সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

রিভিউ তেলেসমাতি

রাফিউজ্জামান সিফাত

রাফিউজ্জামান সিফাত

রিভিউ তেলেসমাতি

মজনু ভাইকে তার হবু শ্বশুর মোটেও পছন্দ করেন না। শ্বশুর সাহেবের ধারণা মজনু ভাইয়ের মতো এমন ভবঘুরে আর দ্বিতীয়টি নেই। প্রেমিকার বাড়ির সামনের রাস্তা থেকে মজনু ভাইকে কতবার দৌড়ানি খেতে হয়েছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। মজনু ভাই ভয়ে আর হবু শ্বশুরের মুখোমুখি হন না। সেই অম্ল সম্পর্ক এক দিন মধু হয়ে গেল এক আশ্চর্য জাদুর পরশে। কাহিনি বলছি, শুনুন।

মজনু ভাইয়ের হবু শ্বশুর একজন পাতি কবি (স্বঘোষিত)। এবারের বইমেলায় তার একটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে, বইয়ের নাম ‘সখী, পৃথিবী গোল’। বই নিয়ে শ্বশুর সাহেব খুব উত্তেজিত। মেলা প্রাঙ্গণে প্রতিদিন গেট খোলার আগে তিনি উপস্থিত হন। বের হন সবার শেষে। রাস্তাঘাটে যাকে পান বগলদাবা করে মেলার ক্যান্টিনে নিয়ে আগে ভরপেট নাস্তা করান। তারপর স্টলে নিয়ে নিজের পকেটের পয়সায় কবিতার বই কিনে দেন। এমনকি বাড়ি যাওয়ার ভাড়া পর্যন্ত সঙ্গে দিয়ে দেন। শর্ত একটাই, বই পড়ে ফেসবুকে একটা রিভিউ দিতে হবে। সবাই খুব আগ্রহ দেখিয়ে বই বাড়ি নিয়ে যায়। তারপর ড্রয়িংরুমে সাজিয়ে রাখে। ড্রয়িংরুমে কবিতার বই সাজিয়ে রাখাটা নাকি আজকাল ফ্যাশন। রিভিউ লিখা তো দূরের কথা, কেউ বই-ই পড়ে না। শ্বশুর সাহেব তবুও চেষ্টা থামান না। প্রতি রাতে ফেসবুক লাইভে বই থেকে কবিতা আবৃত্তি করেন এবং যথারীতি কেউ শুনে না। একটু পর পর তিনি ফেসবুক নোটিফিকেশন চেক করেন। নাহ, কেউ রিভিউ দেয় না। ভগ্ন হৃদয়ে উদাস নয়নে তিনি আবারও কবিতা লিখতে চেষ্টা করেন। তবে কবিতার ক-ও হয় না। আচমকা এক দুপুরে শ্বশুর সাহেবের ফেসবুক নোটিফিকেশন রিং বেজে ওঠে। কেউ একজন তাকে ট্যাগ করে ‘সখী, পৃথিবী গোল’ কবিতার বইয়ের সুবিশাল রিভিউ লিখেছে। রিভিউতে লেখা, ‘বইখানা কেবল বাংলা সাহিত্যে নয়, পুরো বিশ্ব সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ। প্রতিটি কবিতা যেন একেকটি কামানের গোলা। সেই গোলা ছুটে যায় আক্রোশে আঁচড়ে পড়ে গোলাপ সুভাসে। এত উঁচু স্তরের সাহিত্য এর আগে বাংলা ভাষায় লেখা হয়নি। ভবিষ্যতে হবে এমন সম্ভাবনাও ক্ষীণ। শুরুর দিকে এই বইয়ের গুরুত্ব কেউ ধরতে পারছে না। তবে সবাই এক দিন টের পাবে, তখন হুমড়ি খেয়ে সাহিত্যপ্রেমীরা এই বই কিনবে, পড়বে, মুগ্ধ হবে।’ এমন মারদাঙ্গা রিভিউ পেয়ে শ্বশুর সাহেব আনন্দে আটখানা। রিভিউদাতার নামের জায়গায় তিনি দেখতে পান মজনু ভাইয়ের নাম। শ্বশুর সাহেব রাগতে গিয়েও রাগতে পারেন না। মজনু ভাই একমাত্র ব্যক্তি তিনি বইটার যথার্থ মূল্যায়ন করতে পেরেছেন। তিনি ছলছল চোখে মজনু ভাইকে মেসেজ পাঠিয়ে সাক্ষাৎ কামনা করেন। দুপুরে একসঙ্গে খাবার আমন্ত্রণ জানান। যে বাসার সামনে মজনু ভাইকে সকাল-বিকাল দৌড়ানি দেওয়া হতো সেই বাসায়ই আজ তিনি বিশেষভাবে আমন্ত্রিত। বইমেলার মৌসুমে রিভিউয়ের চেয়ে উপকারী বন্ধু আর নেই!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর