সোমবার, ১২ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

কাঁচাবাজারে পাকা আগুন

ইকবাল খন্দকার

আমার এক ছোটভাই বলল, একটা জিনিস আমার বুঝে আসে না। কিছুদিন পরপর কাঁচাবাজারে আগুন লাগে। এই যেমন এখনো লেগেছে। কিন্তু কেন? আমি বললাম, কেন আবার! আমাদের ডায়েরিয়া থেকে রক্ষা করার জন্য। আমার কথায় গোস্যা করল ছোটভাই। কড়া করে বলে দিল, সিরিয়াস কথা নিয়ে যেন এসব হালকা রসিকতা না করি। আমি বললাম, রসিকতা করলাম কোথায়? যা সত্য, তা-ই তো বললাম। তুই চিন্তা করে দেখ, কাঁচাবাজারে আগুন না লাগলে আমরা হয়তো জানতামই না বেগুন, কপি, ঝিঙে এসব জিনিস আগুন দিয়ে সিদ্ধ করে খেতে হয়। আমরা করতাম কি, এগুলো কাঁচাই খেয়ে ফেলতাম। তখন আমাদের বদহজম হতো। বদহজম থেকে ডায়রিয়া। আমার ভাষ্য এবং যুক্তি একদমই পছন্দ হলো না ছোটভাইয়ের। তাই সে হনহনিয়ে চলে গেল। আসলে যুক্তিটা পছন্দ হওয়ার কোনো কারণও নেই। মনগড়া যুক্তি, অযৌক্তিক যুক্তি। এখন কথা হচ্ছে, এমন অযৌক্তিক যুক্তি আমি কেন দিলাম? দিলাম এ জন্য যে, যেহেতু ছোটভাইয়ের সঙ্গে দেখা হওয়ার একটু আগেই আমি বাজার থেকে ঘুরে এসেছিলাম। তার মানে বাজারের অবস্থা দেখে আমার মাথা ছিল চুলার মতো গরম। আর চুলার মতো গরম মাথা থেকে তার ছেঁড়া যুক্তি বের না হয়ে ভালো যুক্তি বের হবে, এমনটা যারা মনে করেন, শাস্তিস্বরূপ তাদের পাঠিয়ে দেওয়া উচিত কাঁচাবাজারে। যাতে বাজারের আগুনের তাপে একদম সিদ্ধ হয়ে বাসায় ফেরে। বাজারের উত্তাপ কমানোর কি কোনো উপায়ই নেই? এ প্রশ্নের জবাবে আমার এক প্রতিবেশী বললেন, মাছওয়ালারা যা করে তা যদি সবাই করে তাহলে অবশ্যই বাজারের উত্তাপ কমানো সম্ভব। আমি বেশ আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, মাছওয়ালারা কী করে? প্রতিবেশী বললেন, কী আর করবে, সঙ্গে বরফ রাখে। মাছওয়ালাদের মতো সবজিওয়ালারাও যদি সঙ্গে বরফ রাখার অভ্যাসটা করে ফেলে তাহলে কাঁচাবাজারের উত্তাপ কমতে বাধ্য। বলেই প্রতিবেশী হেসে উঠলেন। আমি তার দাঁতের দিকে তাকাতেই লজ্জা পেলাম। আর চোখ নামিয়ে নিলাম। প্রতিবেশী বললেন, আমার দাঁতের চিপায় কলমি শাকের টুকরা আটকে আছে দেখে আপনি অস্বস্তিবোধ করছেন, এই তো? আপনি অস্বস্তিবোধ করলেও আমি কিন্তু গর্ববোধ করছি। কারণ, সবাই আমার দাঁত দেখেই জেনে যাচ্ছে, সবজির বাজারে যতই আগুন থাকুক, আমার বাসায় ঠিকই সবজি রান্না হচ্ছে। তার মানে আমি বড়লোক। বুঝতে হবে বিষয়টা। আমার এক বড়ভাইয়ের সঙ্গে কাঁচাবাজারে দেখা। দেখি মুখে মাস্ক নেই। কিন্তু হাতে বেশ মোটা গ্লাভস পরা। আমি অবাক হয়ে বললাম, এইটা কী ধরনের কান্ড করলেন? মাস্কের চেয়ে কি গ্লাভস জরুরি? মনে রাখবেন, করোনা কিন্তু এখনো দেশ থেকে চলে যায়নি। বড়ভাই বললেন, আমার এ গ্লাভস পরার সঙ্গে করোনার কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ, করোনাকে আমি ভয় পাই না। যদি পেতাম, তাহলে অবশ্যই মাস্ক পরে আসতাম। আমি বললাম, গ্লাভসটা কী কারণে পরেছেন, একটু বলবেন কি? বড়ভাই বললেন, না মানে, একজন বলল জিনিসপত্রের নাকি এত দাম যে, হাতই দেওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু হাত না দিলে তো হবে না। তাই গ্লাভস পরে এসেছি। আশা করছি হাত দিতে কোনো সমস্যা হবে না। আমার এক বন্ধু বলল, কাঁচাবাজারের জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমি ভালোই বিপদে আছি। এখন রোজ আমাকে আধাভেজা কাপড় পরে অফিসে যেতে হয়।

আমি অবাক হয়ে বললাম, তোর কথার আগামাথা কিছুই বুঝলাম না। কাঁচাবাজারের জিনিসপত্রের দাম বাড়ার সঙ্গে আধাভেজা কাপড় পরে অফিসে যাওয়ার কী সম্পর্ক? তুই কি শাকসবজি তাজা রাখার জন্য পানি ছিটাতে গিয়ে কাপড় ভিজিয়ে ফেলিস? বন্ধু বলল, নারে, এরকম কিছু না। আগে আমরা প্যান্টসহ মোটা যত কাপড় আছে, ছাদে শুকাতে দিতাম। যেহেতু মোটা কাপড় ঘরে শুকাতে চাইলে শুকানো যায় না। তো যেই শাকসবজির দাম বেড়ে গেল, বিল্ডিংয়ের সবাই ছাদে শাকসবজির আবাদ শুরু করে দিল। টবে। ব্যস, বাড়িওয়ালা ক্ষেপে গিয়ে ছাদের দরজায় তালা লাগিয়ে দিল। এখন ভেজা প্যান্ট শুকানোর জায়গা নেই। কী আর করা, ভেজা প্যান্ট পরেই অফিসে যেতে হয়। আশা করা যায়, আমার আধাভেজা প্যান্টের ঘষায় অফিসের ফোমের চেয়ারগুলো বেশিদিন লাস্টিং করবে না। 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর