সোমবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

মানুষ চেনা দায়

ইকবাল খন্দকার

মানুষ চেনা দায়

আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

আমি কম্বলটা টান মারলাম। দেখি সে ঘুমাচ্ছে না। কম্বলের ভিতরে মাথা ঢুকিয়ে একটা মেয়ের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলছে। আমি জমিয়ে ঝাড়ি দিতেই সে বলে উঠল, আমি আসলে স্বপ্নে কথা বলছি...

 

মানুষ চেনা দায় বলেন আর দুষ্কর বলেন, ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে কথা ওই একটাই। মোটকথা হচ্ছে, মানুষ চেনা যায় না। আমার এক বড় ভাই দুদিন পরপরই অমুক-তমুকের কাছে হাত পাতেন। আর যখন হাত পাতেন, তখন তার চেহারাটা এমন হয়ে যায়, যেন জগতের সবচেয়ে হতদরিদ্র মানুষটি তিনি। তার আপন বলতে কেউ নেই, সাহায্য করার মতো কেউ নেই। যা-ই হোক, তার এহেন চেহারা দেখে দয়াপরবশ হয়ে অনেকেই তাকে আর্থিক সাহায্য-সহযোগিতা করে। আর এরপরই ঘটে আজব ঘটনা। মানে টাকাটা ধার নেওয়ার পর তিনি বিপদ থেকে যেই উদ্ধার পেয়ে যান, তার চেহারা একেবারেই পাল্টে যায়। আর এতটাই পাল্টে যায় যে, তাকে চেনা দুষ্কর হয়ে পড়ে। এক দিন তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, এই যে আপনি চেহারা পাল্টে ফেলেন, এই যে আপনাকে চেনা যায় না, এটা কেন? আর এটা কি উচিত? বড় ভাই বললেন, কেন উচিত নয়? অবশ্যই উচিত। কারণ, আমি মোটিভেশনাল বইয়ে পড়েছি, নিজেকে বদলে ফেলতে হবে। আমি এই মোটিভেশনটা মন-প্রাণ দিয়ে বিশ্বাস করি এবং মেনে চলার চেষ্টা করি। তাই তো টাকা ধার দেওয়ার পর কেউ আমাকে চিনতে পারে না। আমার এক ছোট ভাই বলল, মনটা খুব খারাপ। ক্লাসক্যাপ্টেন হওয়ার জন্য ভোটাভুটিতে দাঁড়িয়েছিলাম। বাপরে বাপ, বিশ^াস করবেন না, পুরো ক্লাস আমাকে মাথায় নিয়ে নেচেছে। আমি নিশ্চিত ছিলাম, পাস আমি করবই। আর এই খুশিতে সবার পেছনে হাজার হাজার টাকা খরচ করেছি। আমি যা দিয়েছি, তারা তাই খেয়েছে। তারা যা খেতে চেয়েছে, আমি তাই খাইয়েছি। কিন্তু ফলাফল প্রকাশ হওয়ার পর দেখি আমি বিপুল ব্যবধানে ফেল করেছি। আমার তো ভীষণ রাগ হলো। সবার মুখোমুখি হলাম। জিজ্ঞাসা করলাম কেন আমাকে ভোট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েও দেয়নি। কেন আজকের এই বদলে যাওয়া চেহারা। তাদের একজন মিনমিনিয়ে বলল, মানুষ বেঁচে থাকলে বদলায়, কারণে-অকারণে বদলায়। আমার এক প্রতিবেশী বললেন, ভাইরে, দিন যতই যাচ্ছে, ততই কঠিন হয়ে যাচ্ছে মানুষ চেনা। মানুষের উপকার করতে যাবেন? ব্যস, আপনাকে বাড়তি খরচের ঝামেলা পোহাতেই হবে। আমি বললাম, উপকার করলে ঝামেলা হতেই পারে। কিন্তু বাড়তি খরচের ব্যাপারটা ঠিক বুঝলাম না। প্রতিবেশী বললেন, না বোঝার কী আছে। আমি একটা ব্যাচেলর ছেলেকে বাসা ভাড়া দিয়েছিলাম। যদিও ব্যাচেলরদের কাছে ভাড়া দিই না। নিতান্তই ছেলেটার থাকার জায়গা ছিল না বলে মানবিক কারণে দিয়েছিলাম। সে এখন আমার মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে গেছে। এতে নানাদিক থেকে আমার খরচ বেড়ে গেছে। আজকাল বিয়ের খরচ কি কম, আপনিই বলেন! বেকার ছেলে তো, তাই বিয়ের যাবতীয় খরচা শ্বশুরের ওপর। আর শ^শুরটা কিন্তু আমি।

আমার এক ভাবী বললেন, মানুষ চেনা কত কঠিন, সেটা তোমার ভাইকে না দেখলে বুঝতাম না। বিশ্বাসও করতাম না। আমি বললাম, কী হয়েছে? ভাবী বললেন, কী হয়নি, তাই বল। খুব শীত, খুব শীত, এরকম বলে বলে তোমার ভাই গত কদিন ধরেই করছে কী, কম্বলের ভিতরে মাথা ঢুকিয়ে ঘুমাচ্ছে। গতকাল কেন যেন সন্দেহ হলো। আমি কম্বলটা টান মারলাম। দেখি সে ঘুমাচ্ছে না। কম্বলের ভিতরে মাথা ঢুকিয়ে একটা মেয়ের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলছে। আমি জমিয়ে ঝাড়ি দিতেই সে বলে উঠল, আমি আসলে স্বপ্নে কথা বলছি। এই যে দেখ আমি ঘুমিয়ে আছি। বলেই সে নাক ডাকানো শুরু করল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর