সোমবার, ৫ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

কাজ কম কথা বেশি

♦ ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ ♦ কার্টুন : কাওছার মাহমুদ

ইকবাল খন্দকার

কাজ কম কথা বেশি

আমার এক ছোটভাই প্রচুর কথা বলে। কথার তুলনায় কাজের পরিমাণ বলতে গেলে জিরোর পর্যায়ে। মোটকথা, কথা বেশি, কাজ কমের চেয়েও কম। এক দিন তাকে বললাম, কাজকর্ম কিছু করিস না। অথচ সারা দিন কথা আর কথা। লজ্জা করে না তোর? ছোটভাই হাসতে হাসতে বলল, লজ্জার কী আছে? আমার যদি অন্য কোনো সমস্যা থাকত, তাহলে হয়তো লজ্জার একটা ব্যাপার থাকত। যেহেতু সেই ধরনের কোনো সমস্যা নেই, অতএব আমি কথা বলতেই পারি। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘অন্য কোনো’ সমস্যা বলতে? ছোটভাই বলল, দাঁত মাজা সংক্রান্ত সমস্যা। মানে আমি যদি নিয়মিত দাঁত না মাজতাম, কথা বললে যদি আমার মুখ দিয়ে ভুরভুর করে গন্ধ বের হতো, তাহলে তা লজ্জার ব্যাপার ছিল। আমি বললাম, এত কথা বলতে পারিস, কিছু কাজকর্ম করতে পারিস না? ছোটভাই বলল, আপনি দেখছি ক্রিয়াপদ সম্পর্কে কোনো ধারণাই রাখেন না। যদি ধারণা রাখতেন, তাহলে বুঝতেন, কথা বলাটা ক্রিয়াপদের মধ্যে পড়ে। তার মানে হচ্ছে, কথা বলাটা একটা ক্রিয়া বা কাজ। অর্থাৎ আমি বেশি কথা বলছি মানে বেশি কাজ করছি। ছোটভাইয়ের ব্যাখ্যা শুনে আমি মুখে তালা লাগালাম। কারণ, যারা কাজের ব্যাপারে ঠনঠন অথচ অলটাইম মুখ রাখে ‘অন’, তাদের খোঁচা দেওয়া মানে মৌচাকে ঢিল দেওয়া। আমার এক ভাবির কথাই ধরা যাক। সারা দিন কোনো কাজ করেন না বললেই চলে। শুধু কথা আর কথা। কদিন আগে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, কথাটা একটু কম বলতে পারেন না? ভাবি বললেন, না, মানে আমি খুব স্বাস্থ্যসচেতন তো! আসলে ফিগার ঠিক রাখতে হলে স্বাস্থ্যসচেতনতার বিকল্প নেই। আমি অবাক হয়ে বললাম, স্বাস্থ্যসচেতনতা কিংবা ফিগার ঠিক রাখার সঙ্গে বেশি বেশি কথা বলার কী সম্পর্ক? ভাবি বললেন, ব্যায়ামের সম্পর্ক। যত ব্যায়াম করা হয়, ততই ফিগার ঠিক থাকে। আর কথা বলা হচ্ছে এক ধরনের ব্যায়াম। আমি বেশি কথা বলি বলে আমার জিহ্বার ব্যায়াম হয় এবং জিহ্বার ফিগার ঠিক থাকে। নইলে এতদিনে জিহ্বায় চর্বি জমে যেত না? আমার এক প্রতিবেশী বললেন, অনেকেই বিভিন্ন প্রসঙ্গে হেন করেঙ্গা তেন করেঙ্গা বলে, বলছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই করছে না। এ বিষয়ে আপনার কী অভিমত? আমি বললাম, অভিমতের কথা বাদ দেন। একটা পরামর্শ দিই। আপনি কিছুদিনের জন্য ডিশ লাইনটা অফ রাখেন। প্রতিবেশী বললেন,- এসব আপনি কী বলছেন? ডিশ লাইন অফ রাখব কেন? আমি বললাম, হেন করেঙ্গা তেন করেঙ্গা যারা বলে কিন্তু কাজ করে না, তাদের সাধারণত টিভিতে দেখা যায়। ডিশ লাইন বন্ধ রাখলে হবে কী, তাদের দেখতেও হবে না, তাদের কথা শুনতেও হবে না। আশা করা যায় আপনি মানসিকভাবে সুস্থ থাকবেন। আপনার জন্য শুভকামনা। আমার এক বন্ধু বলল, যারা শুধু বড় বড় কথা বলে কিন্তু কাজ করে না, তাদের শাস্তি হওয়া উচিত। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কী ধরনের শাস্তি? বন্ধু বলল, তারা যাতে নরমাল মাস্ক পরতে না পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। আর এমন মাস্ক পরতে বাধ্য করতে হবে, যে মাস্ক পরলে মুখের কোনো কথাই বাইরে বের হয় না। মানে সাউন্ডপ্রুফ মাস্ক। কোনো কথা যাতে বাইরে বের হতে না পারে, কারও কানে যেতে না পারে, তাহলে বলুক না যতক্ষণ বলতে পারে। দুদিন আগের ঘটনা। বাসার পাশের চার রাস্তার মোড়ে প্রচ- হট্টগোল। এগিয়ে গিয়ে দেখি ভ্যানে মাছ বিক্রি করছে যে লোক, তার মধ্যে আর কাস্টমারের মধ্যে তুমুল বাকবিত-া। জিজ্ঞাসা করলাম, ঘটনা কী? কাস্টমার মাছ বিক্রেতাকে দেখিয়ে বললেন, এই বেটা বেশি কথা বলে। তার কথা আর কাজে মিল নেই। আমি বললাম, কী হয়েছে তাই বলেন। কাস্টমার বললেন, সে জোর দিয়ে বলেছে তার মাছে নাকি ফরমালিন দেওয়া না। অথচ এটা একটা চাপাবাজি। আমি বললাম, কীভাবে বুঝলেন, চাপাবাজি? কাস্টমার বললেন, তার মাছে যদি ফরমালিনই দেওয়া না থাকবে, তাহলে মাছি বসছে না কেন? দেখেন তো একটা মাছি আছে কিনা! এবার মাছ বিক্রেতা বলল, আমার তো মনে হয় আপনি মাছ কিনতে আসেননি। মাছি দেখতে এসেছেন। কোনো সমস্যা নেই। এই নেন মোবাইল। নেটে ঢোকেন। তারপর গুগলে ঢুইকা ‘মাছি’ লেইখা সার্চ দেন। জ্যান্ত মাছি দেখতে না পারলেও হরেক প্রকারের মাছির ছবি দেখতে পারবেন। ছবিগুলার রেজুলেশনও ভালো।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর