সোমবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনায় চুলের যত্নে ইউটিউব

আফরীন সুমু

করোনায় চুলের যত্নে ইউটিউব

যেদিন থেকে সিরিয়াসলি মনস্থির করেছি সেদিন থেকেই ইউটিউব আমাকে ক্রমাগত চুলের যতেœর হোম রিমেডি দেখিয়ে যাচ্ছে। এত এত শতভাগ কার্যকরী উপায় দেখে রীতিমতো ধাঁধায় পড়ে গেলাম...

 

মাথায় চুল আছে তবে চুল পড়ে না এমন মানুষ বোধহয় দুনিয়ায় একজনও খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমার বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ। পাত্রীপক্ষের মুখোমুখি হওয়ার আগেই মাথার তালু দেখা যাচ্ছে। আজকাল মাথার একটি চুলের জন্যও প্রাণ করে হায় হায়। করোনা আসার আগে কাজের ব্যস্ততা ছিল। রোজ ভাবতাম চুলের যত্নটা আজই শুরু করব। দু-চারজনের বুদ্ধি-পরামর্শে টকদই, মেহেদি গুঁড়ার মতো টুকটাক কেনাকাটাও করে রেখেছিলাম। কিন্তু জ্যাম, গরম, গ্যাঞ্জাম, কাজের চাপ, ধুলাবালি সব ঠেলে বাসায় ফিরে আর চুলের দিকে তাকানোই হতো না। রোজ সকালে অফিসে যাওয়ার আগে মাথায় চিরুনি চালালে যখন গোছায় গোছায় চুল উঠে আসত তখন মনে হতো, নাহ আজ থেকে শুরু করতেই হবে। বাসায় ফিরে আবার আগের মতোই দিনকাল। মাঝে মাঝে মনে হতো দিন পনেরো ছুটি পেলে মন্দ হতো না। যত্ন আত্তি করে একেবারে মাথার চুল শাহরুখ খানের মতো করে ফেলতাম। করোনা শুরু হওয়ার পর বাঁচামরা, চাকরি নানা টেনশনে চুলের কথা ভুলেই গেলাম। বরং অফিসে যাওয়ার আগে যাও বা একবার চিরুনি লাগানো হতো তাও বন্ধ হয়ে গেল। কয়েক দিন পর শুরু হলো লাগাতার ছুটি। এক বন্ধুর সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলতে গিয়ে খেয়াল করলাম, আমার কম দামি ফোনের ঘোলা ক্যামেরায়ও আমার ফাঁকা তালু স্পষ্ট। নাহ, আর গড়িমসি নয়। এবার চুলের যত্নে মন দিতেই হয়। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এক অভাবনীয় পর্যায়ে চলে গেছে সে আমি টের পেলাম এই চুলের যত্ন প্রসঙ্গে। যেদিন থেকে সিরিয়াসলি মনস্থির করেছি সেদিন থেকেই ইউটিউব আমাকে ক্রমাগত চুলের যত্নের হোম রিমেডি দেখিয়ে যাচ্ছে। এত এত শতভাগ কার্যকরী উপায় দেখে রীতিমতো ধাঁধায় পড়ে গেলাম। ভাবলাম হাতে যেহেতু সময় আছে, সবই একটা একটা করে চেষ্টা করতে শুরু করি। একটা না একটা তো কাজ করবেই। খাতা-কলম নিয়ে বসলাম। কত রকমের উপকরণ লাগবে সেগুলো লিখে ফেলব। কোনো এক দিন বের হয়ে যেখান থেকে পাড়ি সব জোগাড় করে আনব। করোনার মধ্যে হয়তো খানিকটা বেগ পেতে হবে। তবে পরিশ্রমই সাফল্যের চাবিকাঠি, সেই সূত্র অনুযায়ী পরিশ্রম তো করতেই হবে। উপকরণ শুরু হলো- নিমপাতা, পিঁয়াজ, শিকাকাই, আমলা, মেথি, কালিজিরা, টকদই ইত্যাদি দিয়ে। এরপর একে একে পেয়ারা পাতা, আমপাতা, জামপাতা, এমনকি ধনিয়া পাতা পর্যন্ত লিস্টে ঢুকে যাচ্ছে। ডিম, আলু, ফুলকপিও বাদ যাচ্ছে না। আমি ভয়ে খাতা বন্ধ করলাম, এবার আদা, রসুন, কাঁচামরিচ- এসব যদি চলে আসে! এক বন্ধু বুদ্ধি দিল ফেসবুকের গ্রুপগুলোতে সমস্যা লিখে সমাধান চেয়ে পোস্ট করলে অনেক অভিজ্ঞ লোকজনের পরামর্শ পাওয়া যায়। সে চেষ্টাও করলাম। দুই-এক পরামর্শ প্রয়োগে আমার চুল পড়ার হার ঝড়ের বেগে বৃদ্ধি পেল। বাতাস লাগলেও গোড়াসুদ্ধ চুল আসছে। মনের দুঃখে ফেসবুক, ইউটিউব, গুগল সব বন্ধ করে দিলাম। একটা বাটন মোবাইলে সিম কানেক্ট করে সারা দিন খাই দাই ঘুমাই। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, কয়েক দিনের মাথায় চুল পড়া কমে গেল। এমনকি নতুন চুল গজাচ্ছে। আনন্দ রাখার জায়গা পাচ্ছি না। এখন ভাবছি এই আইডিয়াটা নিয়ে একটা ভিডিও বানিয়ে ইউটিউবে আপলোড করলে কেমন হয়। অথেনটিক শতভাগ কার্যকরী চুল গজানোর উপায়।

 

সর্বশেষ খবর