সোমবার, ২৮ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

ঘরের লকডাউন

ইকবাল খন্দকার

ঘরের লকডাউন

► আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ ►কার্টুন : কাওছার মাহমুদ

 

আমার এক বড়ভাইয়ের সঙ্গে রাস্তায় দেখা। তার মুখ দেখেই বোঝা গেল, কোনো কারণে তার মন খারাপ। আমি কারণ জানতে চাইলাম। বড়ভাই বললেন, বাসায় থাকার মতো অবস্থা নেই। খুবই খারাপ অবস্থা। এভাবে আসলে চলতে পারে না। চলতে দেওয়া যায় না। আমি বললাম, এত কথা না বলে সমস্যাটা কী, সেটা একটু বলেন। দেখি কোনো সমাধান করা যায় কি না। বড়ভাই বললেন, পারবি না, সমাধান করতে পারবি না। তোর ভাবি যদি আমাকে দিয়ে ঘর মোছায়, সেটার তুই কী সমাধান করবি? আমি বললাম, দেখেন ভাই, লকডাউনে ঘরে থাকলে বউ একটু-আধটু কাজ করাতেই পারে। এতে কষ্ট পাওয়ার কিছু নেই। এ ছাড়া ঘর মোছা এমন কঠিন কী কাজ? আমিও তো প্রায়ই মুছি। বড়ভাই বললেন, জগতের সবার মোছা আর আমার মোছার মধ্যে ফারাক আছে। কেন ফারাক আছে জানিস? কারণ, তোর ভাবি পরিষ্কার বলে দিয়েছে, অতিরিক্ত চাপ দিয়ে মোছার কারণে যদি কোনো টাইলসের কালার নষ্ট হয়, তাহলে নাকি একবেলা খাবার বন্ধ। এদিকে আমার আবার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা। একবেলা না খেলে গ্যাস্ট্রিক আরও বেড়ে যেতে পারে। কী করি বল তো? আমি বললাম, কী আর করবেন! মোছার সময় সাবধান থাকবেন। যাতে টাইলসের কালার নষ্ট না হয়। কবি তো আর এমনি এমনি বলেন নাই, সাবধানের মাইর নাই। আমার এক প্রতিবেশী বললেন, আগে ওয়াটার প্রুফ ঘড়ির কদর বুঝতাম না। এখন বুঝি। এই জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি, খরচ একটু বেশি পড়লেও এখন থেকে যত ঘড়ি কিনব, সব ওয়াটার প্রুফ কিনব।

খাওয়া-দাওয়া শেষে নিজের প্লেট নিজেই ধুয়ে রাখার পর একজন স্বামীর অভিব্যক্তি অনেকটা হিমালয় জয়ের মতো

 

আমি বললাম, বাইরে গেলে বৃষ্টি-বাদলার ভয় থাকে। ওয়াটার প্রুফের দরকার হয়। কিন্তু এখন তো লকডাউনের কারণে সারা দিনই বাসায় থাকেন। বাসায় ওয়াটার প্রুফ ঘড়ির কী দরকার? প্রতিবেশী বললেন, আমি চব্বিশ ঘণ্টাই ঘড়ি পরি। তো আজকাল বাসায় থাকার কারণে আপনার ভাবি করে কী, কাপড় কাচার পুরো দায়িত্ব আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়। এদিকে আমার যেহেতু চব্বিশ ঘণ্টা ঘড়ি পরার অভ্যাস, আমার জন্য কাপড় কাচাটা টাফ। আশা করি, ওয়াটার প্রুফ ঘড়ির প্রয়োজনীয়তাটা আপনাকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। আমি বললাম, বোঝাতে অবশ্যই সক্ষম হয়েছেন। তবে আপনার কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, ঘড়িতে ব্যাটারি বলেও একটা জিনিস থাকে। কাপড় কাচার সময় ঝাঁকুনি লেগে যদি ব্যাটারি নড়ে যায় আর ঘড়ি মরে যায়, তাহলে  কেউ দায়ী থাকবে না। আমার এক ছোটভাই বলল, এমনিতেই বাড়িওয়ালার ঠেলায় বাঁচি না, লকডাউন এসে বাড়িওয়ালাদের দাপট আরও বাড়িয়ে দিল। আমি বললাম, কী হয়েছে একটু খুলে বল তো! ছোটভাই বলল, আর বলবেন না। আগেরবার যখন লকডাউন হলো, জানানো হলো বাইরে যাওয়া যাবে না। আমরা গেলাম না বাইরে। কিন্তু কতক্ষণ আর ঘরে থাকা যায়। একদিন ছাদে উঠলাম। বাড়িওয়ালা বলল, যেহেতু ঘরে থাকতে বলেছে, অতএব ছাদেও নাকি ওঠা যাবে না। এইবার কী হয়েছে দেখেন। বাড়িওয়ালা এসে হাউকাউ বাধিয়ে দিল। আমি বললাম, কেন? আবার ছাদে গিয়েছিলি? ছোটভাই বলল, আরে না। গিয়েছিলাম বারান্দায়। বাড়িওয়ালা চিল্লাতে চিল্লাতে বলল, সবাইকে ঘরে থাকতে বলেছে। বারান্দায় থাকতে বলেনি। আমার আরেক ছোটভাই বলল, সব কিছুরই ভালো-মন্দ আছে ভাই। লকডাউনে ঘরে থাকার বিষয়টা নিয়ে যতই মানুষ নেগেটিভ কথা বলুক, আমি কিন্তু পজিটিভই বলব। কারণ, আগে পাশের বাসার মেয়েটাকে মাসেও একদিন দেখতে পারতাম না। কারণ, দুজনের অফিসের দুই টাইম। তাই শিডিউল মিলত না। এখন দুজনই গৃহবন্দী, বারান্দায় দাঁড়ালেই চোখে চোখে ব্যাপক ভাব বিনিময়। চলুক না এই লকডাউন, মন্দ কী? আমার এক বন্ধু বলল, খুব বিপদে আছি রে দোস্ত। যেহেতু লকডাউন হলেই সারা দিন বাসায় বসে-শুয়ে থাকি, ভুঁড়ি বড় করে ফেলি, এই জন্য আমার বউ এবার উপযুক্ত পদক্ষেপ নিয়েছে। এইবার আর বেশিক্ষণ শুয়ে-বসে থাকা সম্ভব না। আমি বললাম, কী পদক্ষেপ নিয়েছে? বন্ধু বলল, বিলাইচিমটি সংগ্রহ করেছে। বালিশে নাকি মাখিয়ে রাখবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর