সোমবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

গরম গরম শীত

পরিবেশটা গরম রাখার জন্য আমরা গরম একটা খাবার খেতে পারি। আমি বললাম, কী খাবেন? চা? বড়ভাই বললেন- না। পেটিস। ‘হট’ পেটিস...

ইকবাল খন্দকার

গরম গরম শীত

আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

আমার এক ছোটভাই বলল, কী একটা শীত পড়েছে দেখেন তো! পড়েছে ভালো কথা, তাই বলে আমার ঝামেলার সময় পড়তে হবে? অতিরিক্ত শীতের কারণে তো আমি ডাক্তারের আদেশ-নিষেধ পর্যন্ত মানতে পারছি না। কী যে করি! আমি বললাম, এভাবে অর্ধেক অর্ধেক কথা বলতে হয় না রে পাগলা। কথা বললে পুরোটা বলবি, না বললে না বলবি। ছোটভাই এবার পুরোটাই বলল, আসলে হয়েছে কি, ডাক্তার আমাকে বলেছিল কানে মোবাইল লাগিয়ে কথা বললে নাকি কানের ক্ষতিও হতে পারে, ব্রেনের ক্ষতিও হতে পারে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ্ব হচ্ছে, মোবাইলটা টেবিলে রেখে কথা বলতে হবে। লাউড স্পিকারে। যখন শীত এতটা পড়েনি, তখন কিন্তু আমি ডাক্তারের কথা মেনে চলেছি। কিন্তু এখন এত বেশি শীত পড়েছে যে, এখন আর মানতে পারছি না। এখন ঠিকই মোবাইল কানে লাগিয়ে কথা বলি। আমি বললাম, সব ঠিক আছে। কিন্তু শীত পড়লেই মোবাইল কানে লাগিয়ে কেন কথা বলতে হবে? ছোটভাই বলল, কারণ কথা বললে মোবাইল গরম হয়। আর গরম মোবাইল কানে লাগিয়ে রাখলে আরাম পাওয়া যায়। শীতে কান যা ঠান্ডা হয়! আমি বললাম, তাহলে কি আমরা মোবাইলকে ডিজিটাল ‘কানটুপি’ খেতাব দিতে পারি? ছোটভাই কোনো জবাব না দিয়ে কান হাতাতে হাতাতে চলে গেল। আমার এক বন্ধু বলল, এই যে এত শীত পড়েছে, তবু কিন্তু আমার কাছে গরম লাগে। আমি বললাম, এত শীতের মধ্যে গরম লাগার কারণ কী? তুই আবার কাবাব-নানরুটির ব্যবসা দিসনি তো? না মানে কাবাব-নানরুটি বানালে সবসময় চুলার পাড়ে থাকতে হয় তো! গরম লাগতেই পারে। বন্ধু বলল, আরে না, সেই ধরনের কিছু না। আমার গরম লাগে বাড়িওয়ালার কারণে। নতুন বছর, এই উপলক্ষে সে বাড়ি ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে। বাড়তি ভাড়ার কথা যতবার চিন্তা করি, ততবারই শ্রীর ঘেমে যায়। তবে এখানেই শেষ না। বাড়িওয়ালা ভাড়ার জন্য আসছে, এই খবর যতবার শুনি ততবারই আমি একটা দৌড় দেই। হয় খাটের নিচে চলে যাই, না হয় সিঁড়ি বেয়ে নেমে অন্য কোনো দিকে। এই যে দৌড়াদৌড়ি, এই দৌড়াদৌড়ির কারণে সারাদিন শ্রীরের ঘাম কমই শুকায়। আমি বললাম, এক কাজ করতে পারিস। এখন তো মানুষের বেশি টাকা যাচ্ছে শীতের কাপড় কেনার পেছনে। যেহেতু বাড়িওয়ালার ভয়ে তোর গায়ে এমনিতেই ঘাম থাকে, অতএব তুই এক কাজ কর। শীতের কাপড় বা লেপ-কম্বল কেনার টাকাটা জমিয়ে বাড়িওয়ালাকে দিয়ে দে। বন্ধু বলল, তাহলে তো আরেক বিপদ। আমি যদি বাড়িওয়ালাকে টাকা মানে ভাড়া দিয়ে দিই, তাহলে তো সে আর আমাকে দৌড়ের ওপর রাখবে না। তখন আমি ঘেমে যাব না। মানে শীত লাগবে। তখন শীতের কাপড় কেনা জরুরি হয়ে যাবে। তখন টাকা পাব কই? আমি কোনো উত্তর দিলাম না। কারণ, আমার বোঝা হয়ে গেছে, সে মূলত চায় শ্রীরটা গরমই থাকুক। আমার এক বড়ভাই বললেন, কিছুদিন আগে এই যে ট্রাম্প একটা কাজ করল, এই এক কাজের জন্য কিন্তু সারা বিশ্ব উত্তপ্ত। তার মানে বুঝতেই পারছিস, শীতের মধ্যেও গরমের ব্যাপারটা আছে। আমি বললাম, কথা সত্য। তবে শুধু ট্রাম্পের কারণে না। আরও নানান কারণেই এই শীতের মধ্যেও গরমের উত্তাপ টের পাওয়া যায়। যেমন ধরেন রাজনৈতিক ব্যাপার, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি। কিছু লোক তো গরম কথা বলেই উত্তাপ ছড়ানোর চেষ্টা করে। এসব মিলিয়ে এই কনকনে শীতেও গরমের একটা আভাস আঁচ করা যায়। বড়ভাই বললেন, এত কিছু বুঝি না। আপাতত পরিবেশ্টা গরম রাখার জন্য আমরা গরম একটা খাবার খেতে পারি। আমি বললাম, কী খাবেন? চা? বড়ভাই বললেন- না। পেটিস। ‘হট’ পেটিস।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর