সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

বই চোর

এক তখন আমি অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। এক বন্ধুর বাসায় বেড়াতে গিয়ে দেখি পড়ার টেবিলে হুমায়ূন আহমেদের এলেবেলে বইটি। রুম থেকে বের হওয়ার সময় আমিও যত্ন করে বইটি আমার জ্যাকেটের ভিতর ঢুকিয়ে দিই। তারপর ড্রয়িংরুমে বসে আধা ঘণ্টা সময় আড্ডা দিয়ে বিদায় নিয়ে চলে আসি। সেদিন রাতেই ওই বন্ধুর বড় ভাই আমাদের বাসায় এসে হাজির। আমাকে বইয়ের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করতেই আমি যেন আকাশ থেকে মাটিতে পড়লাম। তবুও তিনি  আমাকে বইটি ফেরত দিতে চাপ দিচ্ছেন। একপর্যায়ে   বললেন, যদি তুমি ওই বইটা ফেরত দাও, আমি তোমাকে এখনই তিন গোয়েন্দা সিরিজের দুইটি বই এনে  দেব। শেষ পর্যন্ত তিন গোয়েন্দা সিরিজের দুইটি বই পাওয়ার লোভে ওই বইটা ফেরত দিলাম। তবে ফেরত দেওয়ার আগে ভালোমতো চেক করে দেখি ওই বইয়ের ভিতরে লুকিয়ে আছে ভাইয়ার একটা প্রেমপত্র। ভাগ্যিস, তখন প্রেমপত্রটা রেখে দিয়ে ছিলাম। তাই অনাগত বিপদ থেকে প্রেমপত্রটা রক্ষাকবজের কাজ করেছিল।

 

দুই এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে আমার আম্মুকে নিয়ে নানার বাড়িতে বেড়াতে গেলাম। তখন বেশকিছু গল্পের বই ব্যাগে ভরে নিয়ে গিয়ে ছিলাম। আশপাশের যারাই আসতেন, আমার বইগুলো দেখে ধার চাইতেন। আমিও হাসিমুখে দিয়ে দিতাম। তবে হ্যাঁ, তাদের কাছ থেকেও নতুন কোনো বই পড়ার জন্য ধার নিয়ে আসতাম। এভাবে পাঁচ-ছয়জনের কাছ থেকে দশ- বারোটা বই সংগ্রহ করে নিলাম। নানার বাড়ি থেকে ফিরে আসার আগের দিন আমার সবকটি বই ফেরত নিয়ে আসি। আমি ফেরত দেওয়ার সময় বলি, বইয়ের শেষাংশে কিছু বাকি আছে। আজকে রাতের মধ্যে বইটা পড়ে শেষ করে টেবিলের ওপর রেখে যাব। আগামীকাল এসে নিয়ে যাবেন। আমি পরের দিন সকালে সব বই বেঁধে চম্পট দিই।  তারপর টানা দুই বছর নানার বাড়িতে যাইনি।

 

লেখা : সৈয়দ আসাদুজ্জামান সুহান

মালিবাগ, ঢাকা

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর