সোমবার, ২২ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

বইমেলা সরগরম

ইকবাল খন্দকার

বইমেলা সরগরম

আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ, কার্টুন : কাওছার মাহমুদ

আমার এক ছোটভাই বলল, আমি কিন্তু ভাই এমনিতে টিভি দেখি না। দেখার সময় পাই না। যা দেখার ইউটিউবেই দেখি। তারপরও অনেক দিন পর গতকাল টিভি দেখতে গিয়ে বিরাট একটা ধাক্কা খেলাম। আমি বললাম, বলিস কী! টিভি তোকে ধাক্কা মারল? কিন্তু হাত-পাবিহীন একটা যন্ত্রের পক্ষে কাউকে ধাক্কা মারা কীভাবে সম্ভব? ছোটভাই বিরক্ত হলো। বলল, ধুর ভাই, আপনি খালি মজা করেন। সিরিয়াস বিষয় নিয়ে মজা করা একদম ঠিক না। আমি চেহারায় সিরিয়াস ভাব ফুটিয়ে তুলে বললাম, আর মজাটজা করব না। ধাক্কার কথা কী যেন বলছিলি, বল। ছোটভাই বলল, আমি অনেক দিন ধরে একটা মেয়ের পেছনে ঘুরছি। কী যে সুন্দর মেয়েটা, আপনাকে বলে বোঝাতে পারব না। গতকাল মেয়েটাকে টিভিতে দেখলাম। আপনি আবার মনে করবেন না, মেয়েটা টিভিতে অভিনয় করে। আসলে সে গিয়েছিল বইমেলায়। সাংবাদিকরা পাঠক হিসেবে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছে। আমি বললাম, সব ঠিক আছে। কিন্তু তুই ধাক্কাটা কেন খেলি। ছোটভাই বলল, ধাক্কাটা খেলাম এই জন্য যে, যেহেতু তাকে সামনা সামনি যতটা সুন্দর লাগত, এর ছিটেফোঁটাও লাগেনি টিভিতে। আমার কথা হলো একটা সুন্দর মানুষকে টিভিতে এতটা অসুন্দর কেন লাগবে? আমি বললাম, এটা আমাকে জিজ্ঞাসা না করে ওই মেয়েটাকেই জিজ্ঞাসা করতে পারিস। সে আমার সামনে দাঁড়িয়েই ফোন দিল মেয়েটাকে। এটা ওটা বলার পর যখন তাকে টিভিতে দেখার প্রসঙ্গটা তুলল, তখনই মেয়েটা বলে উঠল, আরে আর বল না। ঘামে মেকআপ ভিজে একদম যা-তা হয়ে গিয়েছিল। আমার ভাবি বললেন, টিভি এবং পত্র-পত্রিকার নিউজ দেখে যা বুঝলাম, এবারের বইমেলাটা একেবারেই অন্যরকম। অনেক কিছুরই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে একটা অপূর্ণতা থেকেই গেল মনে হয়। আমি বেশ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, কী অপূর্ণতা একটু বলুন তো! ভাবি বললেন, না, মানে, ক্ষুধা লাগলে মেলায় কিন্তু খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। কিন্তু গরমে মেকআপ নষ্ট হয়ে গেলে যাতে সেটা রি-নিউ করা যায়, এর জন্য মেলার মাঠে একাধিক না হোক, অন্তত একটা পারলারের বুথ রাখা যেত না?

আমার এক বড়ভাইয়ের বই বের হয়েছে। গতকাল তিনি ফোন করে বেশ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেন। বললেন, তার বই নাকি পাঁচ মিনিটেই পঞ্চাশ কপির মতো বিক্রি হয়ে গেছে। এরপর তিনি বিস্তারিত বলতে গিয়ে বললেন, তখন স্টলের আশপাশে যারা ছিল, সবাই নাকি এক কপি করে কিনেছে। আমি বললাম, হঠাৎ করে আপনার বই এত বিক্রি হওয়ার কারণ কী? বড়ভাই বললেন, আমি যখন স্টলের কাছে দাঁড়িয়ে বইটা নিয়ে কথা বলছিলাম, তখন বারবার চোখ মুছছিলাম। এই চোখ মোছা দেখে উপস্থিত সবাই ধরে নিলেন, বইটা বুঝি খুবই টাচি। নইলে এ সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে লেখক নিজেই কাঁদবেন কেন! আসলে তারা বুঝতেই পারল না, অধিক গরমে কপাল থেকে ঘাম বের হয়ে সরাসরি এসে আমার চোখে ঢুকে যাচ্ছিল। নোনতা ঘাম চোখে ঢুকলে অস্বস্তি লাগে না? বারবার না মুছলে চলে?

আমার এক বন্ধুর প্রথম বই বের হয়েছে এবারের মেলায়। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, কাটতি কেমন? বন্ধু বলল, খুবই ভালো কাটতি। পাঠকরা বেশ কিনছে। নারী পাঠকরা আমার সঙ্গে ছবিও তুলতে চাচ্ছে। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে পারছে না। ব্যাপারটা দুঃখজনক। আমি বললাম, পরিস্থিতির কারণে পারছে না মানে? বন্ধু বলল, ব্যাপারটা আসলে এমন না। গরমে ঘামতে ঘামতে পাঞ্জাবি ভিজতে ভিজতে আমার স্যান্ডো গেঞ্জি দেখা যায় তো, এ জন্য হয়তো পাঠকরা অস্বস্তিতে ভুগে থাকতে পারে। আমি বললাম, তুই একটা ঘোষণা দিয়ে রাখতে পারিস।  বলবি, আপনারা বইটা এখন কিনে রাখুন, আর আমি আপনাদের অটোগ্রাফ দেব আগামী শীতের সিজনে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর