সোমবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

শীতে ঘাপলা

তোদের ভাবী অনেকবার বলেছে, রান্নাঘরের চুলা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছে, তবুও আমি গোসলে যাই নাই...

রাফিউজ্জামান সিফাত

শীতে ঘাপলা

মজনু ভাই কয়েক দিন যাবৎ টঙ্গের আড্ডায় আসছেন না। আগে কখনো এমন হয়নি! প্রতি সন্ধ্যায় মজনু ভাই টঙ্গের দোকানে এসে গলা ফাটিয়ে তিন কাপ চা নয় কাপ বানানোর অর্ডার দিয়ে দোকানের পেছনে চলে যান। সেখানে বসে কেরমবোর্ডের জমজমাট আসর। প্রতি সেটে তিনি জিতেন। জয়ের আনন্দে এলাকার সবাইকে সাইফুলের দোকানে লুচি চপ খাওয়ান। অথচ সেই মজনু ভাই শীত আসার পর  কেমন যেন বদলে গেলেন। ঘটনার অনুসন্ধানে মিজানকে দায়িত্ব দেওয়া হলো। মিজান গিয়ে মজনু ভাইয়ের জানালায় উঁকি মেরে এসে জানাল, ‘ভাইয়ে মশা মারে।’  বোঝাই যাচ্ছে, সে পুরো তথ্য দিচ্ছে না। সে চুপ করে, পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছে। এভাবে মিজানের বসার অর্থ এখন তার হাত-পা-ঘাড় মালিশ্ করে টিপে দিতে হবে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমাদের তাই করতে হলো। মজনু ভাইয়ের মশা মারার কাহিনি বোঝা দরকার। ঘাড় মালিশ্ শেষে মিজান বলতে শুরু করল, ‘ভাবীজানের সঙ্গে ভাইয়ের ঘাপলা চলতাছে। ভাবীজান ভাইরে ঘরে ঢুকতে দিতাছে না। রাইতের খাওনও অফ। ভাইয়ে স্টোর রুমে থাকে। স্টোর রুমে অনেক মশা। ভাইয়ে তাই মশা মারে।’ মশা মারার কাহিনি বোঝা গেল কিন্তু ভাবীজানের সঙ্গে ভাইয়ের ঘাপলা কী নিয়ে তা পরিষ্কার না। কিছুক্ষণ পর সে তড়িঘড়ি করে ফিরে এসে জানাল, ‘মজনু ভাই এইদিকেই আইতাছে।’ মজনু ভাই এলেন। সবাই ভাইকে ঘিরে ধরল, ‘ভাই, এতদিন কই ছিলেন? ছোটভাইদের এইভাবে ভুলে গেলেন!’ মজনু ভাই কোনো উত্তর না দিয়ে বিরস বদনে টঙ্গের বেঞ্চে বসে চা অর্ডার করলেন। চা আসলে তিনি চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে মাথা নাড়তে নাড়তে বললেন, ‘শীত আমার সর্বনাশ্ করে দিচ্ছে  রে...। শীত শুরু হবার পর থেকে ঠান্ডা পানির ভয়ে আর গোসলে যাই নাই। তোদের ভাবী অনেকবার বলছে, রান্নাঘরের চুলা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিছে, তবুও গোসলে যাই নাই। কিন্তু আজ আর পারলাম না। তোদের ভাবী বলছে, হয় গোসল করবা, নয়তো বাসা ছাড়বা।’ উৎসুক সবাই জানতে চাইল, ‘গোসল করলেন তাহলে?’

মজনু ভাই টঙ্গের বেঞ্চে চিৎ হয়ে শুয়ে বললেন, ‘এখন আমি কই? বাসায় না বাইরে?’ উত্তর বুঝতে পেরে আমরা একেকজন মজনু ভাইয়ের জন্য কম্বল-লেপকাঁথার ব্যবস্থা করতে ছুটলাম। শীত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভাইকে যে টঙ্গের দোকানেই থাকতে হচ্ছে!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর