সোমবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

চলিতেছে বিয়ের মৌসুম...

আফরীন সুমু

চলিতেছে বিয়ের মৌসুম...

ইদানীং বিয়ের ধুম পড়ে গেছে। বিয়ের ছবিতে ফেসবুকের টাইমলাইন ভেসে যাচ্ছে। কদিন আগেও যে বন্ধুটি আরও বছরকয়েক সিঙ্গেল লাইফ এনজয় করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সেও বিয়ের ঘোষণা দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করল। আমি ভ্রু কুঁচকে জানতে চাইলাম, ঘটনা কী? বন্ধু বলল, আর বলিস না রে, তোর ভাবি চেঙ্গিস খান না কার কাছে যেন বিয়ের মেকআপের বুকিং দিয়েছে। পাক্কা পঞ্চাশ হাজার লাগবে। শীত পড়ে গেছে। মেকআপটা ভালো থাকবে, ছবি ভালো আসবে। তাই তোর ভাবি আর অপেক্ষা করতে রাজি হলো না। এতো টাকার মেকআপ গরমে গলে গেলে ব্যাপারটা কেমন হয় বল? আমি বললাম, করোনা চলছে যে! ও উৎফুল্ল গলায় বলল, এটাই ভালো হয়েছে। গণহারে দাওয়াত দিতে হবে না। কেউ বাদ পড়ে গেলেও চিন্তা নেই। সবচেয়ে শান্তির ব্যাপার হলো হানিমুনের ইন্দোনেশিয়ান প্ল্যানটা বাদ হয়ে গেছে। কতগুলো টাকা বেঁচে গেল বুঝতে পারছিস? সেকেন্ড ওয়েভ পুরোপুরি আসার আগেই বিয়ের ঝামেলাটা সেরে ফেলব। আশা করছি কক্সবাজার ট্রিপটাও ক্যানসেল হবে। টাকা বেঁচে যাওয়ার আনন্দে ওর মুখ ঝলমল করছে। আরেক বন্ধু বলা নেই কওয়া নেই বিয়েটা করেই ফেলল। দাওয়াত পর্যন্ত দিল না। ওর বক্তব্য, বাঁচি না মরি ঠিক নাই। হুট করে মরে গেলে বিয়ের স্বাদ এ জীবনে আর পাওয়া হবে না। মেয়েরা আরও একধাপ এগিয়ে। বিয়ে করেই যাচ্ছে, করেই যাচ্ছে। দাওয়াত না দেওয়া এক বান্ধবীর বিয়ের ধুমধাম ছবি দেখে বললাম, দাওয়াত না দিস একবার জানাতে পারতি। ওর কথা শুনে আমি রীতিমতো হতাশ। বলল ও নাকি কোনো অনুষ্ঠানই করেনি। অতিথিদের জিলাপি খাইয়ে বিয়ের কাজ সেরেছে। তবে ফটোগ্রাফি করেছে পুরোদমে। এই বুদ্ধিতে লোকে যদি বিয়ে করতে শুরু করে তবে আমার মতো বেকারদের মাসে তিন-চার দিন করে না খেয়ে থাকতে হবে। আগে ভালো জামা-কাপড় গায়ে থাকলে চট করে কোনো একটা কমিউনিটি সেন্টারে ঢুকে বিয়ের অতিথি হিসেবে খেয়ে আসা যেত। মহামারীর কারণে কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে বিয়ের আয়োজন তেমন হচ্ছে না। যাও দু-একটা হয় তাতে বেছে বেছে দাওয়াত দেওয়া গুটিকয়েক মানুষ থাকে। ধরা পড়ে যাওয়ার চান্স খুব বেশি। যেহেতু বিয়ের একটা মৌসুম চলছে, এই সুযোগে নিজেও বিয়েটা করে ফেলব কিনা ভাবছি। দুই বেকার এবং একজন সেমি বেকার বন্ধুও বিয়ে করেছে দেখলাম। আমার জন্য অবশ্য চাকরিটা প্রধান সমস্যা না। সমস্যা হলো পাত্রীটা। আমাকে বিয়ে করার মতো কোনো পাত্রী আপাতত নেই। সাবেক প্রেমিকাকে ফোন করলাম। সম্ভাবনা হিসেবে; যদি মত পাল্টে রাজি হয়। শুনলাম তারও বিয়ে হয়ে গেছে। বাচ্চাও নাকি হবে। কি কপাল! আজকাল প্রেমের ভরসা নাই। অ্যারেঞ্জ ম্যারেজই ভালো। বাবা-মা দেখেশোনে দেবে। তবু বিয়েটা হয়ে যাক। বাড়িতে ঘোষণা দিলাম বিয়ে করতে চাই। পাত্রী দেখ। মা বললেন, চাকরি হয়েছে? বেতন কত? তোর বিয়ে করা বউকে কি আমি খাওয়াব? কালক্ষেপণ করলে বিপদ বাড়বে। আমি মানে মানে কেটে পড়লাম। মনটাই খারাপ হয়ে গেল। সব ভেবে মনে হলো চিরকুমার সভায় যোগ দিই। চিরকুমার হয়ে মানুষের সেবায় পথে নেমে যাব। কিন্তু হায়! আশার শেষ বাতিটুকুও নিভে গেল। চিরকুমাররা চিরকুমারীদের বিয়ে করে চিরবিবাহিত সংগঠন খুলেছে। পরিচিত সবাই বিয়ে করে ফেললেও এই সিজনে আমার আর বিয়ে হলো না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর