সোমবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

মজনুর বিয়ে

রাফিউজ্জামান সিফাত

মজনু শান্তশিষ্ট ছেলে। আশপাশের দশ গ্রাম খুঁজলেও মজনুর মতো নম্র ভদ্র ছেলের দেখা মিলবে না। কারও সঙ্গে মজনুর বিবাদ নেই, ক্যাচাল নেই। মজনু কারও চোখে চোখ রেখে কথা বলে না। কথা বলার সময় সর্বদা তার চোখের দৃষ্টি থাকে মাটিতে। নিচু মাথায় মিনমিনে গলায় কথা বলার কারণে তার অধিকাংশ কথাই শোনা যায় না। মনে হয় সে গোপনে জাদুমন্ত্র পড়ছে।  এত ভদ্র চেহারার শান্ত মজনু অতি বিশেষ কারণে কালেভদ্রে হঠাৎ ভীষণ রেগে ওঠে। আর রাগ উঠলে মজনুর মাথা ঠিক থাকে না। তখন সে সামনে যা পায় তাই ভাঙে। আশার কথা রাগ ওঠার আগে আগে মজনু টের পায় যে তার রাগ উঠছে। তখন সে চেঁচিয়ে বলে, ‘আইতাছে রে আইতাছে, মেমান আইতাছে।’ পরিচিতরা ওর চেঁচানোর সিগন্যাল পেলেই আশপাশ থেকে সব দামি জিনিসপত্রসহ নিজেরাও দূরে সরে যায়।

 

সেই মজনু বিয়ে করছে। বেকার হলেও পাত্রীপক্ষ মজনুর শান্ত নরম ব্যবহারে মুগ্ধ হয়েই মূলত বিয়ের প্রস্তাবে খুশি মনে রাজি হয়েছে। বিয়ের দিন সকালে সে ফুরফুরা মেজাজে গোসল সেরে পাজামা-পাঞ্জাবি গায়ে আতর পাউডার মেখে বরযাত্রীর সঙ্গে বিয়ে করতে রওনা দিল। বিয়েবাড়ির গেইট থেকে সে সামনে যাকে পাচ্ছে তাকেই পা ছুঁয়ে কদমবুসি করতে করতে বিয়ের স্টেজে উঠল। কাজী সাহেব যখন মজনুকে কবুল বলতে বলল, তখন সে নতুন বউয়ের চেয়েও বেশি লজ্জা পাচ্ছিল। মুখ থেকে তার রুমালই সরে না। মিনমিনে গলায় মজনুর কবুল শুনতে কাজী সাহেবের বারটা বেজে যাওয়ার অবস্থা।

 

সব ঠিকঠাক মতোই চলছিল। ভেজালটা বাধল খাওয়ার সময়। বর কনের টেবিলের আস্ত খাসির রোস্ট, গরুর রান, আস্ত দেশি মোরগ, ধোঁয়া ওঠা কাচ্চি রাখা হলো। খুব সুন্দর ঘ্রাণ ছড়াচ্ছে। সবার পেটে ক্ষুধা। কন্যার বাবা আদর করে মজনুর পাতে খাবার বেড়ে দেওয়ার পর কাচ্চিতে হাত দিয়েই মজনু বিকট শব্দে চেঁচিয়ে উঠল, ‘আইতাছে রে আইতাছে, মেমান আইতাছে।’ কনেপক্ষ কিছু না বুঝে অবাক চোখে মজনুর দিকে তাকিয়ে রইল। ওইদিকে মজনুর বাড়ির লোকজন বুঝল অবস্থা বেগতিক। তারা দৌড়ে বিয়ের কন্যাকে দ্রুততার সঙ্গে সরিয়ে আনতে পারলেও মজনুর শ্বশুরকে সময়মতো সরাতে পারল না।

 

বিয়েবাড়ি ভর্তি লোক দূর থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখল, পাগড়ি মাথায় বর সাজে মজনু চিৎকার করছে, কাচ্চিতে আলু কই?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর