পাওয়া যায়। টালিখাতার কী কাজ? জি, এই খাতায় লিখতে হবে এই বছরে আমি এই এই কাজগুলো করব। আমি বললাম, খালি লিখলে হবে? বাস্তবায়ন করতে হবে না? প্রতিবেশী বললেন, আরে বাস্তবায়ন তো পরের বিষয়। লিখে লিখে যদি টালিখাতা ভরেন, তাতেও একটা বিরাট ফায়দা আছে। ফায়দাটা কী জানেন? লিখলেই আপনার হাতের লেখা সুন্দর হবে। এ ছাড়া আজকাল তো লেখেন শুধু আঙ্গুলের ঘষায়। মানে মোবাইলের টাচ স্ক্রিনে। এতে আঙ্গুলের ব্যায়াম হয় কেবল। কিন্তু কলম দিয়ে টালিখাতায় পরিকল্পনা লিখতে থাকলে কমপক্ষে তিনটা আঙ্গুলের ব্যায়াম তো হবেই, হাতের কব্জির ব্যায়ামও হয়ে যেতে পারে। ভালো তো, ভালো না? আমার এক বন্ধু বলল, এই যে একটার পর একটা বছর যাচ্ছে, আদৌ কি আমরা কোনো কাজ পরিকল্পনা মাফিক করতে পারছি? আমি বললাম, তা পারছি না। এখন তোর কী মনে হয়, কী করা উচিত? বন্ধু বলল, আমার মনে হয় এখন থেকে এমন নিয়ম হওয়া উচিত, নতুন বছরে যে যা পরিকল্পনা করবে, সেটা স্ট্যাম্পে লিখবে। যাতে বাস্তবায়নে গড়িমসি করলেই তার নামে মামলা করা সম্ভব হয়। আমি বললাম, খুবই ভালো পরিকল্পনা। তবে আমি মনে করি, এই পরিকল্পনা মোতাবেক এগোতে গেলে কারও আলমারিতে আর জামা কাপড় রাখার জায়গা থাকবে না। শুধু স্ট্যাম্প থাকবে আর স্ট্যাম্প থাকবে। কারণ, কেউ পরিকল্পনা করতে কম তো আর করবে না। এ ছাড়া স্ট্যাম্পের দামইবা আর কত! তাছাড়া অনেক স্ট্যাম্প একসঙ্গে কিনলে ডিসকাউন্টও পাওয়া যাবে। কী বলেন?

সর্বশেষ খবর