সোমবার, ৪ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

নতুন বছরের দাবি

আফরীন সুমু

নতুন বছরের দাবি

করোনা, শীত, বাজারে আগুন, টাকা-কড়ির সংকট- সবকিছু উপেক্ষা করে নতুন বছর চলে এলো। শুরু যেহেতু হয়ে গেছে এবার ভালোয় ভালোয় পার করতে পারলেই হয়। মফিজ ঠিক করেছে নতুন বছরের প্রথম দিন থেকেই সাংসারিক দাবি-দাওয়াগুলো পাকাপোক্ত করে নেবে। ভেবে দেখলাম মন্দ নয়। সারা বছর প্যান প্যান করার চেয়ে শুরুতেই সেটেল করে নেওয়া ভালো। ঠিক হলো একত্রিশ তারিখ রাতে সব দাবি-দাওয়া উত্থাপিত হবে এবং পয়লা জানুয়ারি থেকে কার্যকর। মফিজ রাইটিং প্যাড নিয়ে বসে গেল। অনেক দাবি-দাওয়া তার। দফায় দফায় চা খাচ্ছে আর লিখছে। মাঝে আমি দুই বার এসে তাড়া দিলাম। তবু শেষ হয় না। সাংঘাতিক খাটাখাটুনি করে সন্ধ্যায় ওর লেখা শেষ হলো। আমি সব কাজ শেষ করে চিনি, লিকার বেশি দিয়ে ওর পছন্দমতো দুই কাপ চা বানিয়ে ছাদে পাটি পেতে বসলাম। পারস্পরিক বোঝাপড়ার ব্যাপার বলে কথা। মফিজ দিস্তাখানেক কাগজ নিয়ে ছাদে এলো। আমার হাতে কাগজ-কলম না দেখে জিজ্ঞাসা করল, তোমার খাতাপত্র কই? কি কি লিখলে? আমি মুচকি হেসে বললাম, মাথায় সেট করা আছে। এক এক করে তোমার গুলো বলে ফেল। তারপর আমি বলছি। ও এক তাড়া কাগজ তুলে পড়তে শুরু করল। দাবি নম্বর এক. শীতকালে ঘুম থেকে তোলার জন্য ঠা-া পানির ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে এবং গরমকালে ফ্যান বন্ধ করে দিয়ে ঘুম ভাঙানো যাবে না। দাবি নম্বর দুই. সকালের নাস্তায় বৈচিত্র্য আনতে হবে। রোজ পরোটা আর ডিমপোচ দেওয়া যাবে না। তিন. চুল কাটার জন্য অহেতুক যন্ত্রণা দেওয়া বন্ধ করতে হবে। জেমসের মতো না হলেও কবি নজরুলের মতো চুল রাখতে চাই। চার. মনের ভুলে বাইরের স্যান্ডেল নিয়ে ঘরে ঢুকে গেলে কিংবা বাথরুমের স্যান্ডেল পরে বাইরে চলে গেলে চিৎকার করে বাসা মাথায় তোলা যাবে না। এবং এই তুচ্ছ অজুহাতে সারা ঘর ঝাড়– দেওয়ানো যাবে না। পাঁচ. নতুন বছরে আমার জোর দাবি, দুই দিন পর পর শাক, ছোট মাছ ইত্যাদি খাবার বিদায় করতে হবে। বছরে দুই-এক দিন রান্না হলেও তা খাওয়া না খাওয়ার পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে। ছয়. মাসে কমপক্ষে তিন-চার দিন কাবাব, টিকিয়া, রেজালার মতো সুস্বাদু আইটেম রান্না করতে হবে। এবং ভেজিটেবল স্যুপ নামক অত্যন্ত জঘন্য খাদ্যটি নতুন বছরে আমরা আর কখনোই খাব না। যখন তখন এটা সেটা কিনে ফেলা যাবে না, বেতনের ন্যূনতম অর্ধেক টাকা ওর হাতে থাকবে ইত্যাদি আরও শ খানেক দাবি ঘণ্টাদুয়েক ধরে শুনলাম। রীতিমতো ঘুম চলে এলো। তবে বিনা বাক্যব্যয়ে আমি ওর সব দাবি মেনে নিলাম। মফিজ খুবই অবাক! ওর মুখটা হলো দেখার মতো। দুই মিনিট পর ধাতস্ত হয়ে যখন আমার দাবি-দাওয়া জানতে চাইল, আমি হাই তুলতে তুলতে বললাম, আমার মোটে একটাই দাবি। মফিজ আবারও ধাক্কা খেল। বল কি? মাত্র একটা? আমি বললাম, হ্যাঁ। আমি তোমার সব দাবি মেনে নিয়েছি। তুমি কি আমার একটা দাবি মানবে না? বলল, মানব না কেন? অবশ্যই মানব। আমি বললাম, সংসারের মঙ্গলের জন্য অর্থনীতি, সুস্বাস্থ্য, পরিচ্ছন্নতা ও অন্যান্য দিক বিবেচনা করে আমি যেসব সিদ্ধান্ত নেব, আদেশ ও অনুরোধ করব তার কোনোটিতেই কোনো ধরনের আপত্তি তোলা যাবে না। আমার কোনো সিদ্ধান্ত যদি তোমার দাবি- দাওয়াকে অতিক্রম করে তবে তা হবে সংসারের বৃহৎ স্বার্থে ক্ষুদ্র স্বার্থের আত্মত্যাগ। পুরো বছরটা কেমন যাবে জানি না, তবে বছরের প্রথম দিনই মফিজ আমার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিল। ফেসবুকে স্যাটাস দেখলাম, ও নাকি সংসার, বাড়ি সব ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যাবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর