সোমবার, ১৪ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

এই বৃষ্টি এই রইদ

ইকবাল খন্দকার

এই বৃষ্টি এই রইদ

সঙ্গে ছাতা থাকায় বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেয়েছেন এই অফিসফেরত ব্যক্তিটি ছবি : ইন্টারনেট

আমার এক ছোটভাই বলল, আমার একটা বিষয় জানার খুব ইচ্ছা। তা হচ্ছে, পশু-পাখিদের মধ্যে যে বিয়ে-শাদি হয়, সেই বিয়ে-শাদিকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠান হয় কি না। যদি হয়, তাহলে সেসব অনুষ্ঠানে কত সংখ্যক অতিথি থাকে। আমি বললাম, আজেবাজে চিন্তার একটা লিমিট থাকে। তোর এই চিন্তা কিন্তু লিমিট ছাড়িয়ে গেছে। ছোটভাই অসন্তুষ্ট হয়ে বলল, এইটা কোনো কথা বললেন ভাইজান? বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ভাবতে হবে না? আমি বিরক্ত হয়ে বললাম, অ্যাই, কীসের বর্তমান পরিস্থিতি রে? ছোটভাই বলল, না, মানে করোনা পরিস্থিতিতে তো বিয়ের অনুষ্ঠান করাই ঠিক না। তারপরও যদি কেউ করে, সেখানে সীমিত সংখ্যক অতিথি উপস্থিত থাকতে হবে। আমি বললাম, সব ঠিক আছে। কিন্তু এখানে পশু-পাখির বিয়ের কথা আসছে কেন? ছোটভাই বলল, আসছে এ জন্য, যেহেতু পশু-পাখিদের বিয়েতে সীমিত সংখ্যক অতিথি উপস্থিতির বিষয়টা মানা হচ্ছে কি না, আমি নিশ্চিত নই। অথচ বিয়ে কিন্তু রোজ হচ্ছে। এবার আমি রেগে গেলাম, এই বেটা, কার বিয়ে হচ্ছে রে? ছোটভাই বলল, শিয়ালের। কেন, রোদে-মেঘে কোলাকুলি করলে শিয়ালের বিয়ে হয় জানেন না? এখন কথা হচ্ছে, শিয়ালের বিয়েতে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কি না। যত সংখ্যক অতিথি উপস্থিত থাকা আইনসম্মত, তত সংখ্যকই থাকছে নাকি বাড়তি অতিথির সমাগম হচ্ছে, এগুলো কিন্তু তদন্তের বিষয়। নইলে কিন্তু... আমি তার কথা শেষ হওয়ার আগেই সরে গেলাম। গিয়ে দাঁড়ালাম চা-স্টলে। চা দিতে বললাম। দোকানদার বললেন ১০ টাকা দেন। আমি বললাম, টাকা তো দেব চা খাওয়ার পরে। এইটাই তো নিয়ম। আগে টাকা দেব কেন? দোকানদার বললেন, এই সিজনে পুরনো নিয়ম চলব না। কারণ, ঠা ঠা রোদের মধ্যেও আঁৎকা বৃষ্টি নাইমা যায়। কাস্টমার তখন করে কী, চায়ের কাপ হাতে নিয়াই দৌড় দেয়। গিয়া নিরাপদ জায়গায় খাড়ায়। কিন্তু বৃষ্টি থামলে যে ফিরা আসব, তা আর আসে না। আইলেও সবাই আসে না। যেই কারণে দেখা যায় রোজই আমার কয়েক কাপ চায়ের বিল মাইর যাইতাছে। আবার কাপও মাইর যাইতাছে। আমি বললাম, তাই বলে আপনি অগ্রিম চায়ের বিল নেবেন? দোকানদার বললেন, নিমুই তো। কারণ, কোন সময় বৃষ্টি শুরু হইয়া যায় আর কোন সময় আপনে কাপ নিয়া ঝাইড়া দৌড় মারেন, ঠিক তো নেই। এক কাজ করেন, শুধু চায়ের বিল না, কাপের দামটাও দিয়া রাখেন। চিন্তা কইরেন না, যদি শেষ পর্যন্ত বৃষ্টি না আসে আর আপনের দৌড় দিতে না হয়, তাইলে কাপের দাম ফেরত পাইবেন। আমার এক বড়ভাই বললেন, আগে একবার ফ্যাশন হাউস দিয়ে লস খেয়েছিলাম। কারণ, আমার হাউস থেকে গতানুগতিক ফ্যাশনের বাইরে বিশেষ কোনো ফ্যাশন উপহার দিতে পারছিলাম না। এবার বেশ আয়োজন করে মাঠে নামতে যাচ্ছি। অবশ্যই ভালো সাড়া পাব। আমি বললাম, বুঝতে পারছি, নতুন ফ্যাশন নিয়ে আসছেন। তা কী ধরনের ফ্যাশন? একটু আইডিয়া দেওয়া যায় কি? বড়ভাই বললেন, অবশ্যই আইডিয়া দেওয়া যায়। যেহেতু এখন বৃষ্টির কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই, অতএব এটাকে কেন্দ্র করেই একটা ফ্যাশন বের করেছি। আমি নিশ্চিত, বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গে হইচই পড়ে যাবে। আমি বললাম, প্লিজ, আইডিয়া দেন। বড়ভাই বললেন- শার্ট হোক, পাঞ্জাবি হোক আর টি-শার্টই হোক, ফ্যাশনটা হবে এমন, প্রত্যেকটা পোশাকের পেছনে মানে পিঠে লম্বা একটা পকেট থাকবে। আমি বললাম, লম্বা পকেট কেন? বড়ভাই বললেন, যাতে আস্ত একটা ছাতা রাখা যায়। আমার এক প্রতিবেশী বললেন, এই কদিনে ওজন কমেছে ১০ কেজি। আমি বললাম, জিম করছেন বুঝি? প্রতিবেশী বললেন, আরে না। রোদ দেখে ছাদে কাপড় শুকাতে দিই, কিন্তু একটু পরেই বৃষ্টি। একটু পরে আবার রোদ।  তো রোদ আর বৃষ্টির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছাদে ওঠানামা করতে করতে এই অবস্থা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর