সোমবার, ২৯ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

একটি আদর্শ ‘বুক রিভিউ’

রাফিউজ্জামান সিফাত

একটি আদর্শ ‘বুক রিভিউ’

সচরাচর বই নিয়ে আমি রিভিউ লিখি না। কিন্তু এবার লিখতে বাধ্য হচ্ছি। আজ আপনাদের সঙ্গে এখনো অপ্রকাশিত একটি অনন্য, মাস্টারপিস বইয়ের  পরিচয় করিয়ে দেব। বইটি আমি একবার নয়, দুইবার নয়, গুনে গুনে সাতাশিবার পড়েছি। ইচ্ছা আছে আরও শ খানেকবার পড়ার। প্রতিরাতে বইটির এক দুই পাতা না উল্টালে আমার ঘুম আসে না। বুক হাঁসফাঁস করে। এমন বই যুগে একবারই আসে। আমার পরম সৌভাগ্য এমন সময়ে আমি জন্মেছি যে বইটি প্রকাশের আগেই সেটা পড়ে ফেলার সুযোগ আমার হয়েছে। বইটি নিয়ে প্রথমে যে লাইনটি আমার মাথায় আসছে তা হচ্ছে, ‘ক্যামনে পারল! ক্যামনে!’, ‘এমন একটা বই লিখতে লেখিকা ক্যামনে পারল!’

আমার ধারণা, প্রবল জীবনবোধ ছাড়া এমন একটি বই লেখা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এ বইয়ের প্রতিটি লাইনে লাইনে চমক। শব্দে শব্দে মাধুরতা, বর্ণে বর্ণে ম্যাজিক। পাঠকমাত্রই সেই ম্যাজিকে মজে যেতে বাধ্য। যেমনটি আমি মজেছিলাম প্রথমবার বইটি পড়ার সময়। সাতাশিবারের সময়ও সেই ম্যাজিকের রেশ আমার কাটেনি। আমি সবচেয়ে অবাক হয়েছি বইটিজুড়ে লেখিকার চরিত্র নির্মাণে। প্রতিটি চরিত্র গঠনে যতটা মুনশিয়ানা দেখানো হয়েছে তা বাংলা সাহিত্যের একটা অবিস্মরণীয় নিদর্শন হয়ে রইবে। অত্যন্ত যতেœ, অসীম মমতায় বইটির প্রতিটি চরিত্র সাজানো হয়েছে যা পাঠক পড়ামাত্রই ধরতে পারবে। বইটিতে একদিকে যেমন আছে ভালোবাসা, অপরদিকে আছে বেদনা, জ্বালা, কষ্ট। সম্প্রতি লেখিকার একটি এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিউ থেকে জেনেছি টানা দেড়রাত নির্ঘুম কাটিয়ে, একের পর এক চৌদ্দখানা চায়ের কাপ শেষ করে, তিন দিস্তা কাগজ ময়লার ঝুড়িতে ফেলে, সাত হাজার ৫০০ শব্দের এমন একটা মাস্টারপিস তৈরি হয়েছে। এই এক অবিশ্বাস্য ঘটনা! যুগান্তকারী সৃষ্টি হয়তো একেই বলে। শব্দের যে জাল তৈরি হয়েছে বইটিজুড়ে তা পাঠককে চুম্বকের মতো আকর্ষণ করবে। একেবারে প্রথম পাতা থেকে শেষ পাতা। আমি যখন বইটি পড়েছিলাম একের পর এক পাতা উল্টাচ্ছিলাম আর বেদনাহত হচ্ছিলাম। কারণ আমার কেবলই মনে হচ্ছিল, আহারে আরেকটু এগোলেই তো শেষ। ভালো কিছু শেষ হয়ে যাওয়ার কষ্ট আমি ক্ষণে ক্ষণে অনুভব করছিলাম। বইমেলায় বইটি যে কাঁপাবে আমি সুনিশ্চিত। বইটি বাজারে আসার আগেই আলোড়ন তুলেছে। এ বইটির রেটিং করার যোগ্যতা আমার হয়নি। শুধু বলব, বইটি রেটিংয়ের বহু ঊর্ধ্বে। বইটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে মেলাজুড়ে ভিড় লেগে যাবে। তাই আমি বুদ্ধি দেব, আগেভাগেই বইটি প্রি-অর্ডার করে রাখতে। না হলে পরে হয়তো পাঠক চাহিদায় বইটির আর কোনো কপি খুঁজে পাওয়া যাবে না। তখন আফসোস করতে হবে। কষ্টে-বেদনায় মাথার চুল ছিঁড়তে হবে। ভুল করবেন না। ভুল করলে পস্তাবেন।

বইয়ের রিভিউ লেখা শেষে পিংকু তার স্ত্রীর দিকে তাকাল। পিংকুর স্ত্রী পিংকির রিভিউতে তবুও সন্তুষ্ট হতে পারছে না। খুঁত খুঁত মনে কপাল কুঁচকে পিংকুকে সে বলল, ‘প্রশংসাটা ঠিকঠাক জমছে না। আদর্শ রিভিউ তো এমন হয় না। তুমি আমাকে ভালোবাসো না। ভালোবাসলে আরও প্রশংসা করতে।’ কথাটি বলে পিংকুর স্ত্রী রাগ করে। পিংকু একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন রেখে দেড়শতম বারের মতো রিভিউ লিখতে বসে। নব্য লেখিকার স্বামী হওয়ার যন্ত্রণা পিংকু এবার হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর