সোমবার, ১২ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

দূরবর্তী ট্র্যাজেডি

রাফিউজ্জামান সিফাত

দূরবর্তী ট্র্যাজেডি

ঘরে থাকতে হবে, অকারণে বাইরে বের হওয়া চলবে না। এমন ঘোষণা শুনে সর্বপ্রথম মজনুর মাথায় যে কথাটি এলো, ‘আমার প্রেমের তাহলে কী হবে? বিলকিসের সঙ্গে আমি কীভাবে প্রেম করব?’

বহু সাধনায় মজনু একটা প্রেম করতে সক্ষম হয়েছে। মেয়ের নাম বিলকিস। দীর্ঘ সাড়ে তিন মাস ক্রমাগত চেষ্টার পর বিলকিস গত সপ্তাহে বিরক্ত হয়ে মজনুকে বলতে বাধ্য হয়, ‘আচ্ছা, ঠিক আছে করলাম প্রেম। তবুও প্রতিরাতে পাইপ বেয়ে আমাদের বাসার পানির টাঙ্কির ওপর উঠে বসে থাকবে না। ভূত ভেবে দাদি সারা রাত পিঁয়াজ হাতে বসে থাকেন, ঘুমাতে পারেন না।’ সেই মজনুর প্রতিদিন বাইরে বেরিয়ে বিলকিসের সঙ্গে দেখা না করলে ক্যামনে কি! প্রেমটাই তো ভেঙে যাবে। বন্ধুরা বলেছে, অনলাইনে ভিডিও চ্যাটিংয়ে প্রেম করতে। সবাই আজকাল তাই করে। কিন্তু মজনু সেটা পারছে না। কারণ বিলকিসের স্মার্টফোন নেই। মজনু স্মার্টফোন কিনে দিয়েছিল কিন্তু বিলকিসের বাবা বিশাল কিপটে হওয়ায় বাসায় ওয়াইফাই সংযোগ নিচ্ছেন না। মোবাইল ডাটা সমাধান হতে পার। তবে স্মার্টফোন কেনার পরের দিনই বিলকিসের দাদি স্মার্টফোনকে অশরীর আছর বলে জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দেয়। ফলে সেই আশাতেও গুড়েবালি। বহু ভেবে মজনু বাজার থেকে অতি উচ্চমূল্যে একটা প্রশিক্ষিত কবুতর কিনে আনল। আগে রাজা-বাদশাদের আমলে কবুতর দিয়েই দূরবর্তী প্রেম পরিচালিত হতো। কবুতরের পায়ে প্রেমপত্র বেঁধে বিলকিসদের বাড়ির ছাদে পাঠাতে পারলে ব্যাপারটা আরও মজার হবে। কিন্তু কবুতর ক্রয়ের দুই সপ্তাহ পরও মজনু কবুতরকে বাসার এক রুম থেকে অন্য রুমে খবর পাঠাতে পারল না। কবুতরকে বামে যেতে বললে সে ডানে যায়, ডানে বললে বামে। দাঁড়াতে বললে উড়ে। উড়তে বললে ঝিমায়। মজনু পরে সিদ্ধান্তে এলো, এই কবুতর কানে শুনে না। হাত নাড়লে ইশারা বুঝে। তাও বুঝে উল্টোটা।

মজনু যেহেতু প্রেমিক পুরুষ তাই সে অসাধ্য সাধন করল। বিভিন্ন প্রাচীন বই, ইউটিউব ভিডিও ইত্যাদি নানা চেষ্টায় মজনু শেষ পর্যন্ত ইশারায় কবুতর উড়াতে সক্ষম হলো। এক মাহেন্দ্রক্ষণে মজনু তার অতি আদরের কবুতরের পায়ে প্রেমপত্র বেঁধে আকাশে উড়িয়ে দিল। মজনুর চোখে বাইনোকুলার। কবুতর উড়ছে। মজনুর বুকে ধিপধিপ শব্দে হচ্ছে। উত্তেজনায় তার কপালে ঘাম, গলা শুকিয়ে সিজন করা সেগুন কাঠ। কবুতর আকাশে কয়েক রাউন্ড চক্কর কাটল। তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। কিন্তু না, মজনুকে অবাক করে দিয়ে সে ঠিক ঠিক বিলকিসদের বাড়ির ছাদে কাপড় নাড়ার তারে গিয়ে বসল। আনন্দে মজনুর দম বন্ধ হওয়ার দশা। কতদিন বিলকিসের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। কবুতরের পায়ে প্রেমপত্র পেয়ে নিশ্চয়ই বিলকিস সব অভিমান কষ্ট ভুলে যাবে। মজনু অপেক্ষা করছে। ছাদে বিলকিসের পরিবর্তে উঠে এলো বিলকিসের দাদি। তিনি এসে দেখলেন একটা কবুতর আয়েশী ভঙ্গিতে বসে আছে। তিনি খপ করে কবুতর ধরে সুড়সুড় করে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেলেন। মজনু বাইনোকুলার চোখে হতভম্ব হয়ে বসে রইল।

বিশেষ দ্রষ্টব্য :  শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মজনুর প্রেমপত্রের হদিস না মিললেও সে রাতে বিলকিসদের বাসায় ঘন পিঁয়াজ, রসুন দিয়ে কবুতরের মাংস রান্না হয়েছিল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর