সোমবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

দামাদামি করিয়া লজ্জা পাইবেন না

তোকে একটা সুসংবাদ দিই। আগামী মাসেই আমার বিয়ে হচ্ছে। আসলে কন্যার বাবা যখন জানতে পেরেছে বাজারে আমাদের সবজির দোকান আছে, তখন কন্যার আগে উনি নিজেই ‘কবুল’ বলে ফেলেছেন...

ইকবাল খন্দকার

দামাদামি করিয়া লজ্জা পাইবেন না

► ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ ► কার্টুন : কাওছার মাহমুদ

আমার এক ছোটভাই সব সময়ই চেষ্টা করে জ্ঞানগর্ভ কথাবার্তা বলার জন্য। কথাটা যুক্তিসংগত হলো কি হলো না, ওইসব সে কমই ভাবে। ডায়লগ মেরে দিতে হবে, অতএব মেরে দেয়। যা আছে কপালে। তো দুদিন আগে সে আমার কাছে এসে বলল, সব কিছুরই ভালো একটা সাইড আছে ভাই। যে কারণে মানুষ বলে, যা হয়, ভালোর জন্যই হয়। এই যে মনে করেন সবজিওয়ালারা মানে তরিতরকারিওয়ালারা কোনোরকম বাড়তি কথাবার্তা সহ্য করছে না, যা দাম চাচ্ছে তা দিয়েই ক্রেতাকে কিনতে বাধ্য করছে, এখানেও কিন্তু ভালো একটা ব্যাপার আছে। আসলে যা হয়, ভালোর জন্যই হয়। আমি বললাম, এক কথা বারবার শুনতে ভালো লাগে না। এই জন্য এক কথা বারবার না বলে সবজিওয়ালাদের পক্ষ নিয়ে কেন সাফাই গাইছিস, সেটার ব্যাখ্যা দে। ছোটভাই বলল, আসলে সাফাই গাওয়ার কিছু নেই। এই যে তারা দরদামের সুযোগ দিচ্ছে না, এখানে আমার মতো লোকজন খুব উপকৃত হচ্ছে। কারণ কী জানেন? কারণ হচ্ছে, মাস্ক পরা অবস্থায় কথা বলতে খুব কষ্ট হয়। দরকারি কথাই বলতে পারি না, আবার ফাউ কথা। সুতরাং তরকারিওয়ালারা যা করছে... আমি ছোটভাইকে কথা শেষ করার সুযোগ না দিয়ে সরে গেলাম। আর সরে যাওয়ার পিছনে আরেকটা কারণ ছিল। কারণটা হচ্ছে, আমাকে বাজারে যেতে হয়েছিল। তাও তরিতরকারি কিনতে। তো বাজারে গিয়ে যা দেখলাম, তাতে আমি রীতিমতো থ হয়ে গেলাম। থ হয়ে গেলাম এই জন্য, যেহেতু তখন অনেকেই গোলআলুর পাশে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলছিল। তবে থ হওয়ার এটাই একমাত্র কারণ না। আসল কারণটা বলছি। আমি খেয়াল করছিলাম, যতজন সেলফি তুলছে, ততজনের কাছ থেকেই দোকানদার কিছু একটা রাখছে। আমি এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কী হচ্ছে এসব? দোকানদার খিলখিলিয়ে হেসে বলল, সুযোগ কাজে লাগাইতাছি। যারাই আলুর সঙ্গে খাড়ায়া সেলফি তুলতাছে, তারা হইল ফটকা। আলু কিনব না, কিন্তু ফেসবুকে ঢুইকা সেলফি দিয়া ঠিকই স্ট্যাটাস মারব, ‘আলু কিনলাম’। আমিও কম ফটকা না। সবার কাছ থেকে ১০ টাকা কইরা রাখতাছি। যদি না রাখতাম, তাইলে সেলফি তোলার ঠেলায় দোকানে বসতে পারতাম মনে করছেন!

আমার এক বড়ভাই বাংলার শিক্ষক। ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি তিনি বাংলা দ্বিতীয়পত্র পড়ান। আর তার কথাবার্তার মধ্যেও বাংলা ব্যাকরণের একটা ছাপ। যেমন, সেদিন তিনি কথায় কথায় বললেন, এই যে আলুর এত দাম, আলুর অধিক দামের কারণে মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা, এটাকে যদি এককথায় প্রকাশ করা হয়, তাহলে কীভাবে প্রকাশ করব? ‘আলুর চাপ’। আমার এক দুলাভাই বললেন, সামান্য একটা কাঁচামরিচের এত দাম, ভাবা যায়! আমার তো মন চাচ্ছিল অফিস থেকে ছুটি নিয়ে গ্রামে গিয়ে কাঁচামরিচের চাষ করি। সঙ্গে অন্যান্য সবজি। আমার এক প্রতিবেশী বললেন, তরিতরকারির দাম বেড়ে যাওয়ার অন্যদের অসুবিধা হলেও আমি বেশ আরামেই আছি। আগে আমাদের বিল্ডিংয়ের উপরের তলাগুলোতে যারা থাকত তারা করত কী, সবজির খোসা ফেলত। আর এসব খোসায় আমার বারান্দা ভরে যেত। এখন আর এই উৎপাত নেই। এখন সবজিই কেনে না, নাকি কিনলেও খোসাসহই খেয়ে ফেলে, এ এক অপার রহস্য। আমার এক বন্ধু ফোন করে বলল, তুই তো মনে করেছিলি আমার কপালে বিয়ে জুটবে না। বয়স বেড়ে যাচ্ছে, চাকরিবাকরি কিছু করি না, আর কত কিছু বলে হতাশ করার চেষ্টা করেছিলি! তোকে একটা সুসংবাদ দিই। আগামী মাসেই আমার বিয়ে হচ্ছে। আসলে কন্যার বাবা যখন জানতে পেরেছে বাজারে আমাদের সবজির দোকান আছে, তখন কন্যার আগে উনি নিজেই ‘কবুল’ বলে ফেলেছেন। আমি বললাম, সব ঠিক আছে। তবে আমি ভাবছি, আগামী মাস আসার আগেই যদি সবজির বাজার ঠা-া হয়ে যায়, তাহলে তোর বিয়ের কী হবে?

সর্বশেষ খবর