সোমবার, ৯ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

কেঁচো খুঁড়তে টাকার বস্তা

ছোটভাই এবার অবাক হলো, কেন? বরাক বাঁশের দাম বাড়বে কেন? আমি বললাম, কেন আবার! আগেকার দিনে মানুষ বাঁশের গায়ে ছিদ্র করে সেখানে টাকা জমাতো না? এখন থেকে আবার সেই অবস্থায় ফিরে যাবে। তো এখন যেহেতু মানুষের টাকা বেশি, তাই বরাক বাঁশই লাগবে...

ইকবাল খন্দকার

কেঁচো খুঁড়তে টাকার বস্তা

আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

আমার এক বন্ধুর মন প্রচন্ড খারাপ। পারলে কেঁদে ফেলে। জিজ্ঞেস করলাম কী হয়েছে। সে মাঝারি সাইজের একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, আর বলিস না। মানুষকে বিশ্বাস করা কঠিন। মুখে বলে একটা, মনে মনে চিন্তা করে আরেকটা। আমি বললাম এভাবে শিরোনাম না বলে বিস্তারিত বল। বন্ধু বিস্তারিত বলল, আমার এক বড়ভাইয়ের কাছে টাকা চেয়েছিলাম। ধার। কিন্তু বড়ভাই এমনভাবে গলা শুকালো, মনে হলো তার গলায় সাহারা মরুভূমি ভর করেছে। আমি বললাম, একজন মানুষের হাতে টাকা না-ও থাকতে পারে। এই অবস্থায় যদি তার কাছে টাকা ধার চাওয়া হয়, সে কি গলা শুকাবে না? শুকানো উচিত না? বন্ধু বলল, আন্দাজে কথা বলিস না তো! তুই কীভাবে জানিস তার কাছে টাকা নেই? টাকা না থাকলে সে ইঁদুর মারার বিষ কিনবে কেন? আমি বন্ধুর কথা বুঝতে না পেরে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলাম। তারপর অনুরোধ করলাম ইঁদুর মারার বিষের রহস্যটা একটু খোলাসা করতে। বন্ধু খোলাসা করল, হয়েছে কী, বড়ভাই আমাকে টাকা ধার দেয়নি বা গলা শুকিয়েছে এই কারণে না যে, তার কাছে টাকা নেই। তার বাসার আলমারি ভর্তি টাকা। আর এই টাকার খোঁজ আর কেউ না পেলেও ইঁদুররা পেয়েছে। এরা একাধিক বান্ডিল কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলেছে। এরপরই সে তার বাসার জন্য প্রায় হাজার টাকার ইঁদুরের ওষুধ কিনেছে। এবার বোঝ, বাসায় কী পরিমাণ টাকা থাকলে হাজার টাকার ইঁদুরের ওষুধ কিনতে পারে। একদিন ছোটভাইকে বললাম, আমার ধারণা দেশে বরাক বাঁশের দাম বাড়তে পারে। ছোটভাই অবাক হলো, কেন? বরাক বাঁশের দাম বাড়বে কেন? আমি বললাম, কেন আবার! আগেকার দিনে মানুষ বাঁশের গায়ে ছিদ্র করে সেখানে টাকা জমাতো না? এখন থেকে আবার সেই অবস্থায় ফিরে যাবে। তো এখন যেহেতু মানুষের টাকা বেশি, তাই বরাক বাঁশই লাগবে। বরাক বাঁশ অন্য যেকোনো বাঁশের তুলনায় অনেক বেশি মোটা কি না! আমার এক বড়ভাই বললেন, আজকাল যেভাবে মানুষের বাসায় টাকা পাওয়া যাচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে ছিনতাই কমে যাবে। ছিনতাইকারীরা পেশা বদল করে ফেলবে। আমি বললাম, বুঝলাম না। একটু বুঝিয়ে বলেন। বড়ভাই বললেন, না মানে ছিনতাইকারীরা এখন আর রাস্তাঘাটে ওতপেতে থাকবে না ছিনতাই করার জন্য। কারণ, টাকা-পয়সা মানুষের বাড়িতে থাকে। পকেটে না। তো পেশা বদল করে ডাকাত দল গঠন করবে। মানে বাড়িতে বাড়িতে অ্যাটাক করবে, টাকার বস্তা নিয়ে ফিরবে। আমার এক চাচা বললেন, আজকাল কাউরে ভিক্ষা দিতেও ভয় লাগে। কারণ, বলা তো যায় না, দরিদ্রের বেশে কে আসলে ধনী! আমি বললাম, দরিদ্র চেনা যায় না, এটা একটা কথা হলো? কাপড়-চোপড় দেখলেই তো চেনা যায়। চাচা বললেন, জি না। চেনা যায় না। কত লোক যে আজকাল ছদ্মবেশে ঘোরে! ঘরে টাকার বস্তা আছে এটা বলে বেড়াবে নাকি? তাই হয়তো ছদ্মবেশ। এ জন্য সিদ্ধান্ত নিছি, কেউ ভিক্ষা চাইলেই বলমু, চলো, তোমার বাড়িতে যাই। যদি তোমার বাড়িতে তল্লাশি চালায়া টাকার বস্তা পাওয়া না যায়, তা হলেই কেবল ধইরা নিমু তুমি দরিদ্র এবং তোমারে টাকা দেওয়া হইবো। চাচার কথা শুনে আমার কেন জানি একটা সিনেমার নাম মনে পড়ে গেল। নামটা হচ্ছে, ‘কোটি টাকার ফকির’।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর