সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

ধরা খাওয়া এক মজনু

রাফিউজ্জামান সিফাত

ধরা খাওয়া এক মজনু

জুলেখা ফিরে এসেছে। জুলেখা মজনুর একমাত্র প্রেমিকা। কক্সবাজার বেড়াতে নিয়ে যায়নি বলে মাসদুয়েক আগে সে মজনুর সঙ্গে বেজায় অভিমান করে। অভিমান থেকে রাগ। রাগ করে জুলেখা হাতের মোবাইলখানা ছুড়ে মারে। শক্ত কভার থাকায় মোবাইলের কিছু হয়নি, কিন্তু মজনুর কপাল ফেটে যায়। ‘ও মাগো’ আর্তচিৎকারে মজনু তার ফাটা কপাল ধরে মুখ ফসকে বলে ফেলে, ‘ব্রেকআপ ব্রেকআপ ব্রেকআপ’। বলেই মজনু বুঝতে পারে, কাজটা ঠিক হয়নি। সে লাফ দিয়ে জুলেখার কাছে ছুটে যায় ক্ষমা চাইতে। তার আগেই জুলেখা ‘গেলাম গা’ বলে চলে যায়। মজনু কাঁদে। সারা দিনরাত কাঁদে। কাঁদতে কাঁদতে ছবি তুলে জুলেখাকে ওয়াটসআপে মেসেজ পাঠায় ‘জুলেখা ফিরে এসো’। মজনুর মেসেজের উত্তর দেওয়া দূরের কথা জুলেখা মেসেজ খুলেও দেখে না। টমেটোর সস কিনে মজনু হাতে লেখে ‘জুলেখা ফিরে এসো’ তারপর ভোঁতা ব্লেড হাতের ওপর রেখে জুলেখাকে ভিডিও কল করে। জুলেখা লাইন কেটে দেয়। মজনু জুলেখাদের বাড়ির নিচে বসে থাকে, চক দিয়ে রাস্তায় লিখে, ‘জুলেখা ফিরে এসো।’ জানালায় জুলেখাকে দেখলে হাত ইশারায় সে রাস্তায় লিখে রাখা লেখা দেখায়। জবাবে জুলেখা দেখায় ছেঁড়া স্যান্ডেল। মজনু হাল ছাড়ে না। ফেসবুক পোস্টে ‘জুলেখা ফিরে এসো’ স্ট্যাটাস বুস্ট করে সে সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়। এভাবে দুই মাস ‘জুলেখা ফিরে এসো’ ক্যাম্পেইন চালিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রমের পর জুলেখার মন গলে। সে মজনুর কাছে ফিরে আসতে রাজি হয়। ফিরে এসেই সে মজনুর ফেসবুকের পাসওয়ার্ড চেয়ে নিয়ে মজনুর ফেসবুক লিস্টের সব মেয়েকে আনফ্রেন্ড করে দেয় এবং পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে ফেলে। মজনু কিছু বলে না। জুলেখা ফিরে এসেছে তাতেই সে খুশি।

দুদিন পর জুলেখা আবদার করে তাকে সাজেক বেড়াতে নিয়ে যেতে হবে। মজনু রাজি হয়। আগেরবার কক্সবাজারের স্মৃতি তাকে তাড়া করে ফেরে। তাই এবার সঙ্গে সঙ্গে জুলেখাকে সঙ্গে নিয়ে সে সাজেক ঘুরিয়ে আনে। সাজেক থেকে ঘুরে এসে জুলেখা জানায় তার মোবাইলটা পুরনো হয়ে গেছে, লেটেস্ট মোবাইল লাগবে। মজনুর ফাটা কপালের দাগ এখনো শুকায়নি। সে কপালে হাত বুলাতে বুলাতে নিজের ব্যাংক আকাউন্ট চেক করে। সম্বল যা আছে সেটা দিয়েই জুলেখাকে মোবাইল কিনে দেয়। নতুন মোবাইল উপলক্ষে জুলেখার বান্ধবীদের রেস্টুরেন্টে খাওয়ায়। খেতে খেতে জুলেখা জানায়, তার ছোটভাই সারা দিন মোবাইলে ভিডিও গেমস খেলে, তারও একটা মোবাইল লাগবে। জমানো সব টাকা শেষ। মজনু ধারদেনা করে সেটাও কিনে দেয়। তবুও মজনু খুশি, কারণ জুলেখা ফিরে এসেছে। মজনু খুশি হলেও জুলেখা খুশি হয় না। ফিরে আসার পর থেকে জুলেখাকে খুশি করা কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে যাচ্ছে। সবসময় সবকিছুতে তার অভিযোগ। সবচেয়ে বড় অভিযোগ, জুলেখাকে নাকি মজনু আর আগের মতো ভালোবাসে না।

যতদিন যায় জুলেখার অভিযোগ ও চাহিদা ততই বাড়তে থাকে। সব চাহিদা, অভিযোগ মাথায় নিয়ে মজনু খুশি, কারণ জুলেখা ফিরে এসেছে। ঠিক হয় কক্সবাজার ঘুরতে যাবে। পরদিন সকাল ৭টায় বাস। রাতের মধ্যে মজনু বাসের টিকিট, হোটেল রুম সব ঠিকঠাক করে রাখবে। পরের দিন নির্ধারিত সময়ে জুলেখা বাসস্ট্যান্ডে চলে আসে। কিন্তু আশপাশে মজনুর দেখা নেই। সে হাতঘড়ি দেখে, ৭টা প্রায় বাজতে চলল, বাস হর্ন দিচ্ছে, এক্ষুনি ছেড়ে দেবে। মজনু তখনো এসে পৌঁছানি।

জুলেখা মজনুকে কল করে, ওপাশে নাম্বার বন্ধ। কিছুক্ষণ পর একটা পিচ্চি ছেলে জুলেখার হাতে একটা চিঠি দিয়ে যায়। মজনুর চিঠি। জুলেখা দ্রুত হাতে চিঠি খুলে। চিঠিতে বেশি কিছু লেখা নেই। কেবলমাত্র তিনটা ম্যাজিকাল শব্দ। চিঠিতে লেখা- ‘জুলেখা ফিরে যাও’।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর