সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

অনলাইনে কত কাহিনি

মানে আগে যখন তোর ভাবি আমার সঙ্গে সামনাসামনি ঝগড়া করত, তখন হাতের কাছে যা পেত তাই ছুড়ে মারত। জুম ঝগড়ায় অন্তত এটাওটা ছুড়ে মারার অপশনটা নেই...

ইকবাল খন্দকার

অনলাইনে কত কাহিনি

♦ ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ ♦ কার্টুন : কাওছার মাহমুদ

আমার এক বড়ভাই দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, আয়-রোজগার কমে গেছে। তবে আয় কমা নিয়ে এতটা চিন্তা করতাম না, যদি ব্যয়ও কমত। ব্যয় তো কমেইনি, বরং বেড়েছে। ইন্টারনেটের বিল দিতে দিতেই আমার অবস্থা কেরোসিন। আমি বললাম, সব কিছুই এখন অনলাইননির্ভর হয়ে গেছে তো! ইন্টারনেট খরচ তো বাড়বেই। কিন্তু আমি যতদূর জানি, আপনাদের বাচ্চাকে এখনো স্কুলে ভর্তি করাননি। তার মানে অনলাইনে ক্লাস করার কোনো ব্যাপার নেই। তাহলে ইন্টারনেট বিল দিতে দিতে আপনার অবস্থা কেন কেরোসিন হবে? বড়ভাই বললেন, বললে তো বিশ্বাস করবি না। তবু বলি। তোর ভাবি আগে আমার সঙ্গে সামনাসামনি ঝগড়া করত। আর এখন করে অনলাইনে। মানে ‘জুম ঝগড়া’। বাপের বাড়িতে আছে তো! জুম ঝগড়ার কথা শুনে আমি হাসি শুরু করতেই বড়ভাই বললেন, তবে একটা ব্যাপার কি জানিস! জুম ঝগড়ার পেছনে ইন্টারনেট একটু বেশি খরচ হলেও সুবিধাও কিন্তু আছে। আমি সুবিধার ধরনটা জিজ্ঞেস করতেই তিনি বললেন, না, মানে আগে যখন তোর ভাবি আমার সঙ্গে সামনাসামনি ঝগড়া করত তখন হাতের কাছে যা পেত, তাই ছুড়ে মারত। জুম ঝগড়ায় অন্তত এটা-ওটা ছুড়ে মারার অপশনটা নেই। আমার এক ভাবি গত পাঁচ-ছয় মাস ধরে অনলাইনে বাজার করছেন। অর্থাৎ যা কিছু দরকার হচ্ছে, মোবাইলে ঢুকে অর্ডার করছেন। না কোনো সুপারশপে অর্ডার করছেন না। অর্ডার করছেন স্বামীর ফেসবুক মেসেঞ্জারে। অনলাইনে মেসেজ করেই খালাস। এরপর কোনো কথা নেই। খাবার টেবিলে গেলে বোঝা যায় মেসেঞ্জারটা নিয়মিত চেক করা দরকার ছিল। আমার এক ছোটভাই বলল, অফিসের সব কাজ এখন বাসায় বসে করতে হয়। অনলাইনে। সত্যি কথা বলতে কি, বাসা আর বাসা নেই। অফিস হয়ে গেছে। এটা খুবই দুঃখজনক। এবার পাশ থেকে তার ছোটভাই বলে উঠল, সুখে থাকলে ভূতে কিলায়, তাই না? বাসা অফিস হয়ে গেছে মানে? তুমি তো অফিস করতে কোট-টাই পরে। সঙ্গে ম্যাচিং প্যান্ট। এখন বসকে দেখানোর জন্য কোট-টাই পর ঠিকই, নিচে যে প্যান্টের বদলে লুঙ্গি বা হাফপ্যান্ট পরে থাক, সেইটা কে বলবে? অনলাইন জিনিসটা না থাকলে কোট-টাইয়ের সঙ্গে লুঙ্গি বা হাফপ্যান্ট পরার সুবিধা জীবনে পেতে? আমার এক প্রতিবেশী বললেন, সবকিছু এখন অনলাইননির্ভর হয়ে গেছে, মানলাম। তাই বলে আমার বাসার বুয়া তো আমার সঙ্গে এই ফাজলামিটা করতে পারে না। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কী ফাজলামি করেছে? প্রতিবেশী বললেন, কী করেনি, তাই বলেন। সে আজকাল এক দিন কাজ করতে এলে দুই দিন আসে না। ভিডিও কলে গিয়ে বলে তাকে যাতে দেখাই কোন কোন কাপড় ময়লা হয়েছে, কোন কোন গ্রিলে ধুলো জমেছে, কোথায় কোথায় মাকড়সার জাল জমেছে। আমি বললাম, ঠিক আছে। এগুলো ভিডিও কলে দেখানো যায়। কিন্তু ভিডিও কলে তো আর পরিষ্কার করা যায় না। প্রতিবেশী বললেন, আমার কথাও তো সেটাই। কিন্তু বুয়ার কথা হচ্ছে, সে নাকি কাজগুলো দেখে রাখবে। তারপর যেদিন তার মনে হবে গ্রিলে বেশি ময়লা জমে গেছে, মাকড়সা বেশি পরিমাণে জাল বানিয়ে ফেলেছে, সেদিন সে কাজ করতে আসবে। বলেন দেখি কী যন্ত্রণা! আমি বললাম, কি আর যন্ত্রণা! এটার নাম হচ্ছে যন্ত্রের যন্ত্রণা। চাইলে অনলাইন যন্ত্রণাও বলতে পারেন। আপনার ইচ্ছা। তবে যন্ত্রের হাতে বন্দীদশা কে চায়। আমার এক দুলাভাই সেদিন বলছিলেন, তার স্কুলপড়ুয়া সন্তান নাকি মোবাইলে আসক্ত। সারাদিন নাকি মোবাইল টিপাটিপিতেই ব্যস্ত থাকে। যন্ত্রের হাত থেকে সন্তানকে মুক্ত করতে তিনি অভিনব উপায় খুঁজে বের করেছেন। রাস্তা থেকে সস্তা মোবাইল চার্জার কিনে এনেছেন। এ চার্জার দিয়ে মোবাইল ঠিকমতো চার্জ হয় না। মোবাইলে চার্জ না থাকায় মোবাইল অকেজো পড়ে থাকে বাসায়। যন্ত্রের যন্ত্রণা কমেছে কিনা জানার জন্য তাকে প্রায়ই ফোন দেই। কিন্তু তাকে পাই না, মোবাইল বন্ধ দেখায়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর