সোমবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

পিঁয়াজ নিয়ে টানাটানি

ভাবীর হাতের বালা, কানের দুল তো আরও দামি। আর এগুলো রাখা হয় জুয়েলারি বক্সে। এক কাজ করেন, উনাকে বলেন আপনি যখন পিঁয়াজ কিনতে যাবেন, তখন যেন মিডিয়াম সাইজের একটা জুয়েলারি বক্স দিয়ে দেয়...

ইকবাল খন্দকার

পিঁয়াজ নিয়ে টানাটানি

♦ ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ ♦ কার্টুন : কাওছার মাহমুদ

ছোটবেলার কথা দিয়েই শুরু করা যাক। থ্রি-ফোরে হয়তো পড়ি তখন। এক দিন স্যার বাংলা ক্লাসে পড়াচ্ছিলেন, সম্মানিত ব্যক্তির ক্ষেত্রে চন্দ্রবিন্দু হয়। যেমন তাঁর, যাঁর। পড়ানো শেষ করে স্যার যাচাই করার চেষ্টা করলেন আমরা কতটা বুঝেছি। তিনি আমার পাশের জনকে দাঁড় করিয়ে বললেন, সম্মানিত ব্যক্তির ক্ষেত্রে যে চন্দ্রবিন্দু হয়, এর কয়েকটা উদাহরণ দাও তো। আমার পাশের জন আগপিছ চিন্তা না করে বলে উঠল, পিঁয়াজ, পিঁপড়া ইত্যাদি। ক্লাসজুড়ে হাসির রোল পড়ে গেল। স্যার টেবিলে বেত্রাঘাত করে সবাইকে থামতে বললেন। সবাই থামল। এবার তিনি জানালেন, পিঁয়াজ লিখতে নাকি চন্দ্রবিন্দু না দিলেও চলে। শুধু তাই না, অভিধানে নাকি ‘পেয়াজ’ শব্দটা আগে লেখা হয়েছে, তারপর লেখা হয়েছে ‘পেঁয়াজ’। তার মানে চন্দ্রবিন্দু ছাড়া যেটা লেখা হয়েছে, সেটাই ধর্তব্য। অর্থাৎ ‘পেয়াজ’। আমরা নিয়মটা জেনে প্রীত হলাম। ছোট মানুষ। পাল্টা যুক্তি দাঁড় করানোর ক্ষমতা নেই। প্রীত না হয়ে উপায় কী? কিন্তু যত বড় হলাম, ততই যুক্তি ঘুরপাক খেতে লাগল মাথার ভিতরে। শুধু আমার না, অনেকেরই। তো কদিন আগে একজনকে ‘পেঁয়াজ’ লিখতে দেখে বললাম, ‘পেয়াজ’ কিন্তু অধিকতর শুদ্ধ। অপেক্ষাকৃত কম শুদ্ধ হচ্ছে ‘পেঁয়াজ’। ভদ্রলোক বললেন, কম শুদ্ধ আর অধিকতর শুদ্ধ বলে কথা নেই। যখন পিয়াজের কেজি ৩০ টাকা থাকে, তখন লিখতে হবে চন্দ্রবিন্দু ছাড়া। আর যখন কেজি ১০০ ছাড়িয়ে যায়, তখন মাস্ট চন্দ্রবিন্দু দিতে হবে। ইজ্জতের একটা ব্যাপার আছে না? আমার এক ছোট ভাই বলল, বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। অথচ কদিন পরপর পিঁয়াজের দাম যা-তা পর্যায়ে চলে যায়। রহস্যটা কী? আমি বললাম, দিন যত যাচ্ছে, মানুষের রুচি ততই উন্নত হচ্ছে। এখন সবার মধ্যে এমন একটা ধারণা কাজ করে, ১০০ টাকার জিনিস ব্যবহার করলে সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণœ হয়। আর এক হাজার টাকার জিনিস ব্যবহার করলে মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। সুতরাং সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য হলেও কম দামে পিঁয়াজ কিনে খাওয়ার চেয়ে বেশি দামে পিঁয়াজ কিনে খাওয়া অধিক যুক্তিযুক্ত। তাহলেই কেবল ঠোঁট-মুখ বাঁকিয়ে ‘ইস্টাইল’ করে বলা যাবে, আমি কম দামি জিনিস মুখেই তুলি না! আমার এক প্রতিবেশী খুব হতাশ হয়ে বললেন, অনেক সময় শুধু গুজবের কারণে অনেক জিনিসের দাম বাড়ে। অমুক জিনিস অমুক তারিখের পর থেকে বাজারে পাওয়া যাবে না, এই টাইপের গুজব ছড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দাম এক লাফে তিন ডবল হয়ে যায়। আর এই কথাগুলো পিঁয়াজের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এ অবস্থা থেকে বাঁচার কি কোনো উপায় নেই? আমি বললাম, অবশ্যই আছে। কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুললেই দেখবেন কেচ্ছা খতম। প্রতিবেশী কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার পদ্ধতিটা জানতে চাইলেন। আমি বললাম, খুবই সহজ পদ্ধতি। আপনি যদি মনে করেন গুজবের কারণে পিঁয়াজের দাম বেড়েছে, তাহলে আরেকটা গুজব ছড়িয়ে দেন। শুধু বলে দেন পিঁয়াজ খেলে প্রেমিকা ভেগে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। ব্যস... আমার এক বড়ভাই বললেন, প্রতিবছর পিঁয়াজের দাম বাড়ে আর আমাদের মতো গোবেচারা স্বামীদের বাড়ে যন্ত্রণা। যেমন এখন আর নরমাল ব্যাগ নিয়ে বাজারে যেতে পারি না। তোর ভাবী করে কী, ল্যাপটপের ব্যাগ আছে না? ওইটা হাতে ধরিয়ে দেয়। বলে দামি জিনিস নাকি দামি ব্যাগে আনতে হয়। আমি বললাম, ভাবীর হাতের বালা, কানের দুল তো আরও দামি। আর এগুলো রাখা হয় জুয়েলারি বক্সে। এক কাজ করেন, উনাকে বলেন আপনি যখন পিঁয়াজ কিনতে যাবেন, তখন যেন মিডিয়াম সাইজের একটা জুয়েলারি বক্স দিয়ে দেয়। বহুত লাভ। আমার আরেক বড়ভাইয়ের দীর্ঘশ্বাস, আমাদের শান্তি নাইরে! পিঁয়াজের দাম বেড়েছে, এখন তোর ভাবী আমাকে দিয়ে করাচ্ছে অন্য কেনাকাটা। আমি বললাম, অন্য কেনাকাটা বলতে? বড়ভাই বললেন, বড় বড় টব কেনাচ্ছে। সে নাকি বারান্দায় আর ছাদে পিঁয়াজের চাষ করবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর