সোমবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

চলো না ঘুরে আসি...

ইকবাল খন্দকার

চলো না ঘুরে আসি...

► ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ ► কার্টুন : কাওছার মাহমুদ

সেদিন আমার এক বড়ভাইয়ের সঙ্গে দেখা। কথায় কথায় তিনি বললেন, তুই তো জানিস, আমি সংস্কৃতিমনা মানুষ। একটু গান গাইতে পছন্দ করি, গান শুনতে পছন্দ করি। কিন্তু তোর ভাবিকে নিয়ে এখন পড়েছি মহাবিপদে। আমি গান গাইতে শুরু করলেই সে বাগড়া দেয়। সারা বছর যেমন তেমন, এই সিজনে নির্দিষ্ট একটা গান তো আমি গাইতেই পারি না। গাইলেই সে ডিস্টার্ব করে। আমি বললাম, কোন গানটা গাইলে ডিস্টার্ব করে, আর কী ধরনের ডিস্টার্ব করে, একটু বলা যাবে? বড়ভাই বললেন, ‘একটু’ কেন, পুরোটাই বলা যাবে। আমি বললাম, তাহলে দেরি কেন? বলে ফেলেন। বড়ভাই বললেন, গানটা হচ্ছে, ‘চলো না ঘুরে আসি অজানাতে...’। তো আমি যখনই এই গানটা গেয়ে উঠি, তখনই তোর ভাবি বলে ওঠে, অসম্ভব! খামোখা পয়সা খরচের কোনো মানে হয় না। সে এই ধরনের কথা কেন বলে জানিস? কারণ তার ধারণা ‘চলো না ঘুরে আসি’ বলা মানেই হচ্ছে আমি ভ্রমণে যেতে চাচ্ছি। আর তার মতে, ভ্রমণে যাওয়া মানে ফাউ ফাউ টাকা খরচ করা। কী একটা বেকায়দা অবস্থা বল দেখি! আমি তাৎক্ষণিক কিছু বলতে পারলাম না। তবে বিষয়টা মাথায় রাখলাম।

ওইদিনই আমার এক প্রতিবেশী বললেন, ভ্রমণের সিজনে একটু ভ্রমণ না করলে ভালো লাগে না। চলেন একটু কক্সবাজার থেকে ঘুরে আসি। পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন আরেক প্রতিবেশী। তিনি এগিয়ে এসে বললেন, এই এক সমস্যা আপনাদের। ভ্রমণের পরিকল্পনা করলে প্রথমেই সিলেক্ট করেন কক্সবাজার। আর এতে আমার মতো অভাগা স্বামীদের যে কী পেরেশানিতে পড়তে হয়, সেটা বিবেচনা করেন না। আমি তার কথার আগামাথা বুঝতে না পেরে অনুরোধ করলাম ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলার জন্য। প্রতিবেশী বললেন, এত বুঝিয়ে বলার কিছু নেই ভাই। খুব সিম্পল ব্যাপার। আমি যতবার বলি কক্সবাজার বেড়াতে যাব, ততবার আমার বউ হাতে বাজারের ব্যাগ ধরিয়ে দেয়। কারণ, ‘কক্সবাজার’ শুনলেই নাকি তার কাঁচাবাজারের কথা মনে পড়ে যায়। আমার এক ছোটভাই বলল, গত সপ্তাহে ঘুরতে গিয়েছিলাম ভাই। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। এখন পুষিয়ে নেওয়ার জন্য সারা দিন ঘরে বসে থাকতে হচ্ছে। আমি তার কথাটা বোঝার জন্য মাথা খেলানোর চেষ্টা করলাম। কাজ হলো না। সে আমার অবস্থা বুঝতে পেরে বলল, আসলে হয়েছে কী ভাই, কোনো জায়গায় ঘুরতে গিয়ে ওই জায়গার সৌন্দর্য উপভোগের নিয়ম থাকলেও আমরা উপভোগ করতে পারিনি। কারণ, ছবি আর সেলফি তোলা নিয়ে এত বেশি ব্যস্ত ছিলাম যে, জায়গার দিকে তাকাতে পারিনি। সারাক্ষণ ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। কিন্তু এক জায়গায় ঘুরতে গেছি, সেখানকার রূপ-সৌন্দর্য সম্পর্কে একেবারেই ওয়াকিফহাল না থাকলে কেমন হয়! এই জন্য এখন করছি কী, সব ছবি এবং সেলফি ল্যাপটপে ঢুকিয়ে বসে বসে ব্যাকগ্রাউন্ড দেখছি আর অনুমান করার চেষ্টা করছি, যে জায়গাটায় ঘুরতে গিয়েছিলাম, সেই জায়গাটা আসলে দেখতে কেমন ছিল। আমার এক বন্ধু বলল, মানুষ ঘোরাঘুরিতে যাচ্ছে, ভ্রমণ করছে, এটা ঠিক আছে। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধিটা তো মানবে। খুব কম লোকই মাস্ক পরছে, ভাবা যায়?

এবার এই বন্ধুর সঙ্গে থাকা লোকটা বলে উঠল, অন্যদের কথা জানি না। আমি ভ্রমণে মাস্ক ছাড়া গিয়েছিলাম একটা কারণে। আসলে আমার ডাক্তার বলেছিলেন হাওয়া বদল করার জন্য। তো আমি ভ্রমণে গিয়েও যদি মাস্কই পরে থাকি, তাহলে আর হাওয়া বদল হলো কোথায়? আমি ভদ্রলোকের কথায় পাত্তা না দিয়ে বন্ধুকে বললাম, আমরা না হয় স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ভ্রমণ করব। চল একটা ভ্রমণের ব্যবস্থা করা যাক। বন্ধু ফিসফিসিয়ে বলল, আস্তে বল। কেউ শুনে ফেলবে। আমি বললাম, ভ্রমণ তো ভালো জিনিস। কেউ শুনলে সমস্যা কোথায়?

বন্ধু বলল, সমস্যা আছে। গতবার আমাদের বিল্ডিংয়ের ছাব্বিশটা ফ্যামিলির সবাই বাস ভাড়া করে ভ্রমণে গেলাম। ওইদিনই বিল্ডিংয়ে চুরি হলো। যাকে বলে ধামাকা চুরি। বিশ্বাস করবি না, চোররা আমার স্যান্ডো গেঞ্জিটা পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর