সোমবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

আমরা আছি ফেসবুকে

তানভীর আহমেদ

ফেসবুকে তারা যখন জাবর কাটেন তখন তাকে বলা হয়, স্রোতের বিপরীতে অনলাইনে চলা। অনলাইনে স্রোতের বিপরীতে চলে ডুবে যাওয়ার কোনো ভয় নেই। ভয় আছে, শত চেষ্টা করেও ডুবে না গেলে...

 

দশ-বিশ বছর আগে দেখা যেত, কারও কারও পেশা ছিল মহল্লার চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দেওয়া। তাদের অনেকেই এখন ফেসবুকে বসবাস করেন। সব বিষয়ে তারা বিশেষজ্ঞ। বাস্তব জীবনে তার বেশির ভাগ কথা পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব, স্বজন, প্রতিবেশী এমনকি তার কাছে ‘দুই মাস ধরে দুই শ টাকা পায়’ এমন ব্যক্তিও গোনায় ধরেন না। তার কথায় বড়জোর মাথা নাড়ান মহল্লার চায়ের দোকানদার। অবশ্য তিনি আসলে মাথা নাড়ান অন্য কারণে। একটানা চা বানাতে গিয়ে ঘাড়-মাথা ধরে আসে। তখন ঘাড়ের পেশির অস্বস্তি কাটাতে ঘাড়-মাথা নাড়াতে হয় আরকি। এসব ফেসবুক পাড়ায় এখন ওপেন সিক্রেট। ফেসবুকে যিনি বলেন তিনি চা খেতে এসেছেন। আর যিনি শোনেন, তিনি আছেন চায়ের দোকানদারের ভূমিকায়। কেউ কেউ আবার এই দুজনের মধ্যে ফেঁসে গেছেন। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় বড় ভাই অথবা পাড়াতো চাচা টাইপ কেউ তাকে ডাক দিয়েছেন। এক কাপ চা খাওয়াবেন। যদিও তার উদ্দেশ্য পরিষ্কার, আরও মিনিটবিশেক জ্ঞান ঝাড়বেন। আমরা সবাই জানি, পৃথিবীর সব বিষয়ে তারা পিএইচডি, স্বর্ণপদক ও কামরূপ-কামাখ্যা থেকে বহু টাইটেল জয় করেছেন। তাদের বেশির ভাগই কী করা উচিত ও কী কীভাবে করবেন এ বিষয়ে পরামর্শ দিতে ওস্তাদ। ফেসবুকে তারা কী বললেন, সত্যি বলতে তা নিয়ে কারোরই কিছু যায় আসে না। তবু যেহেতু বেকার, অলস, অকর্মণ্যের জীবন কাটছে, তাদেরও কিছু করা চাই, বলা চাই। ভুলে গেলে চলবে না, একটা গরুও অবসরে জাবর কাটে। ফেসবুকে তারা যখন জাবর কাটেন তখন তাকে বলা হয়, স্রোতের বিপরীতে অনলাইনে চলা। অনলাইনে স্রোতের বিপরীতে চলে ডুবে যাওয়ার কোনো ভয় নেই। ভয় আছে, শত চেষ্টা করেও ডুবে না গেলে। কান্ডজ্ঞানহীন যা-তা বলার বলেও যদি কোনো জায়গা করতে না পারেন তাহলে ফেসবুকে আপনি পড়বেন সাহারা মরুভূমিতে। সবাই জানবে, আপনি আসলে এতদিন সাহারা মরুভূমিতে সাঁতরানোর চেষ্টা করছিলেন। আর গলা উঁচিয়ে বলছিলেন, আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে যাচ্ছি, ফ্রেন্ডস! ফেসবুকে আমরা সবাই সবার ফ্রেন্ড বা বন্ধু। তাই লেখা আছে। যা লেখা নেই তা হলো,  ফ্রেন্ড শব্দটা লেখা না থাকলে তা আমরা যানতামই না!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর