সোমবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

গরম নাকি শীত

ইকবাল খন্দকার

গরম নাকি শীত

♦ ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ ♦ কার্টুন : কাওছার মাহমুদ

আমার এক ছোটভাই বলল, আপনি হয়তো জানেন ভাই, আগেকার দিনের মানুষের শরীরে এত রোগ-বালাই ছিল না। তাদের শরীরও ফিট থাকত। ভুঁড়ি হওয়ার সুযোগ পেত না। কারণ, তারা পরিশ্রম করত। ঘরে বসে টিভি দেখবে, সেখানেও ছিল পরিশ্রম। কীভাবে? তারা টিভি অন-অফ করত বসা থেকে ওঠে ওঠে। চ্যানেল চেঞ্জের জন্যও উঠতে হতো বসা থেকে। কারণ, তখন রিমোট ছিল না। তো টিভিকেন্দ্রিক যে ওঠাবসা, হাঁটাচলা, এখন কিন্তু তা নেই। ফলে আমাদের পরিশ্রমের সুযোগ কমে গেছে। তবে একটা জিনিস খেয়াল করেছি ভাই। প্রতি বছর এই সময়টায় ভালোই পরিশ্রম হয়। আমি বললাম, কী রকম? এই সময় তোদের টিভির রিমোট নষ্ট হয়ে যায় নাকি? আর তুই বারবার উঠে চ্যানেল চেঞ্জ করিস নাকি? ছোটভাই বলল, আরে না, এইরকম কিছু না। এই সিজনটায় হয় কী, পুরোপুরি ফ্যান ছাড়াও চলে না, আবার ফ্যান চালালে লাগে ঠান্ডা। এই জন্য সারা দিনই অফ-অন আর অন-অফের মধ্যে থাকতে হয়। যেহেতু ফ্যান অফ-অন করার জন্য এখনো রিমোট কেনা হয়নি, তাই বাধ্য হয়েই বারবার বসা থেকে উঠতে হয়, হাঁটতে হয়। এতে ব্যায়ামটা হয়তো হচ্ছে, আবার বিরক্তও লাগছে। মনে করেন মাঝরাতে আরামের ঘুম হারাম করে যদি উঠতে হয় ফ্যান বন্ধ করার জন্য, এই দুঃখ কি রাখার জায়গা থাকে? চিন্তা করেন ব্যাপারটা। টয়লেট চাপলেই যেখানে বিছানা থেকে উঠতে চাই না, সেখানে ফ্যান অফ করার জন্য উঠতে হয়! একটু পর আবার উঠতে হয় অন করার জন্য। কী একটা জটিলতা! আমার এক প্রতিবেশী শোনালেন আরেক জটিলতার কথা। তিনি চাপা একটা নিঃশ^াস ছেড়ে বললেন, বর্তমান সময়ের যে আবহাওয়া, এই আবহাওয়ার কারণে নাকি তার শুধু সর্বনাশই হয়নি, সাড়ে সর্বনাশ হয়ে গেছে। আমি জানতে চাইলাম, কেমন? ভদ্রলোক বললেন, কেমন, সেটা বলতে হলে পুরো ঘটনাটাই বলতে হবে। যেহেতু একটু ঠা-া পড়ে গেছে, ভাবলাম জামার ওপর কটি পরাই যায়। ব্যস, লাল পাঞ্জাবির ওপর সাদা রঙের বেশ দামি একটা কটি পরলাম। এরপর বাসা থেকে বের হতে না হতেই পড়ে গেলাম আবহাওয়ার বিটলামির খপ্পরে। মানে একটু আগে শীত শীত লাগলেও সামান্য হাঁটতেই গরম লাগা শুরু করল। তারপর যখন আরেকটু হাঁটলাম, গরম আরও বাড়ল। এতই বাড়ল যে, ঘামতে শুরু করলাম। আর এই ঘামে আমার গায়ের লাল পাঞ্জাবি ভিজে জবজবে হয়ে গেল। তারপর পাঞ্জাবির রং আমার সাদা কটিতে লেগে মোটামুটি কোনটা পাঞ্জাবি কোনটা কটি, তা আর তফাৎ করার জো থাকল না। আমার এক বড়ভাই বললেন, নভেম্বর কিন্তু চলে যাচ্ছে। অথচ এখনো নামমাত্র শীত। আগে কিন্তু এমন ছিল না। নভেম্বর মাসে পুরোপুরি শীত পড়ে যেত। এখন এই অবস্থা কেন হয়েছে বলতে পারিস? বড়ভাই ভেবেছিলেন আমি এমন উত্তর দেব, মানুষ গাছ কেটে সাবাড় করে ফেলছে। তাই প্রকৃতি আমাদের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করছে। সময়মতো শীতকে আসতে দিচ্ছে না, পড়তে দিচ্ছে না। আমি বড়ভাইয়ের প্রত্যাশামতো উত্তর না দিয়ে বললাম, শীত আমাদের বদ অভ্যাস সম্পর্কে ভালোভাবেই জেনে গেছে। এ জন্য সময়মতো আসে না, আসলেও বেশিদিন থাকে না। বড়ভাই আমার কথার ব্যাখ্যা চাইলেন। আমি বললাম, ব্যাখ্যার কিছু নেই। বেশিদিন শীত থাকলে বা বেশি করে শীত পড়লে যে অনেকেই গোসল করতে ভুলে যাবে, এটা শীত ভালোভাবেই জেনে গেছে। এ জন্য শীত সতর্ক হয়ে গেছে। কারণ, শীতের কারণে কেউ সপ্তাহের পর সপ্তাহ গোসল না করে পরিবেশ দূষণ করলে সেই দায় তো শীত এড়াতে পারবে না, তাই না? আমার এক বন্ধু বলল, আমি কিন্তু দারুণ একটা জিনিস আবিষ্কার করে ফেলেছি দোস্ত। আমি বিস্তর আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, কী? বন্ধু বলল, রোদ আর বৃষ্টি যদি একসঙ্গে হয়, তাহলে শিয়ালের বিয়ে হয়। আর এখন যে অল্প গরম, অল্প শীত মানে শীত আর গরম একসঙ্গে হচ্ছে, এই অবস্থায় কার বিয়ে হয় জানিস? মানুষের। বিশ্বাস না হলে জরিপ চালিয়ে দেখ, এই সিজনে কত লোক বিয়ে করে। জরিপ চালানো শেষ হলে আমার সঙ্গে দেখা করিস। চা খাওয়ামুনে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর