সোমবার, ২৮ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

ঘুড়ি মাস্টার

রাফিউজ্জামান সিফাত

ঘুড়ি মাস্টার

মজনুর তৃতীয় প্রেমিকা জুলেখা। তার প্রথম দুজন প্রেমিকা ঘরে বসে বিধিনিষেধ মেনে যোগাযোগ রক্ষা করে ঠিকঠাক প্রেম করতে না পারার কারণে মজনুকে ছেড়ে চলে গেছে। ওই দিকে প্রেম ছাড়া মজনুর কিছু ভালো লাগে না। তৃতীয় প্রেমিকা হিসেবে তাই জুলেখাকে সিরিয়াসলি নিয়েছে সে। এ প্রেম তাকে টিকিয়ে রাখতেই হবে। প্রেম টিকাতে সর্বক্ষণ যোগাযোগের ভিতর থাকতে হয়। যেহেতু সরাসরি দেখা-সাক্ষাৎ বন্ধ তাই টেকনোলজির ওপর গত দুইবার মজনু নির্ভরশীল ছিল। সে সময় সে নতুন মোবাইল ফোন কিনেছিল, চার্জের কথা ভেবে কিনেছিল পাওয়ার ব্যাংক, নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাসায় জেনারেটর সংযোগ কয়েকবার পরীক্ষা করত, বারবার ইন্টারনেট লাইন পাল্টে নিতো নতুন লাইন। তবুও মজনুর প্রেম দুটো টিকে নাই, প্রয়োজনের সময় কোনো না কোনো ঘাপলা হতো। মজনুর মনে খুঁতখুঁতানি তাই কমে না। তার চাই বিকল্প ব্যবস্থা। মজনু আর টেকনোলজির ওপর নির্ভর করবে না।

অনেক ভেবেচিন্তে সে আদিম পদ্ধতি বেছে নিল। বাজার থেকে কিনে আনল ঘুড়ি আর নাটাই। জুলেখার বাসা মজনুর বাসা থেকে বেশি দূরে নয়। মজনুদের ছাদের পানির ট্যাঙ্কির উপর চড়লে জুলেখাদের ছাদের ট্যাংকি দেখা যায়। মজনু সিদ্ধান্ত নিল ঘুড়ির মাধ্যমে সে জুলেখার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করবে। কিন্তু মজনু ঘুড়ি উড়াতে পারে না। ঘুড়ি উড়ানো ট্রেনিং পিরিয়ডে কিছুদিন জুলেখার সঙ্গে মজনুর যোগাযোগ বন্ধ আছে। কিন্তু মজনু আশা হারাল না, প্রেমের জন্য সে একটা বড় কাজ করছে। একবার ঘুড়ির ব্যাপারটা আয়ত্তে চলে আসলে কেউ আর জুলেখাকে মজনুর কাছ থেকে সরিয়ে নিতে পারবে না। ঘুড়ি উড়ানো শেখার পর পর মজনুকে ঘুড়ি বানানোও শিখতে হলো। কারণ মজনুর ঘুড়ি আকাশে বেশিক্ষণ থাকে না। গাছের মগডালে, উঁচু বিল্ডিংয়ে অথবা পাখির গায়ে লেগে ঘুড়ি ছিঁড়ে যায়। বারবার ঘুড়ি কেনা সম্ভব নয়, তাই মজনু কাগজ কিনে ইউটিউব ঘেঁটে ঘুড়ি বানানো শিখল। এতে তার আরও কিছু সময় চলে গেল। তারপর নিজে ঘুড়ি বানিয়ে প্রেমপত্র লিখে যেদিন মজনু ঘুড়ি উড়াল সেদিনও মজনুর ঘুড়ি জুলেখার ছাদ অবধি পৌঁছাল না। আশপাশের ছাদ থেকে সুতায় মাঞ্জা মারা সুতা মজনুর ঘুড়ি কেটে দিল। বিষয়টা মজনুর বড্ড আঁতে ঘা লাগল। সে সুতায় মাঞ্জা লাগানো শিখতে শুরু করল। প্রথমবার সুতার মাঞ্জা তেমন শক্ত হলো না। আকাশে ঘুড়ি উড়তে না উড়তেই মজনুর ঘুড়ি হাওয়া। মজনুর রাগ হলো। সে দিন রাতে সুতায় মাঞ্জা দেওয়া শুরু করল। মজনুদের বাড়ির ছাদজুড়ে কাগজ, ঘুড়ি, হরেক রঙের সুতা, ভাতের মাড়, কাচের গুঁড়ো। সে নতুন নতুন সুতায় মজনু মাঞ্জা লাগায়, আকাশে ঘুড়ি উড়ায়, কখনো তার ঘুড়ি কেটে যায় কখনো সে অন্যের ঘুড়ি কাটে। সুতায় মাঞ্জা লাগিয়ে আরেকজনের ঘুড়ি কাটা মজনুর নেশায় পরিণত হলো। ধীরে ধীরে পাড়া মহল্লায় একটা আলোড়ন শুরু হয়ে গেল। প্রায় প্রতি বাড়ির ছাদে ছাদে শুরু হলো ঘুড়ি কাটা উৎসব। পাড়ায় একটা ঘুড়ি কাটা টুর্নামেন্ট আয়োজিত হলো। মাসব্যাপী সেই টুর্নামেন্টে মজনু হলো চ্যাম্পিয়ন। পুরস্কার হিসেবে সে পেল ইমিটেশনের গোল্ডের তৈরি নাটাই। পাড়াজুড়ে মজনুর নামডাক। মজনুর নাম হয়ে গেল, ‘গুড্ডি মাস্টার মজনু।’ পুরস্কারের নাটাই দিয়ে মজনু প্রায় দুমাস পর জুলেখাদের বাড়ির ছাদে ঘুড়ির তৈরি প্রেমপত্র পাঠাল, এইবার আর কেউ মজনুর ঘুড়ি কাটার সাহস করল না। চ্যাম্পিয়নের ঘুড়ি বলে কথা! জুলেখাদের ছাদে ঘুড়ি পাঠানোর অল্প সময়ের ভিতর ফিরতি ঘুড়ি আসল মজনুর বাড়ির ছাদে। ঘুড়ির লেজে বাঁধা জুলেখার বিয়ের নিমন্ত্রণপত্র।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর