সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

শীত চলে যায়

ইকবাল খন্দকার

শীত চলে যায়

♦ ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ ♦ কার্টুন : কাওছার মাহমুদ

আমার এক বড়ভাই বললেন, চুলের শ্যাম্পু কিনতে গিয়ে বাড়তি খরচ হচ্ছে রে। বিশ্ব অর্থনীতির এই ভঙ্গুর পরিস্থিতিতে বিষয়টা নিয়ে খুব চিন্তায় আছি। আমি বললাম, ঘটনা কী, একটু ভেঙে বলেন। বিশ্ব অর্থনীতির কোনো খবরই যে আপনি রাখেন না, সেটা জানা আছে। বড়ভাই আমার কথা আমলে নিলেন না। তার মতে, যার-তার কথা কানে তোলার কিছু নেই। কানের ওপর চাপ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানি। তবুও বললেন, ঘটনা আসলে তেমন কিছু না। বছরের এই সময়টায় শীত চলে যায় তো! শীত চলে গেলে যেটা হয়, ফ্যান চালাতে হয়। তো দীর্ঘ বিরতির পর ফ্যান চালালে ফ্যানে লেগে থাকা যাবতীয় ময়লা-ধুলাবালি হুড়মুড়িয়ে পড়ে। কোথায় পড়ে? মাথায়। তো মাথাভর্তি চুল থাকলে এই ময়লাগুলো পরিষ্কার করতে যারপরনাই বেগ পেতে হয়। কত শ্যাম্পু যে খরচ হয় জানিস? আমি বললাম, জানি। কত মিলি বোতলের দাম কত, বলব? তিনি আর উত্তর দিলেন না। কানের ওপর চাপ কমাচ্ছেন মনে হয়। সেদিন আমার এক ছোটভাই বলল, কী আর বলব বলেন। কয়দিন আগে কম্বল ছাড়া চলত না। আর এখন কম্বলের দিকে তাকালেই গরম লাগে। আমি বললাম, যেহেতু কম্বলের দিকে তাকালে গরম লাগে, এক কাজ করিস, কম্বলের দিকে তাকানোর পরপরই ফ্রিজের দিকে চোখ ঘুরিয়ে নিস। আশা করা যায় একটা ভারসাম্য অনুভূত হবে। আমার এক প্রতিবেশী বললেন, ভাইরে, সদ্য অতীত হওয়া দিনগুলো খুব মিস করি। আহা, কী দিন ছিল! জাস্ট শীতকে কেন্দ্র করে যে দাম্পত্য জীবনে এত শান্তি আসতে পারে, ভাবা যায় না। আমি বললাম, কী হয়েছে, একটু যদি বুঝিয়ে বলতেন। প্রতিবেশী বললেন, আসলে বুঝিয়ে বলার কিছু নেই। আপনার ভাবি সারাক্ষণই কানের কাছে ঘ্যানর ঘ্যানর করে। আমি যে তাকে কানের কাছ থেকে সরতে বলব, সেটা সম্ভব ছিল না। এ জন্য করতাম কী, কানটুপি পরে বসে থাকতাম। মাফলার পেঁচিয়ে বসে থাকতাম। ক্ষেত্রবিশেষে কম্বলের ভিতর মাথা ঢুকিয়ে ফেলতাম। এতে ঘ্যানর ঘ্যানর অনেকটাই সহনীয় মাত্রায় চলে আসত। কিন্তু এখন শীত নেই। এখন তো আর কানটুপি বা মাফলার পরে থাকা যায় না। যদি পরি, বউয়ের নজরে পড়ে যাব না? আমি বললাম, এটা খারাপের কী আছে? স্ত্রীর নজরে পড়লে সমস্যা কোথায়? সে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলল, আমার গার্লফ্রেন্ড শুনলে খুব মাইন্ড করবে। কথা আর বাড়ালাম না। কথা টেনে বাড়িয়েছে আমার এক চাচাতো ভাই। সে বলল, সবাই বলে, শীত গেছে তো এক বছরের জন্য গেছে। তার মানে এক বছরের মধ্যে আর শীতের আমেজ পাওয়া যাবে না। আর আমি বলি, বাসার নেট কানেকশন শক্তিশালী হলে এবং বিশ^বিখ্যাত সাইটগুলোর সঙ্গে পরিচয় থাকলে সারা বছরই শীতের আমেজ পাওয়া সম্ভব। আমি ঠাট্টা করে বললাম, ওইসব সাইট থেকে শীত ডাউনলোড করিস নাকি? চাচাতো ভাই বলল, শীত ডাউনলোড করি না রে পাগলা। ডাউনলোড করি ভূতের ছবি। আর গভীর রাতে ভূতের ছবি দেখলে সব  বেটার গায়ের রক্ত হিম হয়। গায়ের রক্ত হিম হলে শীতের আমেজ পাওয়া ছাড়া উপায় আছে? আমার এক বন্ধু বলল, শীতকাল চলে যাওয়ার পর যে সময়টা আসে, এই সময়টায় আমি ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পারি, আমার বয়স হয়েছে। আমি বললাম, বয়স হলে তো সেটা সারা বছরই উপলব্ধি করতে পারার কথা। শুধু বছরের এ সময়ে করবি কেন? বন্ধু বলল, না মানে শীতের বিরতির পর যখন আবার এসি চালাতে হয়, তখন টিভি রিমোট আর এসির রিমোটের মধ্যে তালগোল পাকিয়ে ফেলি। একটু আগেও মনের ভুলে টিভির রিমোট দিয়ে এসি চালাতে গিয়ে রিমোটের বাটন টিপতে টিপতে রীতিমতো বসিয়ে দিলাম। এই রিমোট আর কাজ করবে বলে মনে হয় না। আচ্ছা, টিভির রিমোট আলগা কিনতে পাওয়া যায় না?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর