সোমবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

অটোমেটিক ব্যাপার স্যাপার

ইকবাল খন্দকার

অটোমেটিক ব্যাপার স্যাপার

ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ কার্টুন : কাওছার মাহমুদ

কোনো এক বিখ্যাত কবি বলেছেন অথবা নরমাল কবিও বলে থাকতে পারেন, ‘ছাত্রজীবন সুখের জীবন যদি না থাকত পরীক্ষা।’ কবির এই ডায়ালগ বিচার-বিশ্লেষণ করলে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সম্ভব হয় যে, বর্তমানে ছাত্রজীবনের চেয়ে সুখের জীবন আর জগতে নেই। কারণ, ছাত্রজীবনে যে পরীক্ষার সিস্টেমটা ছিল, তা এখন অকেজো। মোটকথা, শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পরীক্ষা আর হচ্ছে না। অথবা যখন হবে, তখন দেখা যাবে। তো যেখানে পরীক্ষা নেই, সেখানে ‘অটো পাস’-এর ব্যাপার থাকবে, এটাই তো স্বাভাবিক। গতকাল একজনের সঙ্গে কথা হচ্ছিল এই অটো পাসের বিষয়টা নিয়ে। এমন সময় পাশ দিয়ে যেতে থাকা এক ভদ্রলোক দাঁড়াল এবং আমার দিকে এগিয়ে এলো। আমি তার দিকে তাকাতেই সে জিজ্ঞাসা করল, আপনেরা কিসের কথা বলতাছিলেন? আমি বললাম, কিছু না। আপনি যান। আমরা ব্যক্তিগত আলাপ করছি। লোকটা বলল, ব্যক্তিগত আলাপ করতেছিলেন বইলা তো মনে হয় না? আমার তো মনে হইতাছে আমারে নিয়া আলাপ করতেছিলেন। ভদ্রলোকের কথা শুনে আমি তো তাজ্জব, আপনাকে নিয়ে আলাপ করছিলাম মানে? আপনাকে নিয়ে আলাপ করতে যাব কোন দুঃখে? ভদ্রলোক বলল, আমারে নিয়া আলাপ করতেছিলেন না, না? ঠিক আছে, তাইলে বলেন কী নিয়া আলাপ করতেছিলেন। আমি চরম বিরক্ত হয়ে বললাম, ভাইরে অটো পাস নিয়ে আলাপ করছিলাম, অটো পাস। বোঝা গেল? ভদ্রলোক এবার হতাশ হয়ে চলে যেতে যেতে বলল, আমি আসলে মনে করছিলাম অটো নিয়া কথা হইতাছে। আমি অটো চালাই তো! একটা চালাই, দুইটা ভাড়া দিই। আমার এক ছোটভাই বলল, অনেক চেষ্টা করলাম ভাই। এই ধরনের কোনো সিস্টেম পাইলাম না। কত দোকানে যে গেলাম! কত দোকানদারের সঙ্গে যে কথা বললাম! আমি বললাম, দোকানদারের সঙ্গে কথা বলেছিস, ভালো করেছিস। এখন আমাকে একটু বল, কী নিয়ে কথা বললি। মোটকথা, ব্যাপারটা কী। ছোটভাই বলল, খুব জটিল ব্যাপার ভাই। আমার গার্লফ্রেন্ডকে দুই দিন অন্তর অন্তর মোবাইলে টাকা পাঠাতে হয়। কিন্তু আমি তো মোবাইল রিচার্জের দোকানদার না। তাই টাকা রিচার্জ করতে হলে আমাকে দোকানে যেতে হয়। সবসময় দোকানে যাওয়ার মতো সময় থাকে না। আবার হাতে টাকাও থাকে না। আজকাল তো পরীক্ষায় পাসের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টাও অটো হচ্ছে। এ জন্য দোকানদারের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলাম, অটো টাকা রিচার্জের কোনো সিস্টেম আছে কিনা। মানে আমাকে দোকানেও যেতে হবে না, পকেট থেকে কোনো টাকাও খরচ করতে হবে না। গার্লফ্রেন্ড ঘুম থেকে উঠেই দেখবে তার মোবাইলে টাকা... আমি ছোটভাইকে কথা শেষ করার সুযোগ না দিয়েই সরে গেলাম। কারণ, বোঝা যাচ্ছিল, বেচারা গার্লফ্রেন্ডের যন্ত্রণায় ভালোই কাবু হয়ে আছে। তাই আবোল-তাবোল করছে। ভালো কথা, ‘কাবু’র প্রসঙ্গ যেহেতু এলো, অতএব ‘বাবু’র প্রসঙ্গটা উত্থাপন করেই ফেলি। আমার আরেক ছোটভাই বলল, ভাই, আমার জানা মতে মেসেজের অটো রিপ্লাইয়ের ব্যাপারটা আরও অনেক আগে থেকেই প্রচলিত। মানে আপনি কারও ফোন কেটে দিলেন, সঙ্গে সঙ্গে আপনার নম্বর থেকে মেসেজ চলে যাবে, ‘আই অ্যাম বিজি, আই অ্যাম ড্রাইভিং’ ইত্যাদি।

এখন আমার কথা হচ্ছে, এসব মুখস্থ অটো মেসেজের সঙ্গে কি এই ধরনের একটা মেসেজ চালু করা যায় না, ‘খাইছি’! আমি বললাম, কেন? ছোটভাই বলল, কেন আবার! আমার গার্লফ্রেন্ড দিনে দশবার মেসেজ পাঠায়, ‘বাবু খাইছো’? উত্তর দিতে দিতে কাহিল। অটো মেসেজের ব্যবস্থা থাকলে প্রতিবার পাঠিয়ে দিতাম, ‘খাইছি’। আমার পাশের বাসায় দুদিন আগে তুমুল ঝগড়া। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কী হয়েছে? ভাবিটা তর্জন-গর্জন করে বলল, কী হবে আবার! দুনিয়ায় এতকিছু ‘অটো’ হতে পারছে, আর উনার অটো হতে আপত্তি। আমি অনুরোধ করলাম ভেঙে বলার জন্য। এবার ভাইটা মিনমিনিয়ে বলল, না, মানে, ও চাচ্ছে কোনোরকম চাওয়া এবং হাত পাতা ছাড়াই যেন প্রতি মাসের বেতনটা আমি তার হাতে তুলে দিই। মানে অটো আরকি।

সর্বশেষ খবর