সোমবার, ৫ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

কৌতূহলের বারোটা বেজে যাওয়া

‘অনুগ্রহপূর্বক, ছেলেদের বেতন, মেয়েদের বয়সের মতোই আমার লেখা বই বিক্রির হিসাব জানতে চাইবেন না।’

রাফিউজ্জামান সিফাত

কৌতূহলের বারোটা বেজে যাওয়া

পিকলুর অসীম কৌতূহল। তবে তা পাঠ্যবই কিংবা সাধারণ জ্ঞানের বিষয় নয়, পিকলুর মূল কৌতূহল বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন, পাড়া প্রতিবেশীর বেতন আর বয়স। ভদ্রতার খাতিরে মুখের ওপর যেসব প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে হয় না, পিকলু সরাসরি সেসব প্রশ্নই জানতে চায়। সেদিন এলাকায় নয়া প্রতিবেশী এলো। ভদ্রলোক প্রথম দিন চা-পাতা কিনতে মুদির দোকানে এলে আগে থেকে দাঁড়িয়ে থাকা পিকলু আচমকা ঘাড়ের ওপর দিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘ভাই, আপনার বেতন কত? আপনাকে দেখে কিন্তু মনেই হয় না আপনার বেতন এত কম। এত অল্প টাকায় সংসার চলে?’ এভাবে পিকলুর একের পর এক প্রশ্ন বোমায় জর্জরিত হয়ে ভদ্রলোক চা-পাতা না কিনেই বাড়ি ফিরে গেল। তার চেয়েও মারাত্মক ঘটনা ঘটল মাসখানেক আগে। মজনু ভাইয়ের একমাত্র প্রেমিকা বিলকিস আপা মজনু ভাইয়ের নতুন কেনা বাইকের পিছনে চড়ে এলাকায় বেড়াতে এলো। মজনু ভাই পাবলিক টয়লেটের দিকে ব্যক্তিগত কারণে যেতেই পিকলু মজনু ভাইয়ের প্রেমিকাকে বলে বসল, ‘আপনার বয়স কত আপু? আপনাকে দেখে কিন্তু বয়স্ক বয়স্ক লাগে, এখনো বিয়ে করেননি কেন? পারিবারিক সমস্যা?’

মজনু ভাইয়ের প্রেমিকা কেঁদেকুটে মজনু ভাই থেকে বিদায় না নিয়েই রিকশায় এলাকা ত্যাগ করল। বেচারা মজনু ভাই এক নাম্বার সেরে শীষ দিতে দিতে এসে দেখে প্রেমিকা চলে গেছে। সেই ঘটনার পর দীর্ঘ এক মাস পিকলু এলাকা ছাড়া ছিল। এই এক মাস ঘরে বসে পিকলু একটা বেঢপ সাইজের উপন্যাস লিখে ফেলল। যা এবারের বইমেলায় প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিল। পিকলু দাবি করছে, বইটি নাকি প্রকাশও হয়েছে। সেই বই নিয়ে পিকলু বেজায় উত্তেজিত। পিকলুর ধারণা তার মাস্টারপিস এ বইটি এবারের মেলায় বেস্টসেলার হতে যাচ্ছে। স্টলে উঠানোর ঘণ্টাখানেকের মধ্যে বইটির হাজার হাজার কপি বিক্রি হয়ে যাবে। প্রকাশক বই ছাপিয়ে কূল পাবে না।

কিন্তু অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় পিকলু এই মাস্টারপিস বইটির এক কপিও বিক্রি হলো না। প্রথম প্রথম আশায় বুক বেঁধে রাখলেও মেলার শেষদিকেও বইটির এক কপিও বিক্রি না হওয়ায় পিকলু বেজায় অস্বস্তিতে পড়ে গেল।  লজ্জায় কিছুদিন সে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াল। দিনের আলোয় পিকলুকে আর দেখা গেল না। গভীর রাতে পিকলু বাড়ি ফেরে আবার ভোর সকালে বেরিয়ে যায়। পথিমধ্যে একদিন তার সেই নয়া প্রতিবেশী চায়ের কাপ হাতে বারান্দা থেকে হাঁক ছেড়ে পিকলুর কাছে জানতে চায়, ওহে পিকলু ভাইয়া, আপনার বইখানা কয় কপি বিক্রি হইল? প্রশ্ন শুনেও না শোনার ভান করে পিকলু দৌড়ে এলাকা থেকে পালাল। কিন্তু পরদিন চৌরাস্তার মোড়ে প্ল্যাকার্ড হাতে পিকলুকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। কৌতূহলী জনতা দেখল প্ল্যাকার্ডে লাল কালিতে বড় হরফে লেখা-

‘অনুগ্রহপূর্বক, ছেলেদের বেতন, মেয়েদের বয়সের মতোই আমার লেখা বই বিক্রির হিসাব জানতে চাইবেন না।’

সর্বশেষ খবর