সোমবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

সেই মেয়েটি

সৈয়দ আসাদুজ্জামান সুহান

সেই মেয়েটি

নারায়ণগঞ্জ যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসে চড়লাম। পাশের সিটে বসেছে এক তরুণী। মোবাইল ফোনে আভিজাত্য নিয়ে কথা বলছে। তার কথাগুলো ছিল এমন- প্রাইভেটকার নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বাসে করে বাসায় ফিরতে হচ্ছে। উফ্ফ কী অসহ্য রকম গরম, বাসে এসি নেই। কীভাবে যে মানুষ এইসব বাসে চড়ে! কিছুদূর যাওয়ার পর মেয়েটি আমার দিকে মায়াবী চোখে তাকিয়ে বলল, আপনি কি নারায়ণগঞ্জে থাকেন নাকি কোনো কাজে ওখানে যাচ্ছেন? আমি উত্তর দিলাম, আমি ঢাকায় থাকি, অফিসের কাজে নারায়ণগঞ্জে যাচ্ছি। তারপর জানাল, তার বাসা নারায়ণগঞ্জ এবং সে ঢাকায় একটা ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। আবারও প্রশ্ন করল, আপনি কিসে জব করেন? উত্তরে জানালাম, আমি নারায়ণগঞ্জে দুটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি পরিদর্শ্বনে যাচ্ছি। মেয়েটি তখন বেশ্ উচ্ছ্বাস প্রকাশ্ করে বলল, ও আচ্ছা! নারায়ণগঞ্জে আমাদের দুটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি আছে। তারপর বিভিন্ন বিষয়ে অনেক গল্প হলো। এক সময় আমার প্রতি তার বেশ্ দরদ উথলে উঠেছে। আমাকে বলছে, ইশ্ ভাইয়া, আপনার কত কষ্ট করতে হয়। আপনি অফিস থেকে একটা গাড়ি পেলে যাতায়াত করতে কত সুবিধা হতো। আমি তখন কাচুমাচু মুখে বললাম, এটা অবশ্য ঠিক বলেছেন। মেয়েটির কথাবার্তায় আমি বেশ্ সম্মোহিত হয়ে গিয়েছিলাম। আড্ডা দিতে দিতে আমরা নারায়ণগঞ্জ এসে পৌঁছলাম। তখন মনে হচ্ছিল, নারায়ণগঞ্জের রাস্তা আরও দীর্ঘ হলে মন্দ ছিল না। বিদায় জানিয়ে চলে যাব, এমন সময় খুব বিনয়ের সঙ্গে বলল, ভাইয়া, আপনার মোবাইল ফোনটা কি একটু দেওয়া যাবে? বাসায় একটা জরুরি কল দেওয়া দরকার কিন্তু আমার মোবাইলের চার্জ শেষ। আমি তখন পকেট থেকে মোবাইল ফোন বের করে দাঁত কেলিয়ে হেসে বললাম, কোনো সমস্যা নেই! মেয়েটি ধন্যবাদ দিয়ে আমার মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে নাম্বার ডায়াল করতে করতেই সামনের মার্কেটের একটা গলির সামনে দাঁড়াল। তখনো আমার নজরের মধ্যেই ছিল। সে কথা বলতে বলতে গলির আরও একটু ভিতরে ঢুকে গেল। তারপর একেবারে উধাও। তন্ন তন্ন করে খুঁজেও মেয়েটিকে কোথাও পেলাম না। আজো তাকে ভুলতে পারিনি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর