সোমবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

পুরনো মোবাইলনামা

শফিক শাহরিয়ার

পুরনো মোবাইলনামা

পড়াশোনার পাট চুকিয়ে টিউশনির জমানো টাকায় প্রথম স্মার্টফোন কিনলাম। এতদিন সাধারণ মোবাইল ফোন ব্যবহার করতাম। চাকরি না থাকলেও টিউশনির টাকায় স্বাচ্ছন্দ্যে দিন চলে যায়। বউ নেই, একাই একশ থেকে দুই কম। আগে কোনোদিন স্মার্টফোনের সঙ্গে পরিচয় হয়নি। আমি আবার একটু আলাদা ধরনের। মহল্লার কেউ কেউ আমাকে আবার নকল করে। আমি তাদের স্বাগত জানাই। ছোটবেলা থেকেই সাধারণ ফোনের ভক্ত ছিলাম। দিন দিন এই ফোনের প্রতি মায়া-মমতা বাড়তেই লাগল।

আমার স্মার্টফোনের বয়স সবেমাত্র চার-পাঁচ বছর। বয়সের ভারে অনেকেই তাকে হিংসা করে। তাদের যুক্তি, একটা স্মার্টফোন কি এতদিন চলে? নতুন ফোন কিনলেই পারি। তাদের বলি, পুরনো সাধারণ ফোনের মর্ম সবাই বোঝে না। বুঝতে সময় লাগে। চার্জ বেশি না থাকলেও এই সাধারণ মোবাইল ফোনের অবদান কখনো ভুলতে পারব না। চার্জার সব সময় কাছে রাখি। যেখানে সুযোগ পাই, সেখানেই ফোন চার্জের জন্য বরাদ্দ থাকে। আমার খুব প্রয়োজন আর শত স্মৃতির মোবাইল। যে ফোন যত বেশি হাত থেকে পড়ে সে ফোন তত বেশি শক্ত হয়। এতদিনে সেটা আমি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। ফোনটা হাত থেকে কতবার পড়েছে তার কোনো হিসাব নেই। প্রতিবারই অক্ষত অবস্থায় ফিরে পাই। কিন্তু সেদিন যেভাবে হাত থেকে পড়েছে, তাতে আর রেহাই পাইনি। শিগগিরই নতুন মোবাইল কিনতে হবে।

মহল্লার সুপরিচিত এক দুলাভাই। তার সঙ্গে গলায় গলায় ভাব। সেই সুবাদে নানা সুযোগ-সুবিধা পাই।  আমাকে যে কোনো বিপদ থেকে উদ্ধার করতে তিনি প্রথমে হাজির। দুলাভাই একটি শো-রুমে কাজ করেন। টিভি, ফ্রিজ ও মোবাইল সহজ মূল্যে বিক্রি করেন। কিস্তি সিস্টেম চালু আছে। এক দিন তিনি বললেন, পুরনো মোবাইল বদলে নতুন মোবাইল নাও। আমিও নিলাম।

নতুন স্মার্টফোনে দিনকাল ভালোই যাচ্ছে। দিনকাল ভালো যাচ্ছে মানে, মোবাইলফোনের দিনকাল ভালো যাচ্ছে। আমার না। আমি এখন দুলাভাইয়ের দোকানে দুই বেলা ঝাড়ু দেওয়ার কাজ করে মোবাইল কেনার দাম মেটানোর চেষ্টা করছি।               - কনইল, নওগাঁ

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর