পল্টু দুই দিন গিটার বাজাতে চেষ্টাও করেছিল। আঙুলে ব্যথা লাগে বলে পরে আর বাজায়নি। আলমারির ওপরে কাপড়ে মুড়িয়ে গিটার তুলে সেই যে রাখা হয়েছিল, আর নামানো হয়নি...
নতুন বছরে অনেকেই রিজুলিউশন দেয়, মানে পরিকল্পনার সারসংক্ষেপ। পল্টুও তাই দিল। বছরদুয়েক আগে সে বলেছিল, গিটার বাজানো শিখবে। কারণ সে খেয়াল করেছে গিটার বাজাতে পারলে নারীমহলে একটু বেশি পাত্তা পাওয়া যায়। ফেসবুক পোস্টে লাইকও বেশি জুটে। তাই গত বছরের শুরুতে ঘোষণা দিয়ে বাসায় একটা গিটার কিনে এনেছিল। কয়েক দিন গিটার হাতে ইচ্ছামতো ছবি তুলে পোস্ট করেছিল। কমেন্টে অনেকেই উৎসাহ দিয়েছিল। পল্টু দুই দিন গিটার বাজাতে চেষ্টাও করেছিল। আঙুলে ব্যথা লাগে বলে পরে আর বাজায়নি। আলমারির ওপরে কাপড়ে মুড়িয়ে গিটার তুলে সেই যে রাখা হয়েছিল, আর নামানো হয়নি। তারও আর গিটার শেখা হয়নি। গত বছর সে ভেবেছিল অনেক গল্পের বই পড়বে। কারণ সে খেয়াল করেছে সংখ্যা হিসেবে বই পড়ার ঘোষণা আজকাল একটা ট্রেন্ড। তাই বছরের শুরুতেই সে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জানিয়ে দিয়েছিল। এ বছর সে পঞ্চাশটা বই পড়বে। শুধু ঘোষণা দিলেই তো হবে না, বই কিনতে হবে, একের পর এক বইয়ের দালান সাজিয়ে ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট দিতে হবে। ছবিতে লাইকের সঙ্গে কমেন্ট এলে সেখানে উত্তর দিতে হবে। মাঝে মধ্যে বারান্দায়, বিছানায়, ছাদে চায়ের কাপ পাশে রেখে বিভিন্ন বই হাতে ছবিও তুলতে হবে। পল্টু সবই করেছিল। বইয়ের প্রতি তার ভালোবাসা দেখে বন্ধুমহলে তার নামই হয়ে গিয়েছিল বইখেকো। বিভিন্ন বইয়ের গ্রুপে পল্টুকে আমন্ত্রণ জানানো হলো বই নিয়ে কথা বলতে। যেহেতু বই নিয়ে কথা বলতে হবে তাই বাধ্য হয়েই তাকে কিছু বই নিয়ে বসতে হয়েছিল। কিন্তু সমস্যা হলো, পড়তে বসলেই তার ঘুম পায়। দুই পাতা পড়তে না পড়তেই তার চোখে রাজ্যের ঘুম চলে আসে। এভাবে বই খুলে পড়তে বসলেও একটা বইও সে পুুরোপুরি শেষ করতে পারেনি। তার ‘রিজুলিউশন’ পূরণ হয়নি। পঞ্চাশটা বই পোঁটলায় বেঁধে আলমারির ওপরে গিটারের পাশে ফেলে রাখা হলো। যেহেতু বছর ঘুরে নতুন বছর এসেছে তাই সবার দেখাদেখি এ বছরও সে নতুন বছরের রিজুলিউশন ঠিক করল। তবে এ বছর সে গতবারের মতো কিছু করল না। উল্টো পল্টু লিখল, ‘এই বছর আমার রিজুলিউশন হচ্ছে আর কোনো রিজুলিউশন তৈরি না করা।’ আশ্চর্যজনকভাবে এবারের পোস্টে সে সবচেয়ে বেশি লাইক পেল। রিজুলিউশন তৈরি না করাই তার জন্য সবচেয়ে বড় রিজুলিউশন!