সোমবার, ১ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

প্রেম করা বনাম হাতি পালা

রাফিউজ্জামান সিফাত

প্রেম করা বনাম হাতি পালা

‘প্রেম করা আর হাতি পালা সমান কথা।’ কথাটা বলেই লাল্টু হু হু করে কেঁদে দিল। লাল্টু শক্তপোক্ত ছেলে, সহজে কাঁদে না। ফিজিক্সে পড়া না পারলে স্যার যখন পিঠে দুইটা কঞ্চি বেত ভাঙত তখনো লাল্টুর চোখে পানি আসত না। সেই লাল্টুকে কাঁদতে দেখে আড্ডায় উপস্থিত সবাই হকচকিয়ে গেল। লাল্টুকে সান্ত¡না দেওয়ার বদলে তার পাশেই বসে থাকা বন্ধু লতিফ ঝটপট মোবাইল বের করল। সবার অগোচরে ফেসবুক লাইভে চলে আসল সে। এসব কান্নাকাটিতে ভিউ বেশি হয়। লাল্টু টের পায়নি, সে কাঁদতে ব্যস্ত। কিন্তু তার কান্নায় কেউ আগ্রহ দেখাচ্ছে না বুঝতে পেরে কিছুক্ষণ পর সে বলতে শুরু করল, ‘প্রেমে শুধু খরচ আর খরচ। প্রেমিকার পেছনে টিউশনির সব টাকা শেষ করেছি। আব্বার বাজারের টাকা থেকে টাকা মেরেছি। এখান সেখান থেকে ধারদেনা করেছি। তবুও মাস পাড়ি দিতে পারলাম না। এখন পকেট ফাঁকা, ওইদিকে আগামীকাল ডেটিং! কীভাবে যাব?’ লাল্টুর কথা শুনে আড্ডায় উপস্থিত অন্যান্য বন্ধুরা মুখে ‘আহারে, উহু, দুঃখজনক’- এমন সহমর্মিতার শব্দ করতে করতে যে যার মানিব্যাগ দ্রুততার সহিত লুকিয়ে ফেলল। লাল্টুর মন খারাপ। মাথায় তীব্র দুশ্চিন্তা। আগামীকালকের খরচের টাকা কীভাবে জোগাড় হবে? কেউ লাল্টুর দুশ্চিন্তাকে পাত্তা দিচ্ছে না দেখে সে বিড় বিড় করে কথা বলতে লাগল। ‘ছাত্রের মায়ের কাছে অগ্রিম টাকা চেয়েছিলাম, দেয়নি। গত তিন মাসে এভাবে টাকা নিয়েছিলাম। এইবার আর দিল না।’ সে দীর্ঘ এক হতাশার নিঃশ্বাস ছাড়ল। বন্ধুরা মাথা ঝাঁকায়। একজন উপদেশ দিয়ে বলল, কালকের ডেটিংয়ে না যেতে। অসুস্থ ছিল বললেই হবে। লাল্টু মাথা নাড়ল। ‘নাহ, এইটা বলা যাবে না। এই মাসে দুইবার এ কথা বলে ডেটিংয়ে যাইনি। আর বলা যাবে না। সন্দেহ করবে।’ সমস্যাটা জটিল। এতক্ষণ কেউ তেমন গুরুত্ব না দিলেও এখন সবাই বেশ নড়ে চড়ে বসল। বন্ধুর জন্য একটু নড়েচড়ে তো বসাই যায়। বসেই কেউ আর কোনো কথা বলল না। এভাবে আরও দীর্ঘ সময় কেটে গেলে লাল্টু নিজে থেকে আবার কথা শুরু করে। ‘তোরা সবাই আমার বন্ধু। একটা বুদ্ধি দে।’ বন্ধুর মিনতি দেখে বাটে পড়ে একেকজন একেক উপদেশ দেওয়া শুরু করল। কেউ বলল, গ্রামের বাড়ি পালিয়ে যেতে। কেউ বলল, ‘আমি কিছু বুঝতাছি না’, কেউ আবার শহরের হোটেল-রেস্টুরেন্টে সারা রাত থালাবাসন মেজে টাকা জমাতেও বলল। একজন আগবাড়িয়ে বলেই দিল, ব্রেকআপ করে ফেল। শুনে লাল্টু আরও জোরে জোরে মাথা নাড়ল। না, ব্রেকআপ সম্ভব নয়। আমি জুলেখাকে ভালোবাসি। ডেটিংয়ের জন্য আমি সবকিছু করতে রাজি। প্রয়োজনে সকালে শহরের রাস্তা ঝাড়ু দিব নয়তো সত্যি সত্যি সারা রাত হোটেল, রেস্টুরেন্টে থালাবাসন ধুয়ে দিব। তবুও জুলেখা ছাড়া আমি বাঁচব না। প্রেমের প্রতি লাল্টুর এই দৃঢ় সংকল্প দেখে বন্ধুরা হাসি চাপিয়ে রাখল। এদিকে লাল্টু কান্নাকাটি অব্যাহত রেখেছে।

কিছু সময়ের মধ্যে লাল্টুর মোবাইলে মেসেজ এলো। পাঠিয়েছে লাল্টুর প্রেমিকা জুলেখা। জুলেখা লিখেছে, ‘আগামীকাল ডেটিংয়ের সমস্ত খরচ আমি বহন করব। শুধু আগামীকালই নয়, এখন থেকে আমি তুমি অর্ধেক অর্ধেক খরচ ভাগাভাগি করব। ভালোবেসেছি দুজনা, খরচও দুজনার।’ হঠাৎ পাওয়া মেসেজে আড্ডার সবাই হতবাক। এ কী করে সম্ভব! তবে সবাই অবাক হলেও লতিফ অবাক হলো না। আসলে আড্ডার শুরুতে সবার অলক্ষ্যে লতিফের ধারণ করা ফেসবুক লাইভটা জুলেখা দেখে ফেলে। দেখে তার প্রতি লাল্টুর ভালোবাসা এবং লাল্টুর এত দিন যাবত অপ্রকাশিত সমস্যাটা জুলেখা বুঝে ফেলে এবং লাল্টুকে মেসেজ পাঠায়। কঠিন সমস্যার দ্রুত সমাধানে সবার লতিফের পিঠ চাপড়ে দেয়। লতিফ ফেসবুক লাইভ বন্ধ করে আর আড্ডায় উপস্থিত সব বন্ধু একে অপরের দিকে চেয়ে মুচকি মুচকি হেসে চোখ টিপি দেয়। পূর্বপরিকল্পিত ফেসবুক লাইভের বুদ্ধিটা শেষ পর্যন্ত ভালোই কাজে লেগেছে!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর