শিরোনাম
সোমবার, ২৯ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

সেলফিমেলা

ইকবাল খন্দকার

সেলফিমেলা

আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ, কার্টুন : কাওছার মাহমুদ

এমনিতে মানুষ নায়ক-নায়িকা গায়ক গায়িকার সঙ্গে সেলফি তোলে। আর বইমেলায় যেহেতু নায়ক-নায়িকা, গায়ক গায়িকারও বই বের হয়, অতএব তাদের সঙ্গে ছবি তোলা মানে একের ভিতরে দুই। কারণ, যিনি গায়ক, তিনিই লেখক, যিনি লেখক, তিনিই হয়তো নায়ক...

আমার এক ছোটভাই বলল, যারা বইয়ের প্রচ্ছদ করেন তাদের ব্যাপারে আমার একটু কথা আছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কী ধরনের কথা? ছোটভাই বললেন, বলতে পারেন একটু হতাশার কথা। বলতে পারেন একটু পরামর্শমূলক কথা। অর্থাৎ তাদের করা প্রচ্ছদ দেখে আমি কিছুটা হতাশ হয়ে তাদের একটু পরামর্শ দিতে চাই। আমি মাথা চুলকাতে শুরু করলাম। কারণ, বুঝতে পারছিলাম না তার কথা ঠিক কোনদিকে যাচ্ছে। ছোটভাই ছোট্ট একটা বিরতি নিয়ে বলল, আমি খেয়াল করেছি, প্রচ্ছদশিল্পীরা বেশিরভাগ বইয়ের প্রচ্ছদেই কেমন কেমন কালার জানি ব্যবহার করে। একদম ফোটে না। মরা মরা কালার। এ জন্য আমি তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, তারা যেন খুব উজ্জ্বল রঙের প্রচ্ছদ করেন। বিশেষ করে হলুদ রঙের, লাল রঙের। আমি বললাম, একজন প্রচ্ছদশিল্পী প্রচ্ছদে কী ধরনের রং ব্যবহার করবেন সেটা কি তোর কাছ থেকে শিখে নেবেন? তাদের কাছে যেটা ভালো মনে হয়, পারফেক্ট মনে হয়, সেটাই ব্যবহার করবেন। এখানে আমাদের কিছু বলার নেই। ছোটভাই বলল, কিন্তু আমাদের সুবিধা-অসুবিধাটাও তো দেখতে হবে। আমি বললাম, একজন পাঠকের কাছে প্রচ্ছদের রংটা বড় হওয়া উচিত নয়। বরং বইয়ের বিষয়বস্তুটাই মুখ্য হওয়া উচিত। ছোটভাই বলল, সব ঠিক আছে। তবে এটাও ঠিক, বইয়ের প্রচ্ছদের কালার ব্রাইট না হলে বই হাতে নিয়ে সেলফি তুলে আরাম নেই। সেলফি ভালো আসে না। পরবর্তীতে আবার কালার কারেকশন করতে হয়। যা খুবই ঝামেলার কাজ। আমার এক বন্ধু বলল, আমি যতদূর জানতে পেরেছি, বইমেলায় অধিকাংশ মানুষই যায় সেলফি তোলার জন্য। কথাটা কি সত্য? আমি বললাম, এই কথাটা যেমন সত্য, আবার এইটাও সত্য, বইমেলায় অনেকে যায় তোর মতো গোয়েন্দাগিরি করার জন্য। মানে কে সেলফি তুলল, কে ছবি তুলল, এসব দেখার জন্য। অথচ যাওয়া উচিত বই দেখার জন্য। আমার উপদেশমূলক কথায় বন্ধু সম্ভবত একটু আহত হলো। বলল, এই যে তুই বললি অনেকে নাকি কে সেলফি তুলল, কে ছবি তুলল, এসব দেখার জন্য যায়। আমি কিন্তু সে ধরনের মানুষ নয়। আমি অন্যকিছু দেখার জন্য যাই। আমি জানতে চাইলাম, কী দেখার জন্য যাস? বন্ধু বলল, ধুলোবালি কমানোর জন্য মেলার মাঠে পানি ছিটায় না? এটা দেখতে আমার খুব ভালো লাগে। মনে হয় আমি পাহাড়ে গিয়ে ঝরনা দেখছি। আমি বললাম, এ ঝরনার সামনে দাঁড়িয়ে নিশ্চয়ই সেলফি তুলতে ইচ্ছে হয়? বন্ধু বলল, প্রশ্নই ওঠে না। সেলফি তোলার মধ্যে আমি নেই। কারণ, একবার এই ছিটানো পানির সঙ্গে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলতে গিয়ে মোবাইল ভিজিয়ে ফেলেছিলাম।

আমার এক বড়ভাই বললেন, লেখকের সঙ্গে সেলফি তোলার একটা মজা আছে। আর বইমেলায় গিয়ে সেলফি তোলার মজা তো অন্যরকম। যেহেতু একের ভিতরে দুই। আমি অবাক হয়ে বললাম, একের ভিতরে দুই মানে? বুঝলাম না ঠিক... বড়ভাই বললেন, মানে হচ্ছে, এমনিতে মানুষ নায়ক-নায়িকা, গায়ক-গায়িকার সঙ্গে সেলফি তোলে। আর বইমেলায় যেহেতু নায়ক-নায়িকা, গায়ক-গায়িকারও বই বের হয়, অতএব তাদের সঙ্গে ছবি তোলা মানে একের ভিতরে দুই। কারণ, যিনি গায়ক, তিনিই লেখক, যিনি লেখক, তিনিই হয়তো নায়ক। একটু ভালোভাবে খুঁজলে একের ভিতরে চার-পাঁচও পাওয়া যেতে পারে।

আমার এক ভাবি বললেন, কয়দিন আগে বইমেলায় গিয়েছিলাম রান্নার বই কেনার জন্য। কিন্তু কেনার পর বইটাসহ সেলফি তুলে ফেসবুকে দেওয়ার পর ভালোই বিপদে পড়েছিলাম। আমি জানতে চাইলাম, কী ধরনের বিপদ? ভাবি বললেন, সবাই বলতে লাগল, আমার মেজাজের সঙ্গে নাকি বইটার প্রচ্ছদের মিল আছে। আমি বললাম, রান্নার বইয়ের প্রচ্ছদে নিশ্চয়ই মিষ্টির ছবি দেওয়া ছিল? ভাবি মুখ পানসে বানিয়ে বললেন, জি না, কাঁচা মরিচের ছবি ছিল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর