সোমবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

দাম নিয়ে টানাটানি

ইকবাল খন্দকার

দাম নিয়ে টানাটানি

♦ ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ ♦ কার্টুন : কাওছার মাহমুদ

আমার এক প্রতিবেশী বারান্দায় দাঁড়িয়ে ধ্যান করছিলেন। আমি তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম, কী হে, মাছরাঙা হয়ে গেলেন নাকি? প্রতিবেশী আমার কথার অর্থ বুঝতে না পেরে প্রশ্ন ছুড়লেন, মাছরাঙা হয়ে গেলাম মানে? আমি মৃদু আওয়াজসম্পন্ন হাসি দিয়ে বললাম, না মানে, মাছরাঙা মাছ ধরার জন্য ধ্যান করে না? আপনিও ধ্যান করে আছেন। এই জন্য ভাবলাম... প্রতিবেশী আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, আমি মাছরাঙার মতো মাছ খাওয়ার এত কাঙাল না যে, ধ্যান করে বসে থাকব। আমার ফ্রিজে যথেষ্ট মাছ আছে। তাও বেশ বড়সড়। যে মাছ খাওয়ার কথা মাছরাঙারা কল্পনাও করতে পারে না। কী মাছ জানেন? মাছের রাজা। আমি এবার আগের চেয়ে জোর আওয়াজে হাসি দিয়ে বললাম, আপনার মতো ‘কিপ্পন’ মানুষের ফ্রিজে মাছের রাজা মানে ইলিশ থাকবে, এটা তো কল্পনাই করা যায় না। প্রতিবেশী এবার দৌড়ে এসে আমাকে প্রায় চ্যাংদোলা করে তার ঘরে নিয়ে গেলেন। তারপর ফ্রিজের দরজা খুলে দিতেই ইলিশের স্তূপ দেখে আমি তো রীতিমতো তাজ্জব। এত ইলিশ! প্রতিবেশী বললেন, দাম কমে গেলে এ অবস্থাই হয়। আমি বললাম, তাহলে কম দামে পেয়ে এভাবে স্টক করেছেন। ভালো, খুবই ভালো। আরও ভালো হয়, যদি আমার কাছে কিছু বিক্রি করে দেন। প্রতিবেশী বললেন, কোনো সমস্যা নেই। প্রতি পিস এক হাজার টাকা। আমার এবার আকাশ থেকে পড়ার জোগাড়, বলেন কী! এখনই বললেন কম দাম আর এখনই বলছেন প্রতি পিস এক হাজার? প্রতিবেশী বললেন, কম দামে আমি কিনেছি। কিন্তু আপনার জন্য তো আর কম দাম না। কেন কম দাম না বলি। এই ইলিশগুলো ফ্রিজে রাখতে আমার কারেন্ট খরচ হয়নি? একদিকে কারেন্ট খরচ, অন্যদিকে ফ্রিজ ভর্তি ইলিশের গন্ধে ফ্রিজে রাখা অন্যান্য খাবারের বারোটা বেজে যাওয়া, বুঝতেই পারছেন, আমি কতদিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। অতএব দাম যা চাইলাম, তাই দিতে হবে। আমি আর কথা না বাড়িয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেলাম। নামতে নামতে চিন্তা করলাম, ঠিক এভাবেই সস্তা জিনিসের দামও বেড়ে যায়। অর্থাৎ যে জিনিস পাইকাররা কেনে এক টাকায়, পাবলিক সেটা কেনে বা কিনতে বাধ্য হয় দশ টাকায়। কারণ হিসেবে তারা আমার এই প্রতিবেশীর মতোই হরেক অজুহাত দাঁড় করায়। আচ্ছা ভালো কথা, বয়ান কি বেশি লম্বা হয়ে গেল? হয় হয়েছে। আজকাল মাঠে বক্তৃতা দেওয়া হচ্ছে না। এখানে না হয় একটু লম্বা বক্তৃতাই দিয়ে ফেললাম। ও, যা বলছিলাম। সাধারণ ক্রেতা যে দামেই ইলিশ কেনেন না কেন, এটাই সত্য যে, ইলিশের দাম এখন কম। আর ইলিশের দাম যে এখন কম, এটা যদি ইলিশ সম্প্রদায় বুঝত আর ইলিশদের যদি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থাকত, তাহলে নিশ্চিত এরা স্ট্যাটাস দিয়ে বসত, ‘আমাদের দাম কমে গেছে রে ভাই। মানসম্মান আর থাকল না।’ তবে ইলিশের স্ট্যাটাস দেওয়ার ক্ষমতা না থাকলেও আমাদের মেসির কিন্তু স্ট্যাটাস দেওয়ার ক্ষমতা আছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, তাকে নিয়ে বিশেষ করে তার দরদাম নিয়ে বেশি পরিমাণে টানাটানি শুরু হয়ে যাওয়ায় তিনি শান্তিমতো স্ট্যাটাসটা পর্যন্ত দিতে পারছেন না। যদিও মেসি ‘টানাটানি’তে অভ্যস্ত। যেহেতু খেলার মাঠে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়রা তার জার্সি এবং হাফপ্যান্ট ধরে টানাটানি করে। যা-ই হোক, যে টানাটানি মেসিকে নিয়ে হচ্ছে, আশা করা যায় সেটা মেসি নিজেই সামলাতে পারবেন। আমরা বরং অন্য টানাটানির দিকে মনোযোগ দিই।

আমার এক ছোটভাই কদিন আগে বেশ দামি একটা মোবাইল কিনল। এতটাই দামি যে, এটা নিয়ে পাড়ার চায়ের স্টলে আলাপ আলোচনা পর্যন্ত শুরু হয়ে গিয়েছিল। তো দুদিন আগে ওই ছোটভাইয়ের সঙ্গে দেখা। দেখলাম মন খারাপ। জিজ্ঞেস করলাম, কী হয়েছে?

বলল, মোবাইলটার দাম নিয়ে কদিন পাড়ায় খুব টানাটানি হয়েছিল। টানাটানি বলতে অনেকেই বলছিল বিক্রি করে দেওয়ার জন্য। আমি বিক্রি করতে রাজি হচ্ছিলাম না। শেষে টানাটানির মধ্যেই পড়ে গেলাম। আমি বললাম, টানাটানির মধ্যে পড়ে গেলি মানে? ছোটভাই বলল, না, মানে মোবাইলটার উপর সবার নজর পড়ে গিয়েছিল তো! সেই তালিকায় জনৈক ছিনতাইকারীও ছিল। ব্যস, ফুটপাথ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ফেসবুক চালানোর সময় খপ করে ধরে হেঁচকা ‘টান’ দিয়ে পগাড়পার।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর