আমার এক বড় ভাইকে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞাসা করলাম, এখানে কী করছেন? বড় ভাই বললেন, কী আর করব! এমনি দাঁড়িয়ে আছি। কপালদোষে দাঁড়িয়ে আছি। নইলে কেন এখন আমাকে মার্কেটে যেতে হবে আর কেন রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হবে। আমি আমার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেলাম। তবে ইতিমধ্যে মনে নতুন প্রশ্নের জন্ম হয়ে গেছে। বললাম, মার্কেটে যাওয়া বা রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে থাকার সঙ্গে কপালদোষের কী সম্পর্ক? বড় ভাই বললেন, বিরাট সম্পর্ক। একেবারে শালা-দুলাভাই সম্পর্কের মতো ঠাট্টা-ইয়ার্কির সম্পর্ক। বলেই একটা বিদ্রপের হাসি দিয়ে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন বড় ভাই। তারপর বললেন, তোর ভাবি গত এক মাস ধরে হুডি হুডি করে জ্বালিয়ে মারছে। এমনভাবে জ্বালাচ্ছিল, যেন হুডি না পরলে সে শীতে মারা যাবে। তার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে গতকাল একটা হুডি কিনে আনলাম। হুডিটা বেশ দামি। কালারটাও সুন্দর। কিন্তু এখন সে কী বলে জানিস? হুডি নাকি লাগবে না। আমি জিজ্ঞাসা করলাম কেন লাগবে না, সে সন্তোষজনক কোনো উত্তর দিতে পারেনি। এখন আমাকে এই জিনিস ফেরত দেওয়ার জন্য মার্কেটে যেতে হচ্ছে। দোকানদারকে কী বলব বল! ওরা কি বিক্রীত মাল ফেরত নেয়? আমি কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললাম, দোকানদারকে একটা কথা বলে দেখতে পারেন। বলবেন মাস্কের কালারের সঙ্গে হুডির কালার ম্যাচ করছে না, তাই বউ হুডিটা পছন্দ করছে না। বড় ভাই এবার আগুনচোখে আমার দিকে তাকালেন এবং রিকশায় উঠে পড়লেন। বাসায় ফেরার পথে আমার এক ছোট ভাইয়ের সঙ্গে দেখা। আমাকে বলল, কথা আছে। তারপর গলির মতো একটা জায়গায় দাঁড়াল। আমি তার মুখোমুখি দাঁড়ালাম। এই কথা সেই কথা বলার পর সে বলল, প্রায় পাঁচ বছর ধরে একটা মেয়ের পেছনে ঘুরছি ভাই। মেয়েটা আমাকে পাত্তাই দিচ্ছিল না। আমিও নাছোড়বান্দা। পেছনে লেগে থাকলাম। অবশেষে গত সপ্তাহে মেয়েটা সায় দিল। আর আমিও বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেলাম। তবে এই মেয়ের সঙ্গে না। মা-বাবা যে মেয়েটা পছন্দ করেছে, তার সঙ্গে। আমি তাজ্জব হয়ে বললাম, এসব তুই কী বলছিস! যার পেছনে এতদিন ঘুরলি, সে রাজি হলো আর তুই কিনা... আমাকে কথা শেষ করার সুযোগ না দিয়েই ছোট ভাই এই বাণী দিতে দিতে চলে গেল, চাওয়ার মধ্যে একটা আনন্দ আছে। পেয়ে গেলে সেই আনন্দটা থাকে না। এবার একটু ছাত্রজীবনে ফিরে যাওয়া যাক। আমার এক ইয়ারমেট অতিষ্ঠ করে তুলল নোটের জন্য। আমি তাকে এইদিন দেব না ওইদিন দেব, এমন বলে বলে বেশ কদিন ঘোরালাম। অবশেষে চিন্তা করলাম, আর কত! এবার দিয়ে দিই। তাকে রুমে ডাকলাম। নোট হাতে দিয়ে অপেক্ষায় থাকলাম বিরাট একটা ধন্যবাদ পাওয়ার জন্য। কিন্তু হায়! ধন্যবাদ কোথায়? সে নোট উল্টিয়ে-পাল্টিয়ে দেখে বলে কী, নরমাল পেপারের ফটোকপি? নাহ্, এই নোটগুলো নেওয়া ঠিক হবে না। দেখি কারও কাছে অফসেট পেপারেরটা পাই কিনা। আমার এক প্রতিবেশীর বাসায় বেশ চেঁচামেচি শোনা যাচ্ছিল। কী হয়েছে জানার জন্য এগিয়ে গেলাম। তবে কারণ জিজ্ঞাসা করতে হলো না। প্রতিবেশী আমাকে দেখেই বলতে লাগলেন, কেমন লাগে বলেন! এতদিন ধরে ফাজিল ছেলেটা সাইকেল, সাইকেল করে মাথা খারাপ করে ফেলেছে। আজকে সাইকেল কিনে আনলাম। আর সে বলে কিনা দরকার নেই। আমি ছেলেটার সঙ্গে কথা বলতে চাইলাম। প্রতিবেশী আমাকে ছেলের কাছে নিয়ে গেলেন। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম এতদিন ধরে যে জিনিস চাচ্ছে, এখন সেটা নিচ্ছে না কেন। ছেলে আমার প্রশ্নের জবাব দেওয়ার আগেই তার মা এগিয়ে এসে তার পক্ষ নিলেন। হিন্দি সিরিয়ালের অভিনেত্রীদের মতো ঠোঁট-মুখ বাঁকা করে বললেন, সাইকেল চেয়েছিল ১৫ বছর বয়সে। এখন তার বয়স ২২। আবদার পূরণ করতে একটু দেরি হয়ে গেছে তো... আজকাল সে মোটরসাইকেল চায়।