শিরোনাম
সোমবার, ১২ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

অবাক টিভি দেখা

আফরীন সুমু

অবাক টিভি দেখা

হাসপাতালে গিয়েছি। প্রাইভেট হাসপাতাল। দুদিন আগে সিরিয়াল দিয়েছি বলল ৮ নম্বর সিরিয়াল। এসে দেখি ৮ নম্বর সিরিয়াল ২২ নম্বর হয়ে গেছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে হয়তো দু’কথা বলা যাবে কিন্তু এখানকার রিসিপশনিস্টের সঙ্গে বাতচিৎ করার কোনো উপায় নেই। যখন বলল, বাইশেই ছিল, গিয়ে জায়গায় বসুন- আর কথা বাড়ালাম না। কে জানে বাইশের সিরিয়াল যদি আবার বেয়াল্লিশ হয়ে যায়। বসার জায়গা নেই। এক লোক উঠে দাঁড়াতেই টুপ করে বসে পড়লাম। এখানেও ঝামেলা। বলল সে নাকি হাই তোলার জন্য দাঁড়িয়েছিল। আমি উঠলাম না। ঠাঁয় বসে রইলাম। বললাম, আমি যখন হাই তোলার জন্য দাঁড়াব তখন আপনি আবার বসে পড়বেন। ততক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আরও হাই তুলুন। ত্যাড়া গোছের হলে হয়তো ঝগড়া বাধিয়ে বসত। দেখলাম আর কিছু না বলে হেলেদুলে কাউন্টারের দিকে হাঁটা দিল। যাক বাবা। নিশ্চিন্তে বসার একটা জায়গা পেয়ে আরাম করে জাঁকিয়ে বসেছি। তাকিয়ে দেখি মাথার ওপর মাঝারি সাইজের একটা টিভি লাগানো। টিভি চলছে তবে শব্দ নেই। বোবা টিভি। খবর দেখাচ্ছে? নিরীহ গোছের একটা ছেলের হাতে হাতকড়া। একটা সুন্দরী মেয়ে ফিচ ফিচ করে কাঁদছে আর মাইকের সামনে কিছু বলছে। খুবই কৌতূহল উদ্দীপক ব্যাপার। অথচ কোনো শব্দ নেই। মানুষের কৌতূহল জাগিয়ে দিয়ে সেটা নিবারণের কোনো ব্যবস্থা রাখবে না এটা কেমন কথা। রিসিপশনিস্টের কাছে গিয়ে বলা দরকার। কিন্তু উঠলেই জায়গাটা হাতছাড়া হবে। তার চেয়ে বরং টিভির দিকে না তাকাই। টিভি থেকে চোখ ফিরিয়ে আশপাশে মনোযোগ দিলাম। আমি পা জোড়া করে আরাম করে বসেছি। চেয়ারের  পিছন থেকে কে যেন লাথি মারল। এদিক সেদিক তাকিয়ে কিছু বুঝলাম না। নড়েচড়ে আবার বসলাম। আবার সেই লাথি। জোড়া পা ছুটে গেল। সামনে পিছনে তাকিয়ে লাথি দেওয়ার মতো কাউকে পেলাম না। চেয়ারের নিচে উঁকি দিয়েই বুঝলাম বিপদ কোথায়? বছর চারেকের এক বিচ্ছু টাইপ বাচ্চা বসে রয়েছে পিছনে। দাঁত সব বের করে আছে। এর মানে হলো আমাকে লাথি মেরে সে আনন্দ পেয়েছে। আমি বাচ্চার মায়ের দিকে তাকালাম। একমনে মোবাইল টেপাটেপি করছেন। আরও গোটা দুয়েক লাথি খেয়ে না পেরে পা উপরে তুলে বসলাম। এবার বিচ্ছুটা পা খুঁজে পেল না। বিচ্ছুটা আমার পা খুঁজতে সামনে চলে এলো। আমি ওর হাত দুখানা ধরলাম। টিভিতে তখন কার্টুন চলে। আমি ওর মনোযোগ ঘোরানোর চেষ্টা করলাম। বললাম, বাবু সোনা দেখ কার্টুন। বিচ্ছু মুখ তুলে তাকাল। সত্যিই কার্টুন। আমার দিকে তাকিয়ে বলল, সাউন্ড দাও। বুদ্ধিটা চট করে মাথায় খেলে গেল। রিসিপশনিস্টকে দেখিয়ে বললাম, রিমোট ওর কাছে। এরপর ঘটনা জমে গেল। বিচ্ছুটা  রিসিপশনিস্টকে গিয়ে বলল। রিসিপশনিস্ট দিল ঝাড়ি। আর যায় কোথায়। বিচ্ছু সমস্ত শক্তি দিয়ে চিৎকার জুড়ে দিল। সঙ্গে যোগ হলো বিচ্ছুর মা। দুই পক্ষের ঝগড়ায় বিচ্ছুর মা জয়যুক্ত হলো। পরবর্তী দুই ঘণ্টা বিচ্ছুর সঙ্গে সঙ্গে আমিও কার্টুন দেখলাম, নাটক দেখলাম, খবর দেখলাম। শব্দ সমেত।

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর