সোমবার, ৬ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

কানটুপির সঙ্গে একদিন

রাফিউজ্জামান সিফাত

কানটুপির সঙ্গে একদিন

শীতকালীন সাক্ষাৎকার পর্বে আমাদের আজকের বিশেষ অতিথি ‘কানটুপি’। বহু সাধনার পর কানটুপির সাক্ষাৎকার গ্রহণের সুযোগ পেয়েছি। দাঁতে দাঁত লাগা তীব্র শীতের সকালে তাই কাঁপতে কাঁপতে গুলিস্তান রওনা হলাম। গুলিস্তান পৌঁছামাত্র দেখা মিলল শীতের পোশাক ভ্যানের চারপাশে উপচে পড়া ভিড়। শীত মৌসুমে মাফলার, সোয়েটার, মোজা, কম্বল, ভাপাপিঠা, চিতই পিঠা, মুলা, খেজুরের রস আর সরিষা খেত ভিভিআইপি পদমর্যাদার সম্মান পায়। তাদের উষ্ণ সান্নিধ্য পেতে কাঁপন্ত মানুষ ধোঁয়া ওঠা গরম চায়ের কাপে চুমুকের মতোই অপেক্ষায় থাকে। কানটুপিকে দেখা যাচ্ছে একটি ভ্যানের কোনায় বেশ আয়েশি মেজাজে একটি ফুলহাতা বুক খোলা সোয়েটারের গায়ে হেলান দিয়ে বসে আছে। কয়েকজন উৎসাহী হাতে তুলে নেড়েচেড়ে দেখছে, দরদাম করছে। ভিড়ের মধ্যে কানটুপির সঙ্গে চোখাচোখি হতেই প্রশ্ন ছুড়ে দিলাম, ‘দিনকাল কেমন চলছে?’ কানটুপি মাথা উঁচিয়ে উত্তর দিল, ‘ব্যাপক ব্যস্ততায় আছি রে ভাই। সারাডা দিন মানুষের মাথায় বসে কান চেপে রাখতে হয়, পরিশ্রমের কাজ। ইদানীং আবার আমার নিজেরই মাথা গরম। বড়ভাইরে নিয়া ভেজালে আছি, উনি বহুত প্যারা দিচ্ছে।’

‘বড় ভাইটা কে?’

কানটুপি মাথা দুলিয়ে হতাশার স্বরে বলল, ‘মাংকি ক্যাপ। মুখ ঢেকে এরে ওরে ঠান্ডা পানি মারার ভয় দেখায়। ওর জন্য এলাকায় ইজ্জত রাখা মুশকিল হইয়া যাইতেছে’

‘বেচাবিক্রি কেমন?’

‘মন্দ না। বাজারে চাহিদা আছে। ছোট থেকে বড় সবাই কিনতেছে। বুড়াবুড়িদের কাছে চাহিদা বেশি। তবে ইয়ং জেনারেশনের আজকাল হুডির দিকে আগ্রহ বেশি। তা হোক, একই গোত্রীয়, কষ্ট নাই, কষ্ট অন্য জায়গায়।

‘কোন জায়গায়?’

‘দামে সাম্য নেই। একই জিনিস রাস্তার পাশে ভ্যানে এক দাম আবার বড় দোকানে সিল লাগাইলেই আরেক দাম! এইটা তো ঠিক না, কাম তো দুজনের একই, তাহলে এত বৈষম্য ক্যান?’

‘স্মরণীয় কোন স্মৃতি?’

‘বছরের প্রায় আট মাস তো ট্রাঙ্কের ভিতরেই পইড়া থাকি। ট্রাঙ্ক থেকে বের হয়ে আবার ট্রাঙ্কে ঢোকার আগ পর্যন্ত প্রতি মুহূর্তই স্মরণীয়। আমরা তো কেবল কানের ভিতরে বাতাসের যাওয়াই আটকাই না, আজেবাজে কথাও আটকাই। মানুষ যখন কনকনে শীতে নির্ভরতায় আমাদের হাতে তুলে নেয়, জীবনটা তখন সার্থক মনে হয়।’

‘কোনো দাবি দাওয়া আছে কি?’

‘নাহ, তেমন কিছু নেই। ট্রাঙ্ক থেইক্কা বের হইলেই খুশি। তবে আমাদের ভ্যানে বা দোকানে কোনাকাঞ্চিতে খুব অল্প জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়। বাজারে যেহেতু চাহিদা আছে, তাই কাস্টমারদের সহজে খুঁজে পেতে ভ্যানে বা দোকানে আমাদের জন্য আলাদা বিশেষ জায়গার দাবি জানাই।’

আড্ডা দিতে দিতে কখন যে দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, টেরই পাইনি। বাড়ছে ভিড়, চলছে বেচাকেনা,  জেঁকে বসেছে আরও শীত। ব্যাগ থেকে কানটুপিটা বের করে মাথায় ভালোমতো এঁটে আমি কুয়াশায় পা বাড়ালাম।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর