সোমবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

মজনু বেস্টসেলার লেখক হতে চেয়েছিলেন

রাফিউজ্জামান সিফাত

মজনু বেস্টসেলার লেখক হতে চেয়েছিলেন

মজনু ভাইয়ের খুব শখ তিনি বেস্টসেলার লেখক হবেন। বইমেলার মাঠে ছেঁড়া স্যান্ডেল পায়ে, খাদি পাঞ্জাবি আর কালো শাল জড়িয়ে যতটা সম্ভব উদাস মুখে ঘুরে বেড়াবেন। পাঠকরা মজনু ভাইকে দেখে পাগলের মতো চিৎকার করে ছুটে এসে বলবে, ‘স্যার, আমি আপনার লেখার খুব বড় ভক্ত।’ তারপর মজনু ভাইয়ের বইটা এগিয়ে ধরবে, তিনি পাঞ্জাবির পকেট হাতড়িয়েও কলম খুঁজে পাবেন না। তখন অতি সুন্দরী  কেউ সাদা জমিনে লাল পেড়ে শাড়ি আর খোঁপায় বেলি ফুল গুঁজে কলম এগিয়ে দিয়ে বলবে, ‘অটোগ্রাফ প্লিজ অটোগ্রাফ শেষে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে সেলফি তুলে ফেসবুকে আপলোড করে ক্যাপশনে লিখবে, ‘উফ, প্রিয় লেখকের দেখা পেয়ে জীবনটা ধন্য।’ প্রতি রাতে মজনু ভাই এসব স্বপ্ন দেখতে চান, কিন্তু স্বপ্নে সব আসে না। তাই তিনি কল্পনা করেন। মজনু ভাই মনে মনে পণ করেন, যেভাবেই হোক তাকে বেস্টসেলার লেখক হতে হবে।

ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে মজনু ভাই লেখক হওয়ার যাবতীয় প্রস্তুতি নিতে থাকেন। নিউমার্কেটে বহু দোকান ঘুরে ঘুরে তিনি খাদি পাঞ্জাবি আর কালো শাল কিনেন। সঙ্গে স্যান্ডেল (সেই নতুন স্যান্ডেল আবার নিজেই ছিঁড়েন)। আরও কিনেন বাহারি রঙের বলপেন। বাসায় ফিরে সারাদিন তিনি সাদা কাগজে ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে অটোগ্রাফ প্র্যাকটিস করেন। ফেসওয়াসে মুখে ধুয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভক্তদের সঙ্গে ছবি তোলার অভিনয় করেন। ইচ্ছাকৃতভাবে রাত জেগে চোখের নিচে তিনি কালি ফেলে দিয়েছেন। দাড়ি গোঁফে তার গাল-মুখ চুলকায়। চোখের নিচে কালি না থাকলে লেখক ভাবটাই আসে না! মজনু ভাই প্রবল ভাব নিয়ে চলেন। কেউ ডাকলে শুনেনও না। শোনার ভান করে দূর আকাশের দিকে চেয়ে থাকেন কারণ  লেখকরা উদাসীন হলে হিট বেশি হয়। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় এসে মজনু ভাই লক্ষ্য করেন লেখক হওয়ার মিশনে তিনি তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে বইয়ের নাম ও প্রচ্ছদ তৈরি করে রাতভর প্রচ্ছদের ছবিতে বন্ধু তালিকার সবাইকে গণহারে ট্যাগ করে করে তিনি একের পর এক পোস্ট দেন। মানুষজন বিরক্ত হয়ে কমেন্টে গালাগাল দেয়। মজনু ভাইকে আনফ্রেন্ড করে দিলে মজনু ভাই আপন মনে হাসেন, আজকাল কারও ভালো কেউ দেখতে পারে না! অনলাইন-অফলাইনে বহু প্রচারণা চালান, খোঁজেন ভক্তদের। বেস্টসেলার লেখক হওয়ার বাসনায় মজনু ভাই সবকিছু করেছেন কেবল বই লেখা বাদে! 

সর্বশেষ খবর